বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তথ্যতালাশ শুরু করার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বিশেষ করে বাংলা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা অনুপ্রবেশকারীদের খুঁজে বের করতে হবে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তাদের নির্দেশ দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বুধবার প্রতিটি রাজ্যের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা (IB) কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন শাহ। কোন রাজ্যে কতে বাংলাদেশি ভুয়ো শংসাপত্র নিয়ে কাজ করছে সেই পরিসংখ্যান জোগাড় করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের ওপর জোর দেওয়া হয় বলে সূত্রের খবর। কয়েকদিনের মধ্যে এনআইএ (NIA) কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে। কেন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীদের তথ্যতালাশের ওপর জোর দেওয়া হলে? এর পিছনে কেন্দ্রের অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে সব রাজ্যের ডিজিদের সতর্কবাতা পাঠায় কেন্দ্র। সতর্কবাতায় উল্লেখ করা হয়, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করছে। অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য করছে রাজ্যের এক শ্রেণির দালাল। ভারতে প্রবেশ করার পরই এঁদের আধার কার্ড পাইয়ে দিতে সাহায্য করছে দালালরা। আধার কার্ড (Aadhar Card) হাতে আসতেই কাজের খোঁজে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এই অনুপ্রবেশকীদের অনেকেই বাংলাদেশের জামাতের মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক (Home Ministry) নির্দেশ দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
[আরও পড়ুন: গুজরাট থেকে হিমাচল প্রদেশ, নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ছাড়ার হিড়িক নেতা-বিধায়কদের]
এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই প্রতিটি রাজ্যের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, বৈঠকের বেশিরভাগ সময় আলোচনা হয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ। সেখানে দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য কেরল ও তামিলনাড়ু ছাড়াও, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ-সহ ১৪টি রাজ্যে নির্মাণ শিল্প, হোটেল বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত, গৃহ পরিচারিকা, বাঙালি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে খোঁজখবর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতি রাজ্যে কতজন রয়েছেন। এঁদের কাছে কি পরিচয়পত্র রয়েছে। সেই তালিকা তৈরি করতে হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা গোয়েন্দা আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সেইসঙ্গে বাংলা সীমান্তে আরও নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে সক্রিয় হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
[আরও পড়ুন: ফাঁকা ঘরে কিশোরীকে একে একে ধর্ষণ ৬ নাবালকের, রেকর্ড হল ভিডিও! চাঞ্চল্য অসমে]
এছাড়াও ভারতে প্রবেশের পর এঁরা কীভাবে শংসাপত্র পাচ্ছে। কারা শংসাপত্র পাইয়ে দেওয়ার কাজ করছে সেই বিষয়েও খোঁজখবর করতে বলা হয়েছে। তবে আচমকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ত্রিপুরা, অসম, মেঘালয়ের (Meghalaya) মতো রাজ্য ছেড়ে বাংলা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন সক্রিয় হয়ে উঠল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর পিছনে কেন্দ্রের শাসকদলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। ইতিমধে্যই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এলাকা পঞ্চাশ কিলোমিটার করা হয়েছে। এবার অনুপ্রবেশ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র অন্য তদন্তকারী সংস্থাকে রাজে্যর শাসকদলের বিরুদ্ধে ময়দানে নামাতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বুধবারের বৈঠক নিয়ে মুখ খোলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কর্তারা।