সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আম আদমির কাছে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের মাধ্যম, সেটাই এখন সন্ত্রাসবাদীদের প্রথম পছন্দের অ্যাপ। ফলে সেটিই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। কারণ দেশের সুরক্ষা, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এখন চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ।
[টার্গেট করে খুন করব, উপত্যকায় সেনাকে চ্যালেঞ্জ জঙ্গিদের]
স্মার্টফোনের এই গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপটির তথ্য বা বার্তা আদানপ্রদানে নজরদারি চালানো সরকারের কাছে কঠিন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তিগত বা পরিকাঠামোগত সমস্যার চেয়েও বড় সমস্যা হল, অ্যাপটির এমন কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে যা বদলানো অসম্ভব বা তথ্য আদানপ্রদানে প্রতি সেকেন্ডের নজরদারিও প্রায় অসম্ভব। এই সুযোগে দেশবিরোধী শক্তিগুলি, সন্ত্রাসবাদীরা, সমাজবিরোধীরা তথ্য আদানপ্রদানের স্বাধীনতার পুরো ফায়দা তুলছে। নিজেদের ও সাংগঠনিক স্বার্থসিদ্ধি করতে চূড়ান্ত অপব্যবহার করছে হোয়াটসঅ্যাপের। তাই তা নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে ভারত সরকার।
[বিমানের আদলে এক্সপ্রেসেও বসছে বায়ো ভ্যাকিউম টয়লেট]
সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছিল যাতে হোয়াটসঅ্যাপে লেনদেন হওয়া তথ্য, ছবি, ভিডিও যদি ফিল্টার বা সেন্সর করা যায়। কিন্তু মেসেজ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড হওয়ায় সেটার কোনও উপায় নেই। এজন্য ঝামেলা এড়াতে হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার ভারতে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এ ব্যাপারে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক খুব গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করছে বলে জানা গিয়েছে।
[মুসলিমদের মন পেতে আরও অনেক কিছু করতে হবে মোদিকে, স্বীকারোক্তি নাকভির]
সম্প্রতি কাশ্মীরে হিংসা, অশান্তি জিইয়ে রাখতে দেশবিরোধী শক্তিগুলি হোয়াটসঅ্যাপকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। চলতি মাসেই মেঘালয়ের শিলংয়ে কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা গোষ্ঠী সংঘর্ষে উসকানি দিতে হোয়াটসঅ্যাপকে যথেচ্ছ ব্যবহার করা হচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে ও উসকানির মাধ্যমে দাঙ্গা, অশান্তি, হিংসা বাধাতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপকেই। তাই নিরুপায় হয়ে ফেসবুকের মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকে ‘নিষিদ্ধ’ করার কথাই ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার।
[প্রথম ম্যাট্রিকের গণ্ডি পার, গ্রামের মান রাখলেন পাহাড়িয়া তরুণী]
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে কাশ্মীরে নাগরোটা সেনা ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিরা। হামলায় সাত সেনা জওয়ান শহিদ হন। তদন্তে জানা গিয়েছে, অনুপ্রবেশের পর পাকিস্তান থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কলের মাধ্যমে পাক গোয়েন্দাদের কাছ থেকে নিয়মিত নির্দেশ পাচ্ছিল জঙ্গিরা। কখন কোথায় কীভাবে কোন কৌশলে হামলা চালাতে হবে, কোথায় পজিশন নিতে হবে সবই জানান দিচ্ছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এই হামলায় হতাহতের নিরিখে যত বড় ক্ষতি হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয় মানসিক দিক থেকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছিল পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা।
[জঙ্গিদের হাতে ‘স্টিল কোর’ বুলেট, চিন্তিত নিরাপত্তা বাহিনী]
কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক এবং তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকও এব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত। তা হল, দেশ, সমাজ ও নাগরিকদের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে হোয়াটসঅ্যাপ। দেশবিরোধী, উসকানিমূলক, জঙ্গি কাজকর্ম সংক্রান্ত বিপজ্জনক বার্তা, তথ্য রুখে দেওয়ার কোনও উপায় হোয়াটসঅ্যাপে নেই। এজন্য সরকার এমন কোনও কঠোর আইন আনতে চাইছে, যে আইনের নির্দেশে হোয়াটসঅ্যাপ কতৃর্পক্ষ বাধ্য থাকবে যে কোনও স্পর্শকাতর তথ্য বা বার্তা ভারত সরকার যখন চাইবে তখনই সরকারকে শেয়ার করতে। ভারত সরকারের নির্দেশ বা আইন না মানলে হোয়াটসঅ্যাপকে নিষিদ্ধ করা হবে। ঠিক একারণেই পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম দেশগুলিতে হোয়াটসঅ্যাপের ভয়েস ও ভিডিও কলিং নিষিদ্ধ। চিনে তো ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ দুটোই নিষিদ্ধ। চিনারা উইচ্যাটে কাজ চালান। তাই হোয়াটসঅ্যাপ সরকারের কথা না শুনলে চিন বা আরব দেশগুলির পথে হাঁটতে পারে ভারত সরকারও।
The post বিপজ্জনক! ভারতে পাকাপাকিভাবে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধের ভাবনা কেন্দ্রের appeared first on Sangbad Pratidin.