স্টাফ রিপোর্টার: আবাসন দপ্তরের চেক নিপুণভাবে নকল করে তা দিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তজুড়ে৷ এই ঘটনায় এক অভিযুক্তকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ অপর অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ৷ এদিন আবাসনমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “মথুরাপুর, পুদুচেরি, চেন্নাই-সহ চার জায়গা থেকে আবসন দপ্তরের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টের চেক নকল করে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ বিষয়টি নজরে আসতেই দপ্তরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ এটা শুধু আবাসন দপ্তর নয়, সরকারের অন্য সব দপ্তর ও সাধারণ মানুষেরও সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে৷”
ঘটনার সূত্রপাত গত জুলাই মাসে৷ টালিগঞ্জে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় রয়েছে আবাসন দপ্তরের একটি অ্যাকাউণ্ট৷ যে অ্যাকাউণ্ট ব্যবহার করা হয় মূলত রাজ্যের সব মাল্টিসুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে৷ সেই অ্যাকাউণ্ট নম্বর দিয়ে চেক ক্লোন (নকল) বানিয়ে প্রথমে ওই ব্যাঙ্কেরই মথুরাপুর শাখা থেকে একটি ‘অ্যাকাউণ্ট পেয়ি’ চার কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা তোলার চেষ্টা করে রণজিত্ হালদার নামে এক ব্যক্তি৷ যেখানে আবাসন দপ্তরের কমিশনার খলিল আহমেদ ও আবাসন দপ্তরের ফিনান্স সেক্রেটারির সই নকল করা হয়৷ কিন্তু ব্যাঙ্ককর্তাদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা বিষয়টি জানার জন্য কমিশনার খলিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ কিন্তু আবাসন কমিশনার পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এই ধরনের কোনও চেক ইস্যু করা হয়নি৷ এরপর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ দায়ের করেন ওই রণজিত্ হালদারের নামে৷ এর পর ১৮ জুলাই ফের একই ব্যাঙ্কের গুয়াহাটি পানবাজার শাখা থেকে একই পদ্ধতিতে টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৩৩ কোটি টাকা৷ এরপরই নড়েচড়ে বসেন আবাসন দপ্তরের আধিকারিকরা৷ তাঁরা বিষয়টি জানান মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে৷ তাঁর নির্দেশেই আবাসন দপ্তরের তরফে একটি এফআইআর দায়ের করা হয় তালতলা থানায়৷ কলকাতা পুলিশ কমিশনারকেও ইতিমধ্যে বিষয়টি জানানো হয়৷
এই চেক জালিয়াতি চক্র কিছুদিন ধরে বন্ধ থাকার পর এবছরের শুরুতেই ফের ওই অ্যাকাউণ্টের জন্য নকল চেক বানিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ চেন্নাইয়ের ভেল্লাচেরিতে আট কোটি ৫৬ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা তোলার চেষ্টা করা হয় মেসার্স আগরওয়াল এণ্টারপ্রাইজের নাম করে৷ এই ঘটনায় রেভাতি গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে হাতেনাতে ধরে ফেলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ৷ এরই পাশাপাশি পুদুচেরিতে ফের আরও একটি চেক জালিয়াতির চেষ্টা করা হয়েছে বলে আবাসন কমিশনার খলিল আহমেদকে জানিয়েছেন ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার৷ এরপর টালিগঞ্জ শাখার ওই অ্যাকাউণ্টটিকে ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে আবাসন দপ্তরের তরফে৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট সরিয়ে ফেলারও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন আবাসন দপ্তরের আধিকারিকরা৷ এদিন আবাসন মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “এই ধরনের চেক জাল করে তার সত্যতা যাচাই না করে যদি পেমেণ্ট করে দেওয়া হয় তার পুরো দায়ভার নিতে হবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে৷ একই সঙ্গে অর্থ দপ্তরকে চিঠি বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷”
এদিন আবাসন মন্ত্রী জানান, “দেশে যখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্ট সম্বন্ধে এখন উৎসাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে কিন্ত কোটি কোটি টাকা জালিয়াতি হয়ে যাওয়ার যে সুযোগ রয়েছে এটা তার প্রমাণিত সত্য৷ ব্যাঙ্ককেও সতর্ক হতে হবে৷ যারা প্রচার করছেন তাঁদেরও সবদিক থেকে থেকে সতর্ক নিয়ে ভালও খারাপ দিক বিচার করে তবেই বলা উচিত৷ কারণ এতে ব্যক্তিবিশেষ থেকে সরকার সবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷”
লালবাজার সূত্রে খবর, তালতলা থানায় আবাসন দফতরের দায়ের করা অভিযোগে গোয়েন্দারাও তদন্ত শুরু করেছে৷ লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযোগ মাঝে মধ্যেই পুলিশের কাছে নথিবদ্ধ হয়৷ যে সব অ্যাকাউণ্টে এই জালিয়াতি করা টাকা ট্রান্সফার করা হয় তা তৈরি করা হয় ভুয়ো নথি দিয়ে৷ ফলে তদন্তে নেমে গোয়েন্দাদেরও অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়৷ তবে অনেক সময় দেখা গিয়েছে এই ধরনের চেক জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের ভিতর ও বাইরে একটি চক্র সমন্বয় রেখে এই জালিয়াতি করে৷ এবিষয়ে আবাসন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে প্রত্যেকটি অভিযোগেরই৷ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না কারা এর সঙ্গে যুক্ত৷ তবে এই চক্র এখন দেশজুড়ে জাল ছড়িয়েছে৷
The post আবাসন দপ্তরের চেক জাল করে ৪৬ কোটির প্রতারণার চেষ্টা, ধৃত এক appeared first on Sangbad Pratidin.