shono
Advertisement

Breaking News

ফতোয়া কী? এদেশে ফতোয়া দেওয়া কি আইনি?

যে কেউ ফতোয়া দিতে পারেন কি? The post ফতোয়া কী? এদেশে ফতোয়া দেওয়া কি আইনি? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:46 PM Apr 20, 2017Updated: 11:16 AM Apr 20, 2017

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফতোয়ার পালে যেন লেগেছে জোর হাওয়া৷ ধর্ম থেকে রাজনীতি- যে কোনই ইস্যুতে ইদানিং তার ডাক পড়ছে ঘনঘন৷ এমনকী নেটদুনিয়ায় কিডস-ম্যান-লেজেন্ডস জোকসের পৃথিবীতের জায়গা করে নিয়েছে ফতোয়া৷ বলা হচ্ছে, কিডস বা ম্যান নয়, একমাত্র লেজেন্ডসরাই নাকি ফতোয়া দেন৷ সাম্প্রতিক অতীতে ফতোয়া শব্দটির যে বাড়বাড়ন্ত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অজুহাতে প্রায়শই জারি হচ্ছে ফতোয়া৷ তার মধ্যে এসে মিশেছে রাজনীতিও৷ রাজনৈতিক বিরোধিতার আবহে একে অন্যের মাথার দাম ধার্য করছে৷ এমনকী প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীরাও এ থেকে বাদ যাননি৷ এই মৃত্যু হুমকিও ধরা হচ্ছে ফতোয়া হিসেবেই৷ তবে ফতোয়া যেন অনেকটা আতসবাজির মতো৷ খানিকটা হইচই ফেলে শেষমেশ স্তব্ধ হয়ে যায়৷ সম্প্রতি অবশ্য এর মোক্ষম জবাব দিয়েছেন গায়ক সোনু নিগম৷ আজান নিয়ে টুইট বিতর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন এক মৌলবি৷ মাথা কামিয়ে ছেঁড়া জুতো পরে দেশ ঘোরালে দশ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিলেন তিনি৷ তা সোনু নিজেই মাথা কামিয়ে সে টাকা চেয়েছেন৷ যে হেয়ার স্টাইলিস্ট তাঁর মাথা কামিয়েছেন সেই আলিম ভাই জানিয়েছেন, এ টাকা জনকল্যাণে দান করবেন তিনি৷ এর জেরেই ফতোয়া আবার খবরের শিরোনামে৷

Advertisement

তা কী এই ফতোয়া?  

কারও মাথার দাম ধার্য করা বা কাউকে মৃত্যু হুমকি দেওয়া কি ফতোয়া? শব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয় ইসলাম দুনিয়ায়, তাতে অবশ্য এ মানে দাঁড়ায় না৷  বলা যায়, ফতোয়া হল একরকমের ধর্মীয় বিধান৷ যা ইসলাম ধর্মে শিক্ষিত ব্যক্তিই একমাত্র জারি করতে পারেন৷ তাঁদেরকে মুফতি বলা হয়৷ ধর্ম ব্যাপারে কোনও জিজ্ঞাসু কোনও সংশয়ের মুহূর্তে এই মুফতিদের দ্বারস্থ হতে পারেন৷ তিনি তাঁর বিধান বা ফতোয়া দেন৷ ব্যাপারটা কীরকম? ধরা যাক, পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়ার বিধান আছে ইসলামে৷ কিন্তু নমাজের সময় কেউ বিমানে আছেন৷ তাহলে তিনি কী করবেন?  এই প্রশ্নের উত্তরে মুফতি ফতোয়া জারি করতে পারেন৷ কোনও বিকল্প উপায় বা বিধান নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন৷

কে দিতে পারেন ফতোয়া?

যে কেউ অবশ্য মুফতি হতে পারেন না৷ অর্থাৎ ফতোয়া দেওয়ার অধিকার সকলের নেই৷ যে অর্থে ফতোয়া শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তাতে তা সম্ভবও নয়৷  কেননা মুফতি হতে গেলে তাঁকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানী হতে হবে৷ কোরান, হাদিশ-সহ অন্যান্য বিষয়ে পর্যাপ্ত দখল থাকতে হবে৷ এর জন্য ইসলামে বেশ কিছু নিয়ম ধার্য আছে৷ কারা কারা ফতোয়া দিতে পারেন, তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধিও আছে৷ ইসলামীয় বিচারনীতি ‘উসুল-আল-ফিক’ অনুযায়ী, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বা সুযোগসন্ধানী হওয়ার কারণে ফতোয়া জারি করা যাবে না৷ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতো তো নয়ই৷ মুফতির নিজের আইন বা ভাবনাচিন্তা অনুযায়ীও তা জারি করা যাবে না৷ তা কোরান বা হাদিশ অনুযায়ীই হতে হবে৷

তাহলে এত ফতোয়া কেন?

কালে কালে অবশ্য সে অর্থ পাল্টে গিয়েছে৷ এত নিয়ম নীতিও মানা হয় বলে মনে হয় না৷ তাই ফতোয়ার রমরমা৷ এছাড়া ফতোয়া শব্দটির অর্থও ব্যহারের নিরিখে পাল্টে গিয়েছে৷ এখন যে কোনও মৃত্যুদণ্ড বা হুমকিকেও ফতোয়ার তকমা দেওয়া হয়৷ ফলে ফতোয়ার বাড়াবাড়ি ইদানিং বেশি৷

তা ফতোয়া কতটা আইনি?

ইসলামিক সুপ্রিম কাউন্সিল অফ আমেরিকা জানাচ্ছে, ফতোয়ার মর্যাদা অনেকটা হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মতোই৷ তবে দেখতে হবে, যে মুফতি ফতোয়া দিচ্ছেন তিনি কতটা যোগ্য? কিন্তু আদতে এ দেশের সুপ্রিম কোর্ট ফতোয়াকে আইনি স্বীকৃতি দেয়নি৷ ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এক মামলার প্রেক্ষিতে রায়ে জানিয়েছিল, স্বাধীন ভারতে ফতোয়ার কোনও জায়গা নেই৷ নির্দোষদের শাস্তিবিধানদের জন্য ফতোয়ার ব্যবহারকেও বেআইনি বলেছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত৷ সেইসঙ্গে ফতোয়া দেওয়া কিছু সংগঠনের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছিল, দেশের আইন এ ধরনের সংগঠনের কার্যবিধিকে সমর্থন করে না৷ যদিও দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি না থাকায় এ নিয়ে খানিক সমস্যা আছে৷ বাংলাদেশেও অবশ্য ফতোয়াকে নিষিদ্ধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছিল আদালত৷

তাহলে থাকল কী?

ফতোয়া কতটা আইনসিদ্ধ সে নিয়ে সংশয় থাকলই৷ এদিকে যে কেউ যে ফতোয়া জারি করতে পারেন না, তাও স্পষ্ট৷ তবু ফতোয়ার রমরমা চলছেই৷ আর তাতে আসল অর্থ নিয়ে ফতোয়াই যেন কোথায় মুখ লুকিয়েছে৷ বরং পরিবর্তিত বলা ভাল খানিকটা ভেজাল ফতোয়াই বাজার দখল করেছে৷

The post ফতোয়া কী? এদেশে ফতোয়া দেওয়া কি আইনি? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement