অর্ণব আইচ: চায়ের দোকানে বাবার সঙ্গে পরিচয়। কয়েক মিনিটের আলাপেই নদিয়ার বগুলার বাসিন্দা রামপ্রসাদ কুণ্ডুর ছেলে স্বপ্নদীপকে যাদবপুরের মেন হস্টেলে রাখতে রাজি হয়ে যান যাদবপুরের এক প্রাক্তনী তথা হস্টেলের ‘দাদা’ বলে পরিচিত সৌরভ চৌধুরী। এমনকী, হস্টেলের একটি ঘরে যে একজন প্রথম বর্ষের ছাত্র এসে থাকছেন, সেই তথ্য আদৌ কর্তৃপক্ষ জানত না বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তথা হস্টেলের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়েছে।
যাদবপুরের হস্টেলের তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে মৃত স্বপ্নদীপ কুণ্ডুকে ‘খুনে’র অভিযোগে পুলিশ পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা রোডের বাসিন্দা সৌরভ চৌধুরীকে যাদবপুর থানায় ডেকে জেরার পর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রামপ্রসাদ কুণ্ডু তাঁর অভিযোগে জানান, স্বপ্নদীপ হস্টেলেরই বাসিন্দা প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরী ও সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মনোতোষ মণ্ডলের মাধ্যমে হস্টেলের ৬৮ নম্বর রুমে থাকার সুযোগ পান। ওই রুমে রূপদহ গ্রামের বিমান নামে একজন থাকতেন। রবিবার হস্টেলে যাওয়ার পরই ছেলে বাবাকে জানান, তিনি খুব চাপে রয়েছেন। বুধবার রাত ন’টা নাগাদ ছেলে বলেন, তাঁর খুব ভয় করছে। তাঁকে হস্টেল থেকে এখনই নিয়ে যেতে। মাকে বলেন, অনেক কথা আছে।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে কড়া প্রশাসন, পুলিশের জালে প্রাক্তনী]
রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মাকে ফোন করে অন্য এক ছাত্র জানান, স্বপ্নদীপ উপর থেকে পড়ে গিয়েছেন। রামপ্রসাদ কুণ্ডু অভিযোগপত্রে লেখেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস সৌরভের নেতৃত্বে হস্টেলের অন্যান্য ছেলেরা আমার বড় ছেলের উপর অত্যাচার করে হস্টেলের উপর থেকে নিচে ফেলে মেরে দেয়। আমি ওদের বিরুদ্ধে আইনত কঠোর ব্যবস্থা চাই।’’ এরপর সৌরভের বক্তব্যে বেশ কিছু অসংগতি উঠে আসে। তাই তাঁকে আটক করা হয়। পুলিশ জেনেছে, চায়ের দোকানেই সৌরভ রামপ্রসাদকে বলেন, হাজার টাকা দিলেই ছেলে থাকতে পারবেন হস্টেলে। অথচ এদিন হস্টেলের সুপার তপন জানা পুলিশকে জানান, স্বপ্নদীপের নাম হস্টেলের রেজিস্ট্রার খাতা বা আবাসিকদের তালিকায় নেই। ওই ছাত্রের হস্টেলে থাকার ব্যাপারে তাঁরা কেউ জানেন না।
এই ব্যাপারে পুলিশের প্রশ্নের উত্তরে সৌরভ বিশেষ জবাব দিতে পারেননি। অভিযোগ, প্রাক্তনী সৌরভ মেস কমিটির পাণ্ডা হওয়ার কারণে নিজের ক্ষমতা দেখাতেন। গত বছর যাদবপুর থেকে অঙ্কে এমএসসি পাশের পর চাকরির চেষ্টা করছিলেন। তাঁর নির্দেশেই ১০৮ নম্বর রুমের মনোতোষ মণ্ডলের অতিথি হয়ে ৬৮ নম্বর রুমে অর্থনীতির দ্বিতীয় বর্ষের কল্লোল ঘোষ ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের অভিজিৎ লাইয়ার রুমমেট হয়ে থাকতে শুরু করেন স্বপ্নদীপ। তাঁদের সামনেই স্বপ্নদীপ বিবস্ত্র হয়ে লাফ দেন বলে অভিযোগ। তাই সৌরভের সহযোগী মনোতোষ ও অন্যান্যদের এই মৃত্যুতে ভূমিকা রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।