দীপালি সেন: আমূল পরিবর্তন হচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকে। আর একবারে নয়। দু’বারে হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। সেমেস্টার ব্যবস্থার হাত ধরেই আসছে এই বদল। যা নতুন তথা ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই চালু হয়ে যাচ্ছে। স্কুল শিক্ষাদপ্তরের অনুমোদন পেতেই বুধবার এই ঘোষণা করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের থেকে চালু হচ্ছে নয়া এই ব্যবস্থা। ওই ছাত্রছাত্রীরাই ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে সেমেস্টার ব্যবস্থায় দেবেন উচ্চমাধ্যমিক। অর্থাৎ, ২০২৫ সালেই হবে শেষ বার্ষিক উচ্চমাধ্যমিক।
বেশ কিছুদিন ধরেই একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সেমিস্টার ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। রাজ্য শিক্ষানীতিতেও রয়েছে সেমেস্টারের কথা। অবশেষে যা চালু করায় অনুমোদন দিয়েছে স্কুল শিক্ষাদপ্তর। সংসদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, নয়া ব্যবস্থায় থাকবে মোট চারটি সেমেস্টার। একাদশে দু’টি ও দ্বাদশ তথা উচ্চমাধ্যমিকে দু’টি। সবমিলিয়ে চারটি সেমেস্টারে চারটি পরীক্ষা হবে। একাদশ শ্রেণির প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা হবে এ বছরই নভেম্বর মাসে। দ্বিতীয়টি ২০২৫ সালের মার্চে। একইভাবে ২০২৫ সালের নভেম্বর ও ২০২৬ সালের মার্চে যথাক্রমে উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা হবে। প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা সম্পূর্ণ এমসিকিউ ভিত্তিক হবে। ওএমআর-এ পরীক্ষা দেবেন পরীক্ষার্থীরা। দ্বিতীয়টি হবে সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী ও বর্ণনামূলক প্রশ্নের ভিত্তিতে। পরীক্ষার্থীরা সাদা খাতায় প্রশ্নগুলির উত্তর লিখবেন। দুই সেমেস্টারের ফলাফল মিলিয়ে সার্বিক মূল্যায়ণ করা হবে পরীক্ষার্থীদের। একক কোনও সেমেস্টারে পাস-ফেল থাকবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন সংসদ সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
[আরও পড়ুন: আমেরিকায় খুন বীরভূমের নৃত্যশিল্পী অমরনাথ ঘোষ! রহস্যময় ফোন পেয়ে থানায় ছুটল পরিবার]
ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গেই বদল আসবে পাঠ্যক্রমেও। ইতিমধ্যেই ৪৭টি বিষয়ের পাঠ্যক্রম সংশোধন করার পাশাপাশি সেমেস্টার ব্যবস্থার জন্য দ্বিভাগে বিভক্ত করার কাজ সম্পূর্ণ করেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। যা স্কুল শিক্ষাদপ্তরের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। সংসদ সভাপতি জানিয়েছিলেন, ২০২৪-২৫ থেকে সেমেস্টার ব্যবস্থা চালু হলে তার সঙ্গেই নতুন পাঠ্যক্রম কার্যকর করা হবে। এদিন সংসদের তরফে জারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রম এবং সেমেস্টার ব্যবস্থা প্রয়োগের কৌশল সম্পর্কে শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে, সেমেস্টার ব্যবস্থায় স্কুল শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের কথায়, “স্কুলগুলোতে শিক্ষক, পরিকাঠামোগত অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় সেমেস্টার সিস্টেম চালু হলে শিক্ষার অবস্থা আরও খারাপ পরিণতির দিকে যাবে।” চালুর বিপক্ষে মত দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অনিমেষ হালদারও। বলেন, “সামান্য কিছু পড়ে উতরে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।” সেমিস্টার পদ্ধতিতে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার আগে ছাত্রছাত্রী শক্ত ভিত তৈরির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী।