সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন উলটো ছবি পুরুলিয়ায়। ঘরে ঘরে শৌচাগার থাকা সত্ত্বেও এই জেলার মানুষজন যখন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে মাঠে যান। একের পর এক গ্রাম জুড়ে নর্দমার নোংরা জল বয়ে যায়। সেখানে হুড়া ব্লকের হাতিমারা গ্রাম কেন্দ্র-রাজ্যের স্বচ্ছ সুন্দর গ্রাম গড়ার প্রকল্পে যেন মডেল! হাতিমারা যেন এক টুকরো ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে সমাজ জীবনে ছবি, বন্যপ্রাণ, পাখি। সেই সঙ্গে নানান আঁকিবুকি ও কারুকাজ।
গ্রামের দেওয়াল জুড়ে শুধু-ই ছবি। রঙ-বেরঙের দেওয়াল চিত্র। জঙ্গলমহলের এই জেলায় আদিবাসীদের সহরায় উৎসবে এই জেলার কুঁড়ে ঘরের দেওয়াল যেমন সেজে ওঠে। এখানে সারা বছরই গ্রামের দেওয়াল নানা কারুকাজে রঙিন। গ্রামজুড়ে থাকে না কোনও আবর্জনা। নিকাশি ব্যবস্থাও যথেষ্ট উন্নত। তাই জেলায় শৌচালয় স্থাপন ও সুন্দর গ্রাম গড়ার কাজের দায়িত্বে যুক্ত থাকা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের উপসচিব জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, “আক্ষরিক অর্থেই হাতিমারা গ্রাম একেবারে ক্যানভাস। এই গ্রাম অনুকরণের যোগ্য। আমরা বর্তমানে যে স্বচ্ছ- সুন্দর গ্রাম গড়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছি সেই কাজ তারা ইতিমধ্যেই করে দেখিয়েছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসার।”
[আরও পড়ুন: চাপ বাড়াচ্ছে কেন্দ্র, এবার সন্দেশখালিতে আদিবাসী কমিশন, ডিজি-মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব]
জঙ্গলমহলের এই জেলায় খাতায় কলমে ৯১ শতাংশ পরিবারে শৌচাগার রয়েছে। নয় শতাংশ পরিবারে এখনও শৌচাগার নেই। তবে শৌচাগার থাকলেও এই জেলার বহু মানুষ শৌচকর্ম করতে এখনও মাঠে যান। প্রশাসন এই বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ নিলেও ঘরের শৌচালয় ব্যবহার করাতে ১০০ শতাংশ সফল হতে পারেনি। সম্প্রতি এই নির্মল গড়ার কাজেই কেন্দ্র-রাজ্যের স্বচ্ছ-সুন্দর গ্রাম গড়ার প্রকল্প শুরু হয়েছে। এখানে রীতিমতো উদাহরণ এই হাতিমারা।
দেখুন ভিডিও:
দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে এই গ্রামে কম-বেশি ৮০টি পরিবারের বাস। এর মধ্যে অধিকাংশ আদিবাসী। যারা সকাল হলেই ঘরের সদর দরজার চৌকাঠ পরিষ্কার করে গোবর লেপে দেন। প্রত্যেকটা বাড়ির প্রবেশ পথ এমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় আপনাআপনি ভাবেই এই গ্রাম স্বচ্ছ-সুন্দর হয়ে যায়। তাছাড়া গ্রামে কোথাও কোনও নোংরা পড়ে থাকলে এলাকার মানুষজনই তা তুলে আবর্জনার জায়গায় ফেলে আসেন। সেই সঙ্গে কুঁড়ে ঘরের দেওয়াল জুড়ে লেখচিত্র আঁকিবুকির কাজ চলে প্রায় সারা বছর। জলে, বৃষ্টিতে, রোদে দেওয়াল জুড়ে থাকা ওই ক্যানভাস অপরিচ্ছন্ন হয়ে গেলেই মানুষজন রঙ, তুলি নিয়ে তা সাজিয়ে তোলেন।
[আরও পড়ুন: কৃষক বিক্ষোভে ফের ধুন্ধুমার পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমানা, পঞ্চম পর্যায়ে বৈঠকের প্রস্তাব সরকারের]
ওই গ্রামের বাসিন্দা বিভীষণ হাঁসদা, সোমনাথ হাঁসদা বলেন, “গ্রামের সব মানুষের চেষ্টাতেই এমন রূপ দেওয়া গিয়েছে। এটা আজ থেকে নয় অনেকদিন ধরেই আমাদের এমন সংস্কৃতি চলছে। সকাল হলেই সবাই নিজের ঘর-দুয়ার পরিষ্কার করার পাশাপাশি ঘরের বাইরের অংশ সাফ-সুতরো করেন। দেওয়াল চিত্রের মূলত কাজ চলে সহরায় পরবে। তারপরে দেওয়াল যদি অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন আবার নতুন করে রাঙিয়ে তোলা হয়। “