দুলাল দে: এতো দিনে দুপুরে পুকুর চুরি! বাংলার মাটিতে ভিনরাজ্যের ক্লাব হোম গ্রাউন্ড দেখিয়ে আই লিগ খেলে যাচ্ছে। অথচ বাংলা ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতিরও প্রয়োজন পড়ছে না! এমন কি একটি ক্লাবতো ভদ্রতাবশত বাংলার ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাকে জানানোরও প্রয়োজন বোধ করেনি। অবাক হলেও এটাই সত্যি।
এবছর আই লিগে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি ক্লাব হিসাবে রয়েছে মহামেডান স্পোর্টিং। স্বাভাবিকভাবেই মহামেডানের হোম গ্রাউন্ড বাংলার কোন মাঠেই হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারজন্য নিজেদের হোম গ্রাউন্ডের যাবতীয় তথ্য জানাতে হয় পেরেন্ট বডিকে। সেভাবেই আইএফএ-কে জানিয়ে নৈহাটি স্টেডিয়ামকে হোম গ্রাউন্ড হিসাবে বেছে নিয়েছে মহামেডান। কিন্তু ভিন রাজ্যের চারটি দল এবারের আই লিগে কল্যাণী স্টেডিয়ামে হোম গ্রাউন্ড দেখিয়ে ম্যাচ খেললেও দুটো দল বাংলা ফুটবল নিয়ামক সংস্থাকে তা জানানোর প্রয়োজনই বোধ করেনি। আর তাতেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে ফেডারেশনকে কড়া চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত।
মাঝে মাঝে শোনা যায় স্থানীয় প্রশাসনকে কিছু না জানিয়েই ভিনরাজ্যের পুলিশ এসে কলকাতা থেকে অপরাধী গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। আর তা জানাজানি হতেই কম জলঘোলা হয় না। কিন্তু তা বলে রাজ্য ফুটবল সংস্থাকে না জানিয়েই বাংলার মাঠেই আই লিগের হোমগ্রাউন্ড বানিয়ে দিল ভিনরাজ্যের ক্লাবগুলি! পাশাপাশি, নিজেদের রাজ্য ও ভিন রাজ্য মিলিয়ে পাঁচটি আই লিগের ক্লাব একসঙ্গে একই জায়গায় হোমগ্রাউন্ড দেখিয়েছে এরকমটাও আগে দেখা যায়নি আই লিগে। এবারের আই লিগে তাই ঘটেছে। অশান্ত পরিবেশের জন্য মনিপুরের দুটো দল ট্রাউ এবং নেরকা অনেক আগেই আইএফএ-র কাছে আবেদন করে-কল্যাণী স্টেডিয়ামকে তারা আই লিগের হোম গ্রাউন্ড হিসাবে দেখাতে চায়। মনিপুরের অশান্ত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণী স্টেডিয়ামকে হোম গ্রাউন্ড হিসাবে দেখানোর জন্য ট্রাউ এবং নেরকাকে অনুমতি দিয়ে দেয় আইএফএ। সমস্যাটা তৈরি হয় ইন্টার কাশি এবং রাজস্থান ইউনাইটেডের বেলায়।
[আরও পড়ুন: ঘরের মাঠে ২-১ ব্যবধানে নেরোকা বধ, আই লিগের শীর্ষেই রয়ে গেল সাদা-কালো ব্রিগেড]
আইএফএকে কিছু না জানিয়েই কল্যাণী স্টেডিয়ামকে হোম গ্রাউন্ড হিসাবে দেখিয়ে দেয় রাজস্থান ইউনাইটেড। কিন্তু যেই মুহূর্তে আইএফএ জানতে পারে সমস্যা তৈরি হয়। বাধ্য হয়ে কল্যাণী স্টেডিয়ামকে হোম গ্রাউন্ড হিসাবে চেয়ে আইএফএর কাছে আবেদন করে রাজস্থান ইউনাইটেড। আইএফএর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় অনুমতি দেওয়া হবে তবে তারজন্য এক লক্ষ টাকা দিতে হবে। আইএফএকে লক্ষ টাকা দেওয়া দূরে থাক পাল্টা কোনও অনুমতি না নিয়েই ট্রাউর সঙ্গে ম্যাচ খেলে ফেলে রাজস্থান ইউনাইটেড। ইন্টার কাশি আরও একধাপ এগিয়ে। কল্যাণীকে হোম গ্রাউন্ড করে ম্যাচ খেলে ফেলল অথচ আইএফএকে তা জানানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজনবোধের অনুভব করেনি তারা!
অথচ ফেডারেশনের সংবিধানের ৭৩ নম্বর ধারায় পরিস্কার লেখা রয়েছে ফেডারেশনের কোন মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন অন্য কোনও মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতি ছাড়া কোন প্রদর্শনী কিংবা প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে পারবে না। এক্ষেত্রে আইএফএ-র বক্তব্য হল ইন্টার কাশি এবং রাজস্থান ইউনাইটেড আইএফএ-কে না জানিয়ে কল্যাণীতে ম্যাচ খেলে ফেডারেশনের নিয়মকেই লঙ্ঘন করেছে আর তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আইএফএ মনে করছে এরকম চলতে থাকলে কোন রাজ্য সংস্থাই আর কোন রাজ্য সংস্থাকে মানবে না। যে যেখানে পারবে এভাবে ম্যাচ খেললে সংবিধানের পরিকাঠামো ভেঙে পড়বে। বাধ্য হয়ে তাই ক্ষোভ জানিয়ে ফেডারেশনের কাছে বিশাল প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে আইএফএ। চাওয়া হবে ক্ষতিপূরণও। আইএফএ-র তরফ থেকে প্রতিবাদ গেলেও এখনও পর্যন্ত ফেডারেশনের কাছ থেকে কোনও জবাব আসেনি।