ভারতীয় ফুটবলে তিনি পরিচিত মুখ। খেলেছেন তিনপ্রধানেই। কোচিংও করিয়ে গিয়েছেন এদেশের আই লিগ ক্লাবে। তিনি ডগলাস দ্য সিলভা। কাতার বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া। তার আগে মহাম্যাচ নিয়ে বিশ্লেষণ ডগলাস দ্য সিলভার।
বিশ্বকাপ ফুটবল দারুণ উপভোগ করছি। আপনারাও নিশ্চয় করছেন? বারুদে ঠাসা কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup 2022) প্রথম সেমিফাইনাল। আর্জেন্টিনার সামনে ক্রোয়েশিয়া (Argentina vs Croatia)। গোটা বিশ্ব তাকিয়ে এই ম্যাচটার দিকে। আমিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এর পিছনে অবশ্য একাধিক কারণ রয়েছে। সব দিক বিচার করেই বলছি প্রথম সেমিফাইনালে আমার বাজি ক্রোয়েশিয়াই। শেষ হাসি তোলা থাকবে ক্রোয়েশিয়ার জন্য।
ব্রাজিল ও অন্যান্য দলগুলোর বিরুদ্ধে ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো ডালিচ যে রণনীতি নিয়েছিলেন, তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার মতো অনেকেই মুগ্ধ ডালিচের স্ট্র্যাটেজি নিয়ে, ডালিচের সিস্টেম নিয়ে। ফুটবলশিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারেন ক্রোয়েশিয়ার খেলা দেখে। প্রতিটি কোচেরই প্ল্যান বি, প্ল্যান সি থাকে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ ডালিচ প্রতিটি ম্যাচে আলাদা আলাদা সিস্টেমে দলকে খেলিয়েছেন এখনও পর্যন্ত। প্রত্যেকটি ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার খেলা মন কাড়ছে। প্রতিটি ম্যাচের পরই ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। ফুটবলারদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে। ক্রোয়েশিয়ার জন্য যেমন এটা ভাল দিক, প্রতিপক্ষের জন্য কিন্তু বিষয়টা চিন্তার।
[আরও পড়ুন: মাঠের মধ্যে রোনাল্ডোকে লক্ষ্য করে জল ছুঁড়লেন দর্শক, ভাইরাল ভিডিও]
অভিজ্ঞ প্লেয়ারদের উপস্থিতির জন্যই ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ওরকম রং ছড়াচ্ছে। লুকা মদ্রিচ (Luka Modric), কোভাচিচ, পেরিসিচের মতো খেলোয়াড় রয়েছে এই ক্রোয়েশিয়া দলে। শারীরিক দিক থেকে ওরা ভীষণ শক্তিশালী। মদ্রিচ-কোভাচিচদের পাসিং ফুটবল মন কেড়ে নিচ্ছে। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া আক্রমণের ঢেউ তুলবে আর্জেন্টিনার পেনাল্টি বক্সে। সেই ঢেউ কীভাবে সামলাবে আর্জেন্টিনা সেটাই দেখার।
মদ্রিচরা এতটাই অভিজ্ঞ যে ওরা জানে বল কখন ধরতে হবে, কখন রিলিজ করতে হবে। প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার সঠিক সময়ও ওদের জানা। আমি বেশি করে তাকিয়ে থাকব মদ্রিচের দিকে। মদ্রিচ মায়েস্ত্রো। গোটা দলটার মস্তিষ্ক ও। কখন বল হোল্ড করতে হয়, কখন বল ছাড়তে হয়, খেলা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কোন সময়ে ম্যাচটা মন্থর করে দিতে হয়, সবটাই মদ্রিচের নখদর্পণে। মাঠের বাইরে থাকেন কোচ। কিন্তু মাঠের ভিতরে একজন খেলোয়াড় কোচ হয়ে ওঠেন। মাঠের ভিতরের সেই কোচ হল লুকা মদ্রিচ। আর এতেই অ্যাডভান্টেজ পাচ্ছে ক্রোয়েশিয়া।
আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ২-৩ গোল হবে বলে আমার অন্তত মনে হয় না। ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ড বেশ জমাটি। আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধরনধারণ সবারই জানা। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দলগুলোর মতোই আর্জেন্টিনাও বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলতে পছন্দ করে। ক্রোয়েশিয়ার মাঝমাঠের কোয়ালিটি বেশ ভাল। মদ্রিচ, কোভাচিচ, পেরিসিচদের উপস্থিতি ধারে ও ভারে এগিয়ে রাখছে ক্রোয়েশিয়ার মিডফিল্ডকে। আর এই অভিজ্ঞতা এবং মাঝমাঠের জন্যই ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে রাখাই যায়।
আর্জেন্টিনা মেসি-নির্ভর। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার স্তম্ভ মদ্রিচ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার লিভাকোভিচকে ভুলি কী করে? ক্রোয়েশিয়ার দীর্ঘ চেহারার এই গোলকিপার ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে। টাইব্রেকারে থামিয়ে দিয়েছে জাপানের দৌড়। ব্রাজিলকেও টুর্নামেন্টের বাইরে ছিটকে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। পাদপ্রদীপের আলোয় এখন লিভাকোভিচ। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি শুট আউটে রডরিগোর প্রথম শটটাই থামিয়েছে লিভাকোভিচ। আর ওই সেভ শুরুতেই ক্রোয়েশিয়াকে অ্যাডভান্টেজ দিয়ে যায়। আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে লিভাকোভিচের কাছ থেকে এরকম দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখার অপেক্ষায় আমরা সবাই।
মেসির এটাই শেষ বিশ্বকাপ। সেই সুযোগ কি কাজে লাগাবে লিও? ক্লাব পর্যায় হোক বা জাতীয় দল, মেসি মাঠে থাকা মানে সব আলো শুষে নেওয়া। মেসি বনাম মদ্রিচ দ্বৈরথের পাশাপাশি বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের সামনে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোলকিপার, একথা বললেও অত্যুক্তি করা হবে না। মেসি ও মদ্রিচের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই সেমিফাইনালকে অন্য এক মাত্রায় পৌঁছে দেবে। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণভাগে যেভাবে ক্রোয়েশিয়া খেলাটা নিয়ে যায়, সেটা নয়নাভিরাম, এককথায় দুর্দান্ত। আর্জেন্টিনাকে সতর্ক থাকতে হবে। আরও একটা বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে আর্জেন্টিনাকে। দ্রুতগতিতে কাউন্টার অ্যাটাক তুলে আনে ক্রোয়েশিয়া। সামলাতে না পারলে ভুগতে হবে মেসিদের।