নেদারল্যান্ডস: ২৬২ (সিব্র্যান্ড ৭০, ভ্যান বিক ৫৯, মধুশঙ্কা ৪/৪৯, রাজিথা ৪/৫০)
শ্রীলঙ্কা: ২৬৩/৫ (সমরবিক্রমা ৯১*, নিশাঙ্কা ৫৪, আশলঙ্কা ৪৪, ধনঞ্জয় ৩০, আরিয়ান ৩/৪৪)
শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়েছিল নেদারল্যান্ডস। সেই ধারাবাহিকতা কি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও দেখা যাবে? ‘টোটাল ফুটবল’-এর দেশ কিন্তু আরও একবার ‘টোটাল ক্রিকেট’ বিশ্বের কাছে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। সিব্র্যান্ড এঞ্জেলব্রেট ও লোগান ভ্যান বিকের লড়াকু ইনিংসের পর আরিয়ান দত্তের দুরন্ত অফ স্পিন। তবুও শেষরক্ষা হল না। সদিরা সমরবিক্রমার ‘বিক্রম’-এর কাছে হার মানল নেদারল্যান্ডস। এশিয়া কাপের পর এবার কাপ যুদ্ধেও নিজেকে মেলে ধরলেন সমরবিক্রমা। তাঁর ১০৭ বলে অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংসের কাছে হার মানল প্রতিপক্ষ। তাঁর ইনিংসে ছিল ৭টি চার। অবশ্য সমরবিক্রমাকে সাহায্য করেছিলন ম্যাচের দুই পার্শ্ব নায়ক পাথুম নিশাঙ্কা, চরিথ আশলঙ্কা ও ধনঞ্জয় ডি সিলভা। ফলে ৫ উইকেটে জিতে প্রথম পয়েন্ট ঘরে তুলে নিল শ্রীলঙ্কা।
আধুনিক যুগের একদিনের ক্রিকেটে ২৬৩ রান চেজ করা মোটেও কঠিন নয়। তবে শ্রীলঙ্কার কাছে ব্যাপারটা বেশ চাপের ছিল। কারণ চলতি কাপ যুদ্ধে এর আগে খাতা খুলতে পারেনি ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দল। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৫২ রানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার কুশল মেন্ডিস ও কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে ডাচদের ফের একটা বড় জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন আরিয়ান দত্ত। চলতি প্রতিযোগিতায় নতুন বলে অফ স্পিন করতে এসে দারুণ পারফর্ম করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটার। এবারও ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন।
[আরও পড়ুন: বাবর আজমের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামার আগে ধোনির কাছ থেকে কোন টিপস পেলেন রশিদ?]
কম যাননি আর এক জোরে বোলার পল ভ্যান মেকেরিন। ১৬.১ ওভারে শ্রীলঙ্কাকে ফের একবার ধাক্কা দেন তিনি। তাঁর বলে ৫২ বলে ৫৪ রানে আউট হন আর এক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। ১০৪ রানে ৩ উইকেট চলে যেতেই শ্রীলঙ্কা স্বভাবতই ব্যাকফুটে চলে যায়। তবে হাল ছাড়েননি সাদিরা সমরবিক্রমা। সঙ্গে পেয়ে যান চরিথ আশলঙ্কাকে। ধৈর্য বজায় রেখে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৭৭ রান। ফলে সেই সময় থেকেই ম্যাচটা শ্রীলঙ্কার দিকে ঢলে পড়ে। ঠিক সেই সময় ডাচদের আবার ধাক্কা দেন আরিয়ান দত্ত। দলের রান যখন ১৮১, তখন আরিয়ানের অফ স্পিনের কাছে হার মানলেন চরিথ আশলঙ্কা। আশলঙ্কা ৪৪ রানে ফিরে যান। সেই সময় অনেকের মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার পক্ষে ম্যাচ জয় কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু লড়াকু মানসিকতা বজায় রেখে চলতি কাপ যুদ্ধে দলকে প্রথম জয় এনে দিলেন সমরবিক্রমা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা। তিনি ৩৭ বলে ৩০ রানে করে একেবারে শেষ মুহূর্তে আউট হন।
এদিকে দিলশান মধুশঙ্কা ও কাসুন রাজিথা। দুই পেসারের দাপটে একটা সময় মাত্র ৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল নেদারল্যান্ডস। মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ডাচদের ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যাবে। তবে হিসাব বদলে দিলেন সিব্র্যান্ড এঞ্জেলব্রেট ও লোগান ভ্যান বিক। সপ্তম উইকেটে ১৩০ রান যোগ করে কাপ যুদ্ধের মঞ্চে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবীন্দ্র জাদেজার রেকর্ড ভেঙে দিলেন। এর আগে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে ধোনি ও জাদেজা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সপ্তম উইকেটে ১১৬ রান তুলেছিলেন। এবার সেই রেকর্ড নিজেদের নামে করে নিলেন সিব্র্যান্ড এঞ্জেলব্রেট ও লোগান ভ্যান বিক।
সিব্র্যান্ড এঞ্জেলব্রেট এবং লোগান ভ্যান বিক দলগত ৯১ রানের মাথায় ম্যাচের হাল ধরেন। এই জুটি ক্রিজে জমে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ সময় নিয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে ডাচদের এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সিব্র্যান্ড-লোগান। দেখতে দেখতে ওডিআই বিশ্বকাপে সপ্তম উইকেটের সর্বাধিক রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভেঙে দেন সিব্র্যান্ড-লোগান। সপ্তম উইকেটে তাঁরা জুটিতে ১৪৩ বলে ১৩০ রান তোলেন। ওডিআই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের হয়ে এটি পঞ্চম শতরানের পার্টনারশিপ। সিব্র্যান্ড ৮২ বলে ৭০ রান করেন। মারলেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কা। এদিকে তাঁর পার্টনার লোগান ভ্যান বিকের ব্যাট থেকে এল ৭৫ বলে ৫৯ রান। তাঁর লড়াকু ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৬২ রানে অল আউট হয়ে যায় ‘অরেঞ্জ আর্মি’।
লখনউ-এর পিচ স্পিনারদের জন্য আদর্শ। এহেন পিচে ফের একবার নজর কাড়লেন আরিয়ান দত্ত। তবে বাকিদের কাছ থেকে তেমন সাহায্য পেলেন না। ফলে ডাচদের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে প্রথম পয়েন্ট পেল শ্রীলঙ্কা। কারণ একাকুম্ভ রক্ষা করলেন সদিরা সমরবিক্রমা।