সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপ (ICC World Cup 2023) অভিযান শুরুর আগে থেকে একটা চেনা বুলি আওড়ে চলেছেন আফগানিস্তান (Afghanistan) অধিনায়ক হাসমাতুল্লা শাহিদি। যার বঙ্গ-সংস্করণ হল, “ভারত (India Cricket Team) আমাদেরও ঘরের মাঠ।” সেটা বুধবার নয়াদিল্লিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে আরও বেড়েছে বই কমেনি। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলছে রোহিত শর্মার ভারত। জনসমর্থনও তাঁদের দিকেই ঢলে পড়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। আর বুধবার যখন অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ২২ গজে মুখোমুখি হবেন বিরাট কোহলি বনাম নবীন-উল হক, তখন সেই সমর্থনের জোয়ার কোন দিকে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। শেষ আইপিএল পর্বে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর বনাম লখনউ সুপার জায়ান্টসের ম্যাচে বিরাট কোহলির সঙ্গে ‘অন ফিল্ড’ ঝামেলায় জড়িয়ে চর্চায় উঠে এসেছিলেন আফগান বোলার। করমর্দন থেকে বিতর্কের লাভাস্রোত বইতে শুরু করেছিল। এমনকী, যখনই সুযোগ পেয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাটকে বিঁধতে ছাড়েননি নবীন। এবার? আইপিএল নয়, তার চেয়েও বড় মঞ্চে বুধবার বিশ্বকাপে ‘আমনে-সামনে’ কোহলি-নবীন। স্নায়ুর চাপ আবার বিস্ফোরণ ঘটাবে না তো?
এসব আগুনে ফুলকির সামনে ‘শান্তির ললিত বাণী’ যেমন ক্লিশে, আফগান অধিনায়ক শাহিদির জবাবও তেমন। ‘শান্তির দূত’-এর মতোই তিনি বলে গেলেন, “আগেও বলেছি, ভারত আমাদের হোম গ্রাউন্ডের মতো। এখানকার ক্রিকেটপ্রেমীরা, আমাদের যথেষ্ট ভালবাসেন। মাঠের লড়াই অন্য। প্রত্যেকের মধ্যে আগ্রাসন কাজ করে। সেটা শুধু ভারত কিংবা আফগানিস্তান বলে নয়, সবার মধ্যেই। আমার দলের অধিকাংশ কিন্তু শচীন তেণ্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়কে আদর্শ মনে করে।” কথা শুনেই স্পষ্ট অনুমিত, বাংলাদেশের কাছে হেরে বেশ চাপে আফগান শিবির।
[আরও পড়ুন: ‘হাসপাতালে ভর্তি হলেও…’, শুভমানের দ্রুত সুস্থতা নিয়ে আশাবাদী ভারতীয় দল]
তবে ভুল কিছু বলেননি শাহিদি। মাঠের লড়াই তো আলাদা। আর সে লড়াইয়ে আগ্রাসনই শেষ কথা। তার সার্থক উদাহরণ ভারতীয় শিবির। বুধবার নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তান ম্যাচ হলেও টিম ইন্ডিয়ার ভাবনায় ইতিমধ্যে ঢুকে পড়েছে ১৪ অক্টোবরের পাকিস্তান ম্যাচ। দিল্লিতে আফগান-জয় করে আমেদাবাদে পা রাখতে বদ্ধপরিকর রোহিত শর্মারা। বিশ্বকাপ ‘ওপেনিং’-এ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতো আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও যে নেই শুভমান গিল। অস্ট্রেলিয়ার পর শুধু আফগানিস্তান ম্যাচ নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মহারণেও অনিশ্চিত তিনি। সেটা আগাম আন্দাজ করে গিলের ‘ব্যাক আপ’ সন্ধানে নেমেও পড়েছেন নির্বাচকরা।
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা অধুনা অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের শেষ যে ম্যাচটা আয়োজিত হয়েছিল, সেটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা। যেখানে দু’দলের মিলিত প্রয়াসে উঠেছিল রেকর্ড ৭৫৬ রান। অতীত পরিসংখ্যান হোক কিংবা দিল্লির পাটা পিচের চরিত্র, ভারতীয় দলও পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের গেমপ্ল্যান সাজাচ্ছে। কোনও অঘটন না ঘটলে টিমে একটাই পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা, তা হল রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বসিয়ে দলে ঢোকানো হতে পারে শার্দূল ঠাকুর কিংবা মহম্মদ শামিকে। অর্থাৎ বুমরা-সিরাজের পাশে একটা অতিরিক্ত পেসার খেলানোর ভাবনা। ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠোরও বলে গেলেন, “আমরা জয়ের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাই। টিমে প্রত্যেকের নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে। সেটা যথাযথভাবে পালন করলে জয় পেতে সমস্যা হবে না।”
কিন্তু ব্যাটিং? অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সহজ-টার্গেট কঠিন হয়ে উঠেছিল টপঅর্ডারের ত্রয়ী রোহিত-ঈশান কিষাণ-শ্রেয়সের মহাশূন্যের যাত্রায়। কোচ বিক্রম অবশ্য ঈশান-শ্রেয়স প্রসঙ্গে বললেন, “ঈশান অতীতেও দলের হয়ে ওপেন করেছে। শ্রেয়সও নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন। কে এল (রাহুল) পাঁচ নম্বরে দুর্দান্ত খেলেছে। এই ভারতীয় দল যেকোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে জানে।” বিপক্ষে রশিদ খানের মতো বিশ্বমানের বোলার রয়েছে। সঙ্গে দোসর মুজিব-নবি। তবে স্পিন-ঘূর্ণির আতঙ্ক ভুলে জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবনায় নেই টিম ইন্ডিয়ার, সেটা বিক্রমের বক্তব্যেই পরিষ্কার।
ও হ্যাঁ। এত কথায় একজনের কথা বলা হল না। তিনি, বিরাট কোহলি। বিশ্বকাপে ‘হোম কামিং’ ঘটছে তাঁর। শেষ ম্যাচে অজিদের বিরুদ্ধে ৮৫ রানের যে ইনিংসটা খেলেছেন, তারপর তাঁকে নিয়ে স্বপ্নে রঙিন থাকবে ভূ-ভারত, সেটাই দস্তুর। এবার ঘরের মাঠ, গ্যালারিতে নিজের নামে স্ট্যান্ড। রাঙিয়ে দিয়ে যাবেন না বিরাট-রাজা? উত্তরের অপেক্ষায় দেশের রাজধানী।