আলাপন সাহা: নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের বাইরে বেশ ভিড়। ভারতীয় টিম বাস আসার পর সেটা আরও অনেকটাই বাড়ল। ম্যাচের আগের দিন ঐচ্ছিক প্র্যাকটিসে ভারতীয় টিমের খুব একটা কেউ আসেন না। এদিনও আসেননি। স্টেডিয়ামের বাইরে উৎসুক অনেকেই জানতে চাইছিলেন- মহম্মদ শামি (Mohammad Shami) এসেছেন কি না! বিশ্বকাপের (ICC World Cup 2023) ফাইনালে ভারতের ওঠার ক্ষেত্রে রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের ঠিক যতটা অবদান আছে, ততটাই অবদান রয়েছে শামির।
ওয়াংখেড়েতে নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওরকম বিধ্বংসী বোলিং না করলে শেষমেশ অতটা সহজে জয় আসত কি না, তা নিয়ে জোর চর্চা চলতেই পারে। প্রথম কয়েকটা ম্যাচে তাঁকে খেলানো হয়নি। কিন্তু টিমে ফেরার পরই বোলিং অ্যাটাকের ব্যাটনটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। অ্যারন ফিঞ্চের মতো প্রাক্তন অজি অধিনায়ক ঘোষণা করে দিয়েছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা পেসার শামিই। যতই তাঁর নিজ দেশে প্যাট কামিন্স বা মিচেল স্টার্কের মতো পেসার থাকুক না কেন! ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে প্রশংসা চলছে। তবে শামি এসব থেকে নিজেকে দূরে রেখে দিয়েছেন। রবিবাসরীয় ফাইনালের আগে নিজেকে আরও বেশি ফোকাসড রাখছেন।
টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই পরিবারকে সঙ্গে রেখেছেন ভারতীয় পেসার। ফাইনালের আগে খুব বিশেষ একজনকে উড়িয়ে নিয়ে আসছেন মোরাদাবাদ থেকে। তিনি মহম্মদ শামির মা। শোনা গেল, এদিনই আমেদাবাদে শামি মা’কে নিয়ে চলে আসেন। সঙ্গে তাঁর দাদা, ভাইরাও আছেন। শুরুর দিকে সঙ্গে পরিবারের কয়েকজন থাকলেও মা আসেননি। শামি ঠিক করেই রেখেছিলেন, যদি ফাইনালে উঠতে পারেন তাহলে মা’কে নিয়ে আসবেন। মুম্বইয়ের সেমিফাইনাল জেতার পরই শামি মায়ের সঙ্গে কথা বলে নিজের ইচ্ছের কথা জানান। সেই মতো আমেদাবাদ চলে এসেছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের পর বিজ্ঞাপনেও ‘শামিয়ানা’, দ্বিগুণ হল তারকা পেসারের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’]
স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড আবেগতাড়িত শামির পুরো পরিবার। এই মাঠেই আইপিএল জিতেছেন। এবার সেখানেই বিশ্বজয়ের স্বাদ পেতে চান ভারতীয় পেসার। এর আগে দুটো বিশ্বকাপ খেলেছেন। দুটোতেই সেমিফাইনালে হারের তেতো স্মৃতি নিয়ে ফিরতে হয়েছিল। দেশের মাঠে কাপ জিতে জীবনের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চান তিনি। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত তেইশ উইকেট হয়ে গিয়েছে। টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্রুততম পঞ্চাশ উইকেটের রেকর্ড গড়েছেন। তবে শামিকে এসব কোনও কিছুই ছুঁতে পারছে না। বরং একটাই লক্ষ্য, রবিবার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে কাপটা তোলা।
ফাইনালের আগে খুব ঘনিষ্ঠ জনাকয়েকের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপে জেতার ব্যাপারে তিনি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। তিনি মনে করেন, যতই দুরন্ত পারফরম্যান্স আসুক না কেন, বিশ্বকাপ জিততে না পারলে সব কিছু মূল্যহীন হয়ে যাবে। তাঁর কাছে নিজের পারফরম্যান্সের থেকেও দলের সাফল্যটাই আসল। তাই তিনি ক’টা উইকেট নিলেন, সেটা তাঁর কাছে কখনও বাড়তি গুরুত্ব পায় না। তাই তাঁর একটাই লক্ষ্য, বিশ্বকাপ জেতা। আজ মায়ের সামনে দেশকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে চান তিনি।