স্টাফ রিপোর্টার : সন্তোষ ট্রফির (Santosh Trophy) ব্যর্থতার অনুসন্ধানের জন্য তিন প্রাক্তন ফুটবলার তথা কোচকে নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গড়ল আইএফএ (IFA)। যে কমিটিতে রয়েছেন দু’জন আই লিগ জয়ী কোচ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য (Manoranjan Bhattacharya) এবং সঞ্জয় সেন (Sanjay Sen)। সঙ্গে দেবজিৎ ঘোষ (Debjit Ghosh)। যিনি বাংলাকে চারবার সন্তোষ ট্রফি জেতানোর পাশাপাশি জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলেন। এই কমিটির দায়িত্ব হল, এবারের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার জঘন্য পারফরম্যান্সের কারণ বিশ্লেষণের পাশাপাশি, কোন রাস্তায় হাঁটলে বাংলা ফের তার হারানো গৌরব ফিরে পেতে পারে, তার পরামর্শ দেওয়া।
কেন মনোরঞ্জন, দেবজিৎ এবং সঞ্জয় সেনের হাতে বাংলার হারের ময়নাতদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হল, সেই প্রসঙ্গে আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে এই তিন ব্যক্তিত্বই ফুটবলের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। প্রথমত মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং দেবজিৎ ঘোষ সন্তোষ ট্রফিতে একাধিক ম্যাচ খেলার পাশাপাশি দেশের অধিনায়কত্ব করেছেন। সঞ্জয় সেন এবং মনোরঞ্জন ভট্টাটার্য আবার আই লিগ জয়ী কোচ। তাছাড়া মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলের টেকনিক্যাল কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। সঞ্জয় সেন মোহনবাগানের দলের সঙ্গে রয়েছেন। দেবজিৎ নিয়মিত ভাবে আইএসএলে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। এই কারণেই এই তিনজনের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ, এঁরাই আইএফএ-কে সঠিক পথ দেখাতে পারবেন।’’ তবে এদিন আইএফএর মিটিং নিয়ে কিন্তু বিস্তর জলঘোলা শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার জন্য এদিন দীপক মণ্ডল, মেহতাব হোসেন, অভ্র মণ্ডল, অর্ণব মণ্ডল, ডেনসন দেবদাসের মতো একাধিক ফুটবলারকে আইএফএ-তে ডাকা হয়েছিল। সেই আলোচনাতেই সহ সভাপতিদের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন আইএফএ সচিব। এক সময় আলোচনা ছেড়ে উঠে যান অন্যতম সহ সভাপতি সৌরভ পাল। এরপর আলোচনা সেখানেই ভেস্তে যায়।
[আরও পড়ুন: ‘বন্ধু তোমাকে মিস করি’, ওয়ার্নের মৃত্যুবার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট শচীনের়়]
আলোচনায় প্রাক্তন ফুটবলাররা জোর দেন, স্কুল ফুটবল এবং জেলা লিগ থেকে ফুটবলার তুলে আনার উপর। কেউ কেউ রাজ্য সরকারকে আরও পাশে থাকার কথাও বলেন। এরপরেই আইএফএর অন্যতম সহ সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত আইএফএ-কে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে জেলা লিগের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা। আর ১৫ লক্ষ টাকা কন্যাশ্রী কাপের জন্য। কন্যাশ্রী কাপ প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দলগুলি এখনও টাকা পেল না! যতবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, সচিব খালি বলছেন, দেবেন। কিন্তু কবে দেবেন কিছুই জানাচ্ছেন না। রাজ্য লিগের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা সরকার খরচ করেছে। অথচ রাজ্য জেলা লিগের একটা উদ্বোধন হল না। আইএফএ-র অন্যরা কেউ কিছু জানতেই পারল না। সরকার যে আইএফএ-কে নানা ভাবে সাহায্য করছে, তা কেউ জানতেই পারছেন না। কারণ, জেলা লিগ শেষ হতে চলল, রাজ্যের কোথাও একটা হোর্ডিং পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। আমরা আইএফএ-র যে কোনও মিটিংয়ে আসি সিদ্ধান্ত জানার জন্য। আলোচনা করার জন্য নয়।’’
[আরও পড়ুন: সুনীলের বিতর্কিত গোলে মাঠ ছাড়ল কেরালা, বড় শাস্তির মুখে দক্ষিণের ক্লাব]
সৌরভ পাল বলেন, ‘‘এই যে প্রাক্তন ফুটবলারদের ডেকে পরামর্শ নেওয়া হবে, সবই আলোচনায় এসে জানতে পারি। কাদের আলোচনায় ডাকা হচ্ছে, এই তথ্যগুলি আমাদের আগে জানালে সমস্যাটা কোথায়? এদিন প্রাক্তন ফুটবলাররাও তো বললেন, সন্তোষ ট্রফির দলগঠন ঠিক ভাবে হয়নি।’’ সন্তোষ ট্রফির ব্যর্থতা খুঁজতে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সঞ্জয় সেনের নাম নিয়েই মিটিং চলাকালীন আপত্তি জানান সৌরভ পাল। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যর সঙ্গে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং সঞ্জয় সেনের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যকে আড়াল করতেই এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ এরপরই মিটিং ভেস্তে যায়। আইএফএর সহ সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা থেকে উঠে পড়েন মেহতাবরাও। পরে সৌরভ পাল বলছিলেন, ‘‘শুরুতে জানতাম, রাজ্য লিগ হবে নর্থ বেঙ্গলে। ঠিক করে ছিলাম, উদ্বোধনে সবাই যাব। হঠাৎ দেখলাম, মহিষাদলে হয়ে গেল। কেন আমাদের ডাকা হয়নি, দেখানো হচ্ছে জেলার কর্তাদের। অথচ, রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় প্রতিযোগিতার আয়োজক তো আইএফএ !’’
রাজ্য জেলা লিগ নিয়ে এতটাই বিতর্ক তৈরি হয়েছে, যার জন্য প্রতিটি ছত্রে ক্ষোভ জানিয়ে সচিব অনির্বাণ দত্তকে বিশাল তিন পাতার চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরূপ বিশ্বাস, সৌরভ পাল, রাকেশ ঝা এবং নজরুল ইসলাম। দু’জন সহসভাপতি। দু’সহ সচিব। এঁদের চিঠির বক্তব্য হল, ‘রাজ্য সরকারের থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা অনুদান নিয়ে আসার সময় সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে ছিলাম। তাহলে রাজ্য জেলা লিগ নিয়ে আইএফএ কেন এরকম লুকোচুরি খেলছে?’ মোট ৮ টি কারণ উল্লেখ করে আইএফএ সচিবের কাছে বিক্ষোভ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন দুই সহ সভাপতি এবং দুই সহ সচিব। সব মিলিয়ে সন্তোষ ট্রফির ব্যর্থতার পর আইএফএ-তে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে। যার একদিকে সচিব অনির্বাণ দত্ত। আরেকদিকে দুই সহ সভাপতি সহ দুই সহ সচিব।