সুকুমার সরকার, ঢাকা: পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে জল বাংলাদেশের। ক্রমে সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে হেঁশেলের ‘মাস্ট হ্যাভ’ জিনিসটির দাম। এহেন পরিস্থি্তিতে ঢাকার পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ ভারত।
মাত্র আড়াই মাস ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। আর তাতেই বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজারে কার্যত আগুন লেগে যায়। হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। একশোর ঘরে গিয়ে দাঁড়ায় পেঁয়াজের মূল্য। ফলে আমজনতার মনেও অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করে। সামনে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ইদুল আজহা। এমন অবস্থায় সরকার থেকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক হওয়ার কথা বলা হলেও তাতে তারা কর্ণপাত করেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। গত সোমবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষিমন্ত্রক। বুধবার পর্যন্ত ৮ হাজার ৩০০ টন আমদানি করা পেঁয়াজ বাংলাদেশে এসেছে।
বুধবার কৃষিমন্ত্রকের জনসংযোগ আধিকারীক মহম্মদ কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানিয়েছেন, গত সোমবার ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৮ হাজার ৩০০ টন পেঁয়াজ। বাজারে অস্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে আমদানির অনুমতি দেয় কৃষিমন্ত্রক। বিভিন্ন জাতের দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৩৭৫ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে। কেজিতে যা পড়ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা। ফরিদপুরের পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে ৩১০ টাকা থেকে ৩৪০ টাকায়। কেজিতে যা পড়ছে ৬২ থেকে ৬৮ টাকা। রাজশাহীর পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি করা হচ্ছে ৩৭৫ টাকায়, যা কেজিতে পড়ছে ৭৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৩২৫ টাকায়, যা কেজিতে পড়েছে ৬৫ টাকা। অথচ ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরুর আগে এই বাজারেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ‘লালচোখে’ পরোয়া নেই, ভারতীয় সেনাতেই আস্থা বাংলাদেশের!]
এদিকে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর দেশি পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা কমলেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না ক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, যেভাবে দাম বেড়েছে, সেভাবে দাম কমেনি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পেঁয়াজের দাম এখনও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। এ ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের জোর ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ তাঁদের। তবে পাইারি বাজারে দাম কমলেও খুচরো বাজারে এখনও পেঁয়াজের দাম কমার প্রভাব পড়েনি। পাড়ার মুদি দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।
ঢাকার শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ মাজেদ বলেন, “তিন দিন আগেও আমরা পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৯০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ চলে আসায় আজ তা পাইকারিতে বিক্রি করেছি ৫৫-৬০ টাকা দরে। তবে দ্রুতই খুচরো দাম কমে আসবে।” রাজধানীর সূত্রাপুর বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলরাম পোদ্দারের মন্তব্য, “পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসার খবর পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পৌঁছয়নি। আমরা আজ ৯০ থেকে ১০০ কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। দু’দিন আগেও ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আমাদের বেশি দামে কেনা। তাই কম দামে বিক্রি করতে পারি না। তাহলে লোকসান গুনতে হবে।”