তরুণকান্তি দাস: উৎপাদন বাড়ছে। বেড়ে চলেছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু একদিকে চাহিদায় ঘাটতি, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজার ধরায় খামতি এবং দেশীয় বাজারে কম বিক্রি। সব মিলিয়ে সঙ্কটে দেশের তথা বাংলার গর্বের চা শিল্প (Tea Industry)। পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তার নমুনা হল, গত বছর মোট রফতানি হয়েছে মাত্র ১৮০ মিলিয়ন টন। কিন্তু কম করে তিনশো টনের আন্তর্জাতিক বাজার চাই এবং তা ছিলও। সেই বাজারে ধস নামিয়েছে করেনা আবহ। সঙ্গে জুড়েছে চিনের মতো প্রতিযোগী দেশের চ্যালেঞ্জ, যা জিততে নাভিশ্বাস উঠেছে দার্জিলিংয়ের প্রথিতযশা চায়েরও। ইরান এবং ইউরোপের যে দেশগুলোতে ভারতীয় চা একচেটিয়া ব্যবসা করত সেখানেও নানা সমস্যা। ইরানের মতো দেশ থেকে টাকা আনা যদি একটা প্রতিবন্ধকতা হয় তো ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষেত্রে চাই অতি উন্নত প্যাকেজিং এবং অতি কম কীটনাশকের ব্যবহার। সেক্ষেত্রে প্যাকেজিংয়ের দাম যে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বুধবার অ্যাসোসিয়েশনের ১৩৮তম বার্ষিক সম্মেলনে সকলেই কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন বিষয়গুলি দেখার। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বিবেক গোয়েঙ্কা এদিন বলেছেন, “রফতানি যেমন কমেছে তেমনই আমদানি বেড়েছে। দু’টি বিষয়ই উদ্বেগের।” সম্মেলনে ছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা, টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রভাত বেজবড়ুয়া।
[আরও পড়ুন: পেগাসাস থেকে রাজ্যপাল, বাজেট অধিবেশনের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক তৃণমূল]
সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের উদ্বেগের বিষয় হল, কলকাতা, শিলিগুড়ি, অসম হোক বা দক্ষিণ ভারতে, নিলামে চায়ের দাম উঠেছে গত বছরগুলির চেয়ে কম। শিলিগুড়িতে নিলামে ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে প্রায় সাত শতাংশ কম দাম মিলেছে। ১৯১ টাকা কেজিতে যে চা নিলামে বিকিয়েছে ২০২০ সালে, সেটাই মোটামুটি ১৭৭ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। উৎপাদনের ৫০ ভাগেরও বেশি পরিমাণ চা ২০০ টাকার কমে বিক্রি হয়েছে, যা উৎপাদন খরচ তুলে দিতে পারেনি। বাগিচায় যা খরচ হয় তার অর্ধেক যায় শ্রমিকদের পিছনে। যা দেশে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে।
এদিকে ভারতের বাজার ধরতে ঝাঁপিয়েছে নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশ তো বটেই, চিন, ইন্দোনেশিয়া এমনকী কেনিয়া, আর্জেন্টিনাও। চমকে দেওয়ার মতো তথ্য হল, নেপালের প্রায় ১১ হাজার টন চা বঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো সন্নিহিত রাজ্যগুলির বাজার ধরেছে খাতায় কলমে। এর বাইরে চোরাপথে এ দেশের বাজারে ঢুকে পড়া চা তো রয়েছেই। কারণ, সীমান্ত যেখানে ঢিলেঢালা। নেপালের পরই বাজার ধরার দৌড়ে রয়েছে কেনিয়া। আর চিনের চা এত দ্রুত ভারতের বাজারে জাঁকিয়ে বসছে, যা চা শিল্পের ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ।