‘ঈগলের চোখ’-এ শবর ফিরছে আবার স্বমহিমায়৷ তার আগে ধরা গেল শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। রণবীর কাপুরের সঙ্গে কাজ, ফেলুদা বড় না ব্যোমকেশ, নিজের ভুঁড়ি- মন খুলে দিলেন সবেতেই।
সংবাদ প্রতিদিন: প্রথম শবর-ছবি যেহেতু হিট করেছিল, এবারে তাই প্রত্যাশা আরও বেশি৷ চাপে আছেন?
শাশ্বত: চাপে থাকলে কাজ খারাপ হয়৷ আমি যখন কাজ করি, ওইসব ভাবি না৷ যখন কাজ করি হানড্রেড পার্সেন্ট দিই৷ ভাল-খারাপ পরের ব্যাপার৷ দর্শক হিসাবে তো ওরকম জেনারালাইজ করা যায় না৷ অনেক ধরনের দর্শক৷ কোনটা কার ভাল লাগবে, আগে থেকে বলা মুশকিল৷ আমি তাই বুঝি নিজের কাজে মন দাও আর বাকিটা ভুলে যাও৷
সংবাদ প্রতিদিন: ‘ঈগলের চোখ’-এ শবরের কাছে নতুন কী পাবে দর্শক?
শাশ্বত: দেখো, চরিত্রটা তো বদলাতে পারে না৷ কিন্তু একটা ডিফারেন্ট অ্যাঙ্গেল আনা হয়েছে যেটা ইন্টারেস্টিং৷ শবর এই ছবিতে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যায়৷ সে যে কোনও কারণেই হোক! আর এবারে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কোরাপশন আরও ডিটেলে দেখানো হয়েছে৷
সংবাদ প্রতিদিন: আগের বার রহস্যের পাশাপাশি একটা ভালবাসার গল্পও ছিল৷ এবারে তেমন কিছু যোগ হয়েছে?
শাশ্বত: এবারে গল্পটা অনেক বেশি ক্রাইম জড়িয়ে৷ অনেক টাইট, মেদহীন বলা যায়৷
সংবাদ প্রতিদিন: অ্যাকশন কি আগেরই মতো?
শাশ্বত: অ্যাকশন আগের থেকেও বেশি৷ তবে হ্যাঁ, এই রেট-এ অ্যাকশন বাড়লে বিপদ! বছরে একটাই শবর করব আর ওটাই আমার বছরে একবারের শরীরচর্চা৷ (হাসি)
সংবাদ প্রতিদিন: ভুঁড়ি নিয়ে বা ফিট থাকা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে না?
শাশ্বত: এখনও পর্যন্ত না৷ এই রেট-এ পরিচালক খাটালে ভুঁড়ি হওয়ার চান্স কম৷
সংবাদ প্রতিদিন: এবারের লড়াইটা শবর-ব্যোমকেশে বেশি৷ ফেলুদায় তো আবার আগের মুখ হিসেবে ফেরত এলেন৷ আপনার তিনজনের মধ্যে কাকে বেশি পছন্দ? আপনি তোপসেও হয়েছেন, অজিতও করেছেন৷
শাশ্বত: আমার চিরকাল প্রথম পছন্দ ফেলুদা৷ এক নম্বর৷ যেহেতু ফেলুদা পড়ে বড় হয়েছি৷ একটা সময় তোপসের সঙ্গে নিজেকে রিলেট করেছি, কাজেই ফেলুদা আমার কাছে মাথার ওপর ছাতার মতো৷ হিরোর মতো৷ ফেলুদাকে সরানো মুশকিল৷ কলেজে ব্যোমকেশ এসে পড়ল৷ কাজেই সে দ্বিতীয় পছন্দ৷ আর শবর সবে আমি একটা করেছি৷ দ্বিতীয়টা মুক্তি পেতে চলেছে ১২ আগস্ট৷ দ্বিতীয়টাও মানুষের ভাল লাগুক এটাই চাই৷ কিন্তু আবারও বলব প্রথমে ফেলুদা, তারপর ব্যোমকেশ, তারও পরে শবর৷
সংবাদ প্রতিদিন: এবার কি তা হলে বিশ্বাস হচ্ছে যে একার কাঁধে আপনি সিনেমা টানতে পারেন?
শাশ্বত: একা কেউ সিনেমা টানতে পারে না৷ আর এ কথা অ্যাকসেপ্ট করে নিলে দায়িত্ব অনেক বেড়ে যাবে৷ একটা সিনেমা সফল হওয়ার অনেক ফ্যাক্টর থাকে৷ কাজেই একা টানতে পারি- এমন কখনওই মনে করতে চাই না৷ অত বড় দায়িত্ব একা কেন নেব! বাকিরা কি চেক পায় না?
সংবাদ প্রতিদিন: এবারে শবরেও লম্বা মহিলা ব্রিগেড…
শাশ্বত: হ্যাঁ, পায়েল, ঊষসী, জয়া, জুন সবাই আছে৷ আর ছেলেদের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ রোল-এ আছে অনির্বাণ, নিকি আর নন্দ অর্থাৎ গৌরব আর শুভ্রজিৎও আছে৷
সংবাদ প্রতিদিন: গতবারের শবরে এমন অনেকে ছিলেন, যাঁরা এবারে নেই৷ তাঁদের মিস করছেন না?
শাশ্বত: হ্যাঁ, অনেককেই মিস করছি৷ ক্যামেরায় শীর্ষকে ছাড়া তো আমি প্রথম শবর ভাবতেই পারি না৷ স্বস্তিকার অমন অভিনয় ছাড়া প্রথম শবরটা ওরকম হত না৷ তার ওপর ঋত্বিক ছিল৷ খুবই মিস করছি সবাইকে৷ তবে এটাও জানি, কালকে আমি শবর না করলে অন্য ইয়াং কেউ করবে৷ একদিন আমাকেও পাল্টাতে হবে৷ কিন্তু পাল্টে গেলেও দর্শক কি আগেরটা ভুলে যাবে? যাবে না! কাজেই আগের অভিনেতারাও মনে থেকে যাবেন৷
সংবাদ প্রতিদিন: শোনা যাচ্ছে ‘শবর’ পাল্টে কৌশিক সেন হতে পারেন পরবর্তীকালে৷ ইস্যুটা অভিনয় নিয়ে নয়, ফিটনেস নিয়ে৷
শাশ্বত: পরিচালককে জিজ্ঞেস করাই ভাল৷ কেন্দ্রচরিত্রে কে করবেন, সেটা পুরোটাই পরিচালকের সিদ্ধান্ত৷ কেউই চিরকালের জন্য নয়৷ আগেই তো বললাম, আমি না করলে অন্য কেউ করবে৷ কিন্তু প্রথম ‘শবর’টাও কেউ ভুলে যাবে না৷
সংবাদ প্রতিদিন: তা, পাল্টে যাওয়ার পরেও সব্যসাচী চক্রবর্তী তো ফেলুদা হিসাবে আবার ফিরলেন৷ আপনিও সে ছবিতে আছেন৷
শাশ্বত: হ্যাঁ, কিছুদিন আগেই শুটিং করে এলাম বোলপুরে৷ বাবুদা যে কী খুশি হয়েছেন সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এই ছবিতে আমার প্রায় ডবল রোল বলা যায়৷ পঞ্চাশ বছরের ফেলুদাকে নিয়ে বিশেষ কিছু করতে চেয়েছিলেন বাবুদা৷ আর বেণুদাও একদম নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন৷ আর সত্যি সত্যি আমিও বেণুদার কোনও রিপ্লেসমেণ্ট পাইনি৷ একসময় আমি তোপসে করতাম৷ সেই চরিত্রটা এখন সাহেব করছে৷ সাহেব বেশ রোগা হয়েছে এর জন্য৷ এটা দেখতে দেখতে একটা কথাই মনে হচ্ছিল- অভিনেতাদের চেহারা মাঝামাঝি থাকা ভাল৷ জামা খুললে তবেই যেন বোঝা যায়৷ কিন্তু জামাপরা অবস্থায় যেন আসল চেহারাটা বোঝা না যায়৷ যেমন আগে ছিলেন ধরমজি, এখন রণবীর কাপুর৷ ও জামা না খোলা অবধি টের পাওয়া যাবে না কেমন টান টান পেটানো চেহারা!
সংবাদ প্রতিদিন: আপনি তো ‘জগ্গা জাসুস’-এ রণবীরের সঙ্গে কাজ করে এলেন৷
শাশ্বত: এখনও দিন সাতেক মতো কাজ বাকি আছে৷ অনুরাগ একটু লেডব্যাক টাইপের৷ ধীরে-সুস্থে আরামে কাজ করতে ভালবাসে৷ রিলিজ ডেটটা পেলে ও আবার দৌড়বে৷ ‘জগ্গা জাসুস’-এর জন্য এই কিছুদিন আগে আমি প্লেব্যাক করে এলাম হিন্দিতে৷ প্রীতমের স্টুডিওতে ডাক পড়ল৷ অনুরাগও ছিল৷ ও বলল, কথা বলতে বলতে গানটা ঠিক দাঁড়াচ্ছে না৷ তুমি গাও তো৷ আমি তো আঁতকে উঠেছিলাম৷ আমি বড়জোর বাথরুম সিঙ্গার৷ প্লেব্যাক তো বিরাট ব্যাপার৷ অনুরাগ আর প্রীতম মিলে ঠিক করিয়ে নিল৷
সংবাদ প্রতিদিন: পর পর হিন্দি ছবিতে সুযোগ পাচ্ছেন। এবার নিজের ফিটনেস, চেহারাপত্তর নিয়ে আরেকটু খাটবেন না?
শাশ্বত: মেনটেন করছি তো! এই দেখো, আগের মতো মোটা আর নেই৷ মাঝখানে শরীরটা ঠিক ছিল না৷ ওই আর কী!
সংবাদ প্রতিদিন: ‘কাহানি’, ‘জগ্গা জাসুস’-এ অত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র করার পর নিজের রেমুনারেশন টলিউডে বাড়াবার কথা ভাবেননি?
শাশ্বত: না, না৷ এখানে তো মার্কেটটা বাড়েনি৷ একটা ছবি করে প্রোডিউসার পয়সা ফেরত না পেলে সে আমাকে অত টাকা দেবে কী করে? আর আমিই বা কেন হিন্দির কথা ভেবে বাংলায় নিজের দর বাড়িয়ে নেব? সেটা হয় না৷
সংবাদ প্রতিদিন: প্রায় সব ধরনের চরিত্রে আপনি অভিনয় করে ফেলেছেন৷ এখন আর কী রকম চরত্রে অভিনয় করতে ইচ্ছে করে?
শাশ্বত: এবার আমি বোবার চরিত্রে অভিনয় করতে চাই৷ শুধু এক্সপ্রেশন দেব৷ থিয়েটারে ওটা করা খুব শক্ত৷ সিনেমায় তুলনায় একটু সহজ৷ আর ভাল যেটা হবে, ডাবিং-এর কোনও ডেট লাগবে না৷
(সাক্ষাৎকার: শম্পালী মৌলিক, শুটিংস্থল: দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্ন, ছবি: শুভেন্দু চৌধুরি)
The post ‘জগ্গায় প্লেব্যাক করে এলাম’! appeared first on Sangbad Pratidin.