ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ২০১১ সাল, মার্চ মাস। দলের পরাজয়ের তথা রাজ্যে পালাবদলের আঁচ পেয়ে গিয়েছেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য! বিধানসভায় (Assembly) চতুর্দশ বিধানসভার অধিবেশনের শেষ দিন ছিল ২৫ মার্চ। সেদিনের শেষ ভাষণেও যেন দলের পরাজয়ের উদ্বেগ চেপে রাখতে পারেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর গলায়। চেয়েছিলেন, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হোক। শাসক-বিরোধী একসঙ্গে সেই লক্ষ্যে কাজ করুক। তার পরও বিধানসভার ওই দিনের প্রসিডিংস প্রমাণ, বুদ্ধবাবুর ভাষণের পরতে পরতে ধরা রয়েছে এক ভগ্নহৃদয় পরাজিত প্রশাসকের নতকণ্ঠ।
সিপিএমের (CPM) বিরুদ্ধে যে ঝড় উঠে গিয়েছে, তা তাঁর ভাষণেই ধরা পড়েছিল। এই অধিবেশনেই তৎকালীন অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিম ঘোষণা করেছিলেন, দল জিতলেও আর তিনি পরের বিধানসভায় অধ্যক্ষ হিসাবে আসবেন না। সেই কথা বলতে গিয়েই বুদ্ধবাবু বলেছেন তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে প্রবল বিতর্কের কথা। বিতর্কের জেরে সভা বয়কট করেছিল তৃণমূল। সেই অবস্থায় বুদ্ধবাবু অধ্যক্ষকে ধন্যবাদ দিয়ে বলছেন, ‘‘ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের মধ্যে একজন দক্ষ ক্যাপ্টেনের মতো জাহাজ চালিয়েছেন।'' বার বার সংসদীয় গণতন্ত্রকে বাঁচানোর ডাক দিয়ে শাসক-বিরোধী সকলে যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই দাবি রেখেছিলেন বুদ্ধবাবু (Buddhadeb Bhattacharya)। ঠিক এই পথেই বরাবর তাঁর উত্তরসূরি তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চেয়েছেন শাসক-বিরোধী একসঙ্গে বিধানসভায় গঠনমূলক আলোচনায় অংশ নিক। সেই সূত্রে সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী প্রস্তাবে বিজেপিকে তাঁদের পক্ষে সায় দিতে রাজি করিয়ে নিয়েছিলেন মমতা।
[আরও পড়ুন: ‘মায়েরা তো এরকমই হন’, প্যারিসে খোলামেলা রুপোজয়ী নীরজ, দাঁড়ালেন ভিনেশের পাশেও]
২০১১ সালে মার্চের অধিবেশনের ওই শেষ দিনের ভাষণে বার বার বুদ্ধবাবুর গলায় উঠে এসেছে বিধানসভার গণতন্ত্রের (Democarcy) কথা। শাসক-বিরোধী সকলের পক্ষ থেকে যাতে বিধানসভার এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকে সেই কথা উল্লেখ করেছেন সর্বদা। প্রসিডিংসের পাতায় বুদ্ধবাবুর ভাষণে লেখা, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি বিধানসভার অভ্যন্তরেও যাতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরও প্রসারিত হয়, আরও উন্নত হয়। সেই চেষ্টা আমরা সাধ্যমতো করেছি সন্দেহ নেই। সেই দিক থেকে এই চতুর্দশ বিধানসভা সাফল্যের সঙ্গে তাদের কাজ করেছে।’’
[আরও পড়ুন: মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে অবস্থানগত মিল, ভিন্ন মেরুর হয়েও আডবাণীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন বুদ্ধ!]
এর প্রেক্ষিতেই শাসক-বিরোধী বিতর্কের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেও তিনি বলেছেন, ‘‘আলোচনার সময় বিতর্ক হবেই, তা অনিবার্য। গণতন্ত্র মানে বিতর্ক, গণতন্ত্র মানে বিরোধী দলের স্বাধীনতা, সরকারের বক্তব্যকে সমালোচনা করা, বিকল্প প্রস্তাব তুলে ধরা। এটা সবসময় বাঞ্ছনীয়। সেই আলোচনা হয়েছে এখানে, বিতর্কও হয়েছে।''