সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিনের সংক্রমণে বিশ্বরেকর্ড করল ভারত (India)। সোমবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৯০,৮০২ জন। আমেরিকাতেও একদিনে এত সংক্রমণ ঘটেনি। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যে ইতিমধ্যেই ভারত ব্রাজিলকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে। একদিনে মৃত্যুর বিচারে ভারত এখন পৃথিবীর শীর্ষে। সোমবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ১,০১৬। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে ভারতে কি সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে?
এইমস-এর অধিকর্তা ডা. রণদীপ গুলেরিয়া জুন মাসেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করেছিলেন। ফের তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রশ্ন তুললেন। গুলেরিয়া বলেছেন, ভারতে সম্ভবত করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হয়েছে। কারণ, বেশ কিছু জায়গায় সংক্রমণের হার বেশি। মে-জুন মাসে সাধারণত বড় শহরগুলো থেকে সংক্রমণের খবর আসছিল। এখন গ্রামের দিকেও একই ছবি। যে কারণে সংক্রমণের ছবিটা এত দ্রুত বদলাচ্ছে। একইসঙ্গে ক্রমাগত পুনঃসংক্রমণের খবর চিন্তার ভাঁজ ফেলছে চিকিৎসকদের কপালে। পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানার পর এবার খবর মিলেছে, বেঙ্গালুরুতে করোনার পুনঃসংক্রমণ হয়েছে এক মহিলার। দ্বিতীয়বার তাঁর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও খানিকটা কমেছে। তিন সপ্তাহে আইজিজি অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে সেটাও ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা। বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ২৭ বছরের ওই মহিলা জুলাইয়ের শেষে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভরতি হয়েছিলেন। তারপর সুস্থ হয়ে গিয়েও ফের অসুস্থ হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ‘পিতৃপক্ষ’ শেষ হলেই শুরু হবে রাম মন্দির তৈরির কাজ, জানাল ট্রাস্ট]
এর আগে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তেলেঙ্গানার (Telengana) দু’জন। তার একদিন আগে হংকং থেকে দু’বার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরে পশ্চিমবঙ্গে ছ’জনের শরীরে দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাস আক্রমণ করে। তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথায়, একবার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তিনমাসের মধ্যেই দু’জন করোনার কবলে পড়লেন। এতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গড়ে তিন মাস বা ৯০ দিনের মতো সুরক্ষা দিচ্ছে অ্যান্টিবডি। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম, তার ক্ষেত্রে এই ৯০ দিনও কার্যকর হচ্ছে না। তাই সংক্রমণ ফিরে আসার আশঙ্কা থাকছে।
এদিকে ডা. গুলেরিয়া বলছেন, আইসিএমআরের নতুন গাইডলাইনে এখন চাইলেই করোনা টেস্ট করা যাচ্ছে। সেটা সংক্রমণের রোজকার সংখ্যা দেখলেও বোঝা যাচ্ছে। তবে করোনা রোখার মূল মন্ত্রই হল, টেস্টিং, ট্রেসিং, আইসোলেশন। সেই সঙ্গে সুস্থ থাকতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার জরুরি। হাত ধোওয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও প্রয়োজন।
কী কী কারণে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হতে পারেন?
বলা হচ্ছে, ভাইরাসের জিনের গঠনে পরিবর্তন বড় কারণ। রোগ প্রতিরোধের বিষয়টি এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। সাবধানতা অবলম্বন করা দরকারি। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও পরবর্তী কালে বাইরে বেরলে আগের মতোই মাস্ক ব্যবহার, বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহারের বিষয়গুলি মাথায় রাখা প্রয়োজন।
হংকং ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়া যুবকের থেকে নেওয়া নমুনার জিনের বিন্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দু’টি আলাদা ভাইরাল স্ট্রেন বাসা বেঁধেছে তাঁর শরীরে। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রাক্তন প্রধান জেসি গুডম্যান এই বক্তব্যের সমর্থন করে বলেছেন, “আমরা জানতাম যে পুনরায় সংক্রমণের একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে রোগীর দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা তাঁকে পুনরায় সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তবে যদি সাধারণ কোনও সংক্রমণেই প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তা হলে প্রতিষেধকও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে সেই সংক্রমণের কাছে।”
The post সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ছে ভারতে? আশঙ্কা বাড়াচ্ছে পুনঃসংক্রমণ appeared first on Sangbad Pratidin.