নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: ভয়ংকর থেকে ভয়ংকরতর দেশের করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতি। সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাকরণে জোর দিচ্ছে কেন্দ্র। জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র খুব শীঘ্রই স্পুটনিক-ভি (Sputnik-V) বা অন্য সংস্থার করোনা টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ভারতে বর্তমান দু’টি করোনা টিকা – ভারত বয়োটেকের কোভ্যাক্সিন এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই তালিকায় নতুন নাম সংযোজন হতে চলেছে। সূত্রের খবর, এই দৌড়ে এগিয়ে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি। ভারতে ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরির সঙ্গে কাজ করেছে তারা।
দেশে করোনা মোকাবিলায় বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লকডাউনের (Lockdown) পথে না হেঁটে, কীভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা সম্ভব, সেই কৌশল নিয়েই আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে আগাগোড়া প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছিলেন, করোনা পরীক্ষা, রাত কারফিউ, করোনা বিধি পালনের মতো বিষয়গুলির উপরেই। প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে টিকাকরণে গতি আনতে চাইছেন, তখনই দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে টিকার ঘাটতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এ নিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে।
[আরও পড়ুন: ‘দায় আমাদেরও’, ভোটপ্রচারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে আত্মসমালোচনার সুর সোনিয়ার গলায়]
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ টিকা নিয়ে বিশদ তথ্য দিয়েছেন। সময়েই টিকা সরবরাহের সঙ্গে টিকা উৎপাদনের সীমিত ক্ষমতার কথাও ওই বৈঠকে উল্লেখ করেছেন তিনি। ওই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের আর এক আধিকারিক আরও অন্য সংস্থার মতো স্পুটনিক ভি-র মতো টিকাকে ভারতে ব্যবহার করা হতে পারে বলেই জানিয়ে ছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকা স্পুটনিক-ভি’র কার্যক্ষমতা ৯১.৬% বলে ইতিমধ্যেই বিখ্যাত মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যানসেটে’ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৫৯টি দেশে এই টিকা ব্যবহারও করা হচ্ছে। ভারতের ডক্টর রেড্ডিস ল্যাবরেটরিতে রুশ ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। ভারতে ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য তারা আবেদনও করেছে। শুক্রবার দেশের ড্রাগ রেগুলেটর সংস্থার বিশেষজ্ঞ প্যানেল সংস্থার কাছে আরও তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় প্রতি দশজনের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত! বাড়ছে উদ্বেগ]
এদিকে, পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে শুক্রবার সকালেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের নেতৃত্বে করোনা বিষয়ক মন্ত্রী গোষ্ঠী নিজেদের ২৪তম বৈঠক করেছে। এর আগে শেষবার ২৮ জানুয়ারি মন্ত্রীর গোষ্ঠীর বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকে হর্ষ বর্ধন দেশে টিকার ঘাটতি নেই বলেই আকারে ইঙ্গিত বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বলেই জানা গিয়েছে। দেশের করোনা টিকাকরণ কর্মসূচির ভূয়সী প্রশংসা করে হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, “৩ কোটি ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিকে ইতিমধ্যেই করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ভারত টিকা দিয়ে সাহায্য করছে। তাতে ৬ কোটি ৪৫ লক্ষ টিকা, ৮৫টি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। ৩ কোটি ৫৮ লক্ষ টিকা ২৫টি দেশকে বাণিজ্যিক চুক্তিমতো সরবরাহ করা হয়েছে।”
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও তার সিংহভাগ দেশের ১১টি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হলেও তা সব জায়গাতেই হত বলে দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, “দেশের ১৪৯টি জেলায় গত সাত দিনে নতুন করে কোনও করোনা সংক্রমণ হয়নি। আটটি জেলায় ১৪ দিনে, তিনটি জেলায় ২১ দিনে এবং ৬৩টি জেলায় ২৮ দিনে সংক্রমণ নেই।’’