সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বছরশেষে বড় দুঃসংবাদ। বড়দিনের পরই চলে গেলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং (Manmohan Singh Death)। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯২ বছরের এই অর্থনীতিবিদ। মনমোহন সিং-এর নাম বললেই সবচেয়ে আগে যা মনে পড়ে, তা হল তাঁর অর্থনৈতিক সংস্কার বা উদারীকরণ নীতি। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের কাছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দেশের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে তাঁর সম্পর্কে সর্বোচ্চ কংগ্রেস নেতৃত্বের ‘ইয়েসম্যান’ বিদ্রুপ জুটলেও, দেশের অর্থনীতিতে তাঁর মেধার প্রয়োগ প্রশ্নাতীত কৃতিত্ব দাবি করে।
সময়টা নয়ের দশক। সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙনের পর বিশ্বের অর্থনৈতিক মানচিত্রে ঘটে যায় বড়সড় বিপর্যয়। ভারতে তখন নরসিমা রাওয়ের সরকার। কোষাগার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মন্ত্রিসভা। ব্যাঙ্কগুলিতে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতি অক্সফোর্ড ফেরত অর্থনীতিবিদ ডঃ মনমোহন সিংকে দেশের অর্থমন্ত্রকের ভার দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। হতাশ করেননি মনমোহন। মূলত তিন নীতির উপর ভর করে দেশের আর্থিক দুরবস্থা সামলেছিলেন তিনি। পূর্বতন দেশীয় অর্থনীতির জড়তাকে একধাক্কায় কাটিয়ে জোর দেন বেসরকারিকরণ, শিল্পোদ্যোগ, ক্রেতামুখী বাজার চাহিদার উপর। ফলে ত্রিমুখী নীতির পথ ধরে খুলে যায় বিশ্বায়ন ও উদারীকরণ ও বিদেশি বিনিয়োগের দরজা।
তাঁর এই বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের পথ যে নিষ্কণ্টক ছিল, তা তো নয়। বরং উলটোটাই। ধেয়ে এসেছিল একের পর এক সমালোচনা। ভারতের মতো দেশে বেসরকারিকরণকে কখনওই ভালো চোখে দেখা হয়নি। তার উপর বিশ্ববাজারে দেশের দরজা হাট করে খুলে দেওয়ার মতো পদক্ষেপে সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন তাবড় অর্থনীতিবিদরা। কিন্তু চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে সামলেছিলেন ডঃ মনমোহন সিং। একইসঙ্গে টের পাওয়া গিয়েছিল পাঞ্জাবপুত্রের সিংহ-হৃদয়। সেই কৃতিত্বের পথ ধরেই আরও এক টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন কংগ্রেসের সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিত্ব - মনমোহন সিং। দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে বসার সুবাদে নিজের আর্থিক সংস্কারের সুদূরপ্রসারী প্রয়োগ ঘটাতে দ্বিধা করেননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটা সফল, তা নিয়ে অবশ্য বিস্তর বিতর্ক আছে। সমালোচকদের একাংশ মনমোহন সিংয়ের উত্থানকে ভালো চোখে দেখেননি মোটেই। এমনকী, তাঁকে 'অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার' বলতেও ছাড়েননি অনেকে। অথচ সময়ের ফেরে দেশের শাসনভার যখন বিপরীত শিবিরের হাতে, তখনও সেই 'অ্যাকসিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার'-এর পথ ধরেই হাঁটছে 'অতুল্য ভারত'! প্রশ্ন হল, মোদি জমানার ঝাঁ চকচকে বিজ্ঞাপন কি সত্যিই আড়াল করতে পারে এপথের প্রকৃত দিশারী মিতবাক মনমোহনকে?