সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুর্ঘটনায় প্রাণহানি মাত্র আড়াই বছরের এক শিশুর। দুধের সন্তানকে হারিয়ে আকুল বাবা-মা। চোখের সামনে ছেলেকে আর কোনওদিন দেখতে পাবেন না তাঁরা। তবে ছোট্ট যশের অঙ্গের মাধ্যমে প্রাণ ফিরল একের অঙ্গে বাঁচল সাত শিশু। শুধু দেশ নয় রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দুই শিশুও পেল তার অঙ্গ।
বছর আড়াইয়ের খুদে যশ সঞ্জীব ওঝা, বাবা-মায়ের সঙ্গে সুরাটের (Surat) ভাতারে বসবাস করত। গত ৯ ডিসেম্বরে এক প্রতিবেশীর দোতলা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে খেলা করছিল সে। আচমকাই পড়ে যায় নিচে। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল যশের শরীর। তাকে উদ্ধার করে আম্রুতা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় চিকিৎসা। টানা পাঁচদিন ধরে চলে যমে-মানুষ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে ১৪ ডিসেম্বর সব শেষ। সমস্ত রকম চেষ্টাকে মিথ্যে প্রমাণ করে হার মানে ছোট্ট যশ। চিকিৎসকরা জানান, ব্রেন ডেথ (Brain Death) হয়েছে তার।
[আরও পড়ুন: টেলিকম ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে উদ্যোগ, ‘স্বচ্ছ’ পদ্ধতিতে স্পেকট্রাম নিলামে ছাড়পত্র কেন্দ্রের]
সে খবর পাওয়ামাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন যশের বাবা-মা। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা তাঁদের। ঠিক সেই সময় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী নীলেশ মান্ডেলওয়ালা যশের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। তিনিই ওই দুধের শিশুর বাবা-মাকে অঙ্গদানের (Organ Transplant) জন্য রাজি করান। তাঁর কথামতোই রাজি হয়ে যান যশের বাবা-মা। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন অন্য শিশুদের মধ্যেই বেঁচে থাকবে যশ। হাসপাতালকে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথাও জানান।
এরপরই যশের হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুস তড়িঘড়ি সুরাট বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে চেন্নাইয়ের এমজিএম হাসপাতালে সেগুলি পৌঁছে দেওয়া হয়। ১ হাজার ৬১৫ কিলোমিটার রাস্তা যেতে সময় লাগে মাত্র ১৬০ মিনিট। সেথানে রাশিয়ার শিশুর শরীরে প্রতিস্থাপিত হবে হৃদযন্ত্র। ফুসফুস পাবে ইউক্রেনের শিশু। এই দুই শিশুই বছরখানেক ধরে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যশের কিডনিতে বাঁচবে সুরেন্দ্রনগরের বছর তেরো এবং সতেরোর দুই নাবালিকা। লিভার পাবে বছর দুয়েকের এক শিশু। যশের কর্নিয়া সুরাটের লোকদৃষ্টি চক্ষু ব্যাংকে দান করা হয়েছে। কঠিন হলেও সন্তানের না থাকা মেনে নিতে হবে যশের বাবা-মাকে। তবে অন্য সাত শিশুর শরীরে কোনও না কোনও অঙ্গের মাধ্যমে বাঁচবে যশ, সেটাই এখন সান্ত্বনা তাঁদের।