সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একটানা ছ'বছর পাকিস্তানে ছিল পহেলগাঁও হামলার অন্যতম চক্রী আদিল আহমেদ ঠোকরে। স্টুডেন্ট ভিসায় পড়শি দেশে গিয়ে লস্কর-ই-তইবার পাশাপাশি পাক সেনার কাছেও প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে তিন-চারজন পাক সঙ্গীকে নিয়ে দুর্গম এলাকা দিয়ে সীমান্ত টপকে ঘরে ফিরেছিল কাশ্মীরের আদিল। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, তার এই সঙ্গীরাই পহেলগাঁওয়ের বৈসরন ভ্যালিতে হামলা চালিয়ে প্রাণ কেড়েছে ২৬ জনের। সেই আদিল এখনও অধরা। তবে তার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। স্কেচ প্রকাশ করে শুরু হয়েছে খোঁজ।
ইতিমধ্যে পহেলগাঁওয়ে হামলাকারীদের স্কেচ প্রকাশ করেছে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ। চার সন্দেহভাজনের নামও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে আলি ভাই ওরফে তালহা (পাক নাগরিক), আসিফ ফৌজি (পাক নাগরিক), আদিল হোসেন ঠোকরে (অনন্তনাগের বাসিন্দা) এবং আহসান (পুলওয়ামার বাসিন্দা)। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আদিলের হাত ধরেই ভূস্বর্গে ঢুকেছিল তালহা এবং আসিফ। তাদের গোপন ডেরায় রেখেছিল ২০১৮ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় পাকিস্তানে যাওয়া অনন্তনাগের বাসিন্দা আদিল ঠোকরেই। কীর্তিমান আদিলের কীর্তি কম নয়!
সীমান্ত পার করার আগে থেকেই কট্টর মৌলবাদী হিসেবে নিজের পরিচয় তৈরি করে ফেলেছিল সে। সীমান্তের ওপারের একাধিক নিষিদ্ধ জেহাদি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। তারপর স্টুডেন্ট ভিসায় পাকিস্তানে 'এন্ট্রি'। গোয়েন্দারা বলছে, সে দেশে ঢোকার পর আটমাসের জন্য কার্যত গায়েব হয়ে গিয়েছিল আদিল। ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টও মিলছিল না। এই সময় পরিবারের সঙ্গেও কোনওরকম যোগাযোগ রাখত না। বিজবেহরায় আদিলের বাড়িতে নজর রেখেও কোনও লাভ হয়নি। গোয়েন্দাদের ধারনা, ওই আট মাসে পাক সেনা এবং জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির কাছ থেকে তালিম নিয়েছে সে। নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে হ্যান্ডলারদের সঙ্গে। ওই আটমাস ধরে তার মগজধোলাইও হয়েছিল লাগাতার। যার ফল বৈসরন 'টার্গেট কিলিং'!
অবশেষে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরের দুর্গম পাহাড়ি খাড়াই পথ, বনাঞ্চল পেরিয়ে এদেশে ঢোকে আদিল। সঙ্গে ছিল চার-পাঁচজন পাক জেহাদি। সেনা-পুলিশ-গোয়েন্দাদের চোখ এড়াতে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল বা বিচ্ছিন্ন গ্রামে আশ্রয় নিত তারা। ঘনঘন ডেরা বদল করত। সম্প্রতি ডেরা বদল করে অনন্তনাগ জেলায় ঢোকে সে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে পহেলগাঁও এই অনন্তনাগ জেলার মধ্যেই অবস্থিত। ডেরা বদলের সময় খিস্তওয়ার কাছে আদিলের খোঁজ পেয়ে যায় গোয়েন্দারা। তারপরেও অবশ্য শেষরক্ষা হল না। এদিকে কাশ্মীরের ঢোকার সময় আদিলের সঙ্গী ছিল বেশ কয়েকজন। যাদের মধ্যে অন্যতম হাসিম মুসা ওরফে সুলেমান। এই সুলেমানই পহেলগাঁও হামলার মূল চক্রী বলে মনে করছে গোয়েন্দারা।
কাশ্মীরে ঢোকার পর আবার 'আন্ডারগ্রাউন্ড' হয়ে গিয়েছিল আদিল। মনে করা হচ্ছে, সেই সময় স্লিপার সেল সক্রিয় করা, পাক অনুপ্রবেশে সহায়তা, তাদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করার মতো দায়িত্ব সামলাত আদিল। এই সময় আরেক হামলাকারী পাক নাগরিক আলি ভাই ওরফে তালহা ভাইও ছিল তার আশ্রয়ে। স্থানীয়দের মগজ ধোলাই করে দলে টানার পাশাপাশি পুরোদমে চলছিল রেইকিও। কোথায় হামলা করলে প্রাণহানি বেশি হবে, সেনার চোখ এড়িয়ে সহজেই কেড়ে নেওয়া যাবে নিরীহ প্রাণ, অপারেশন শেষ করে কীভাবে পিঠটান দেওয়া যাবে, সেই ছক কষা হচ্ছিল গোপন ডেরায়। কাকতালীয়ভাবে এই সময় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় 'মিনি সুইজারল্যান্ড' বৈসরন ভ্যালি। সেখানে নিরাপত্তাও ছিল ঢিলেঢালা। পৌঁছনোর পথও দুর্গম। তাই সহজ টার্গেট হিসেবে বেছে নেওয়ায় হয় পহেলগাঁওয়ের এই এলাকাকে। মঙ্গলবার দুপুরে চলে 'হিন্দু নিধন যজ্ঞ'। এখন সেউ 'মৃত্যুদূতে'দের খোঁজেই হন্যে বাহিনী। মাথার দাম ধার্য হয়েছে ২০ লক্ষ টাকা।