সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর হুঁশিয়ারি নয়, ২০২৬-এ মাওবাদ মুক্ত ভারতের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে এবার কিছুটা নরম হতে দেখা গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। শনিবার ছত্তিশগড়ে এক সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মাওবাদীদের 'ভাই' সম্বোধন করে অস্ত্রত্যাগের অনুরোধ জানালেন শাহ। সুর নরম করে জানালেন, 'একজন মাওবাদীর মৃত্যু হলেও আমরা আনন্দিত হই না।'
একটা সময় মাওবাদীদের 'দেশদ্রোহী' বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অমিত শাহ। তবে শনিবার কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দান্তেওয়াড়ায় ওই সরকারি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "আপনারা আমাদের নিজেদের লোক। যখন কোনও মাওবাদী মারা যান, আমরা কেউই খুশি হই না।" এর পরই তাঁদের ভাই সম্বোধন করে তিনি বলেন, "নকশাল ভাইদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা অস্ত্রসমর্পণ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন।"
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওবিরোধী অভিযান আরও গতি পেয়েছে। ২০২৪ সালে বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজারেরও বেশি, পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেন ৮৩৭ জন। এরপর চলতি বছরে মাত্র ৩ মাসে এখনও পর্যন্ত ১৩০ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র বস্তার রেঞ্জে সংখ্যাটা ১১০। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো চাপে পড়েছে মাওবাদীরা। তাঁদের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে, মাওবাদীরা সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় রাজি। তবে সরকারকে অভিযান বন্ধ করতে হবে। তাহলেই যুদ্ধবিরতিতে হাঁটবে মাওবাদীরা। তবে সরকার মাওবাদীদের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে এমন কোনও বিবৃতি সামনে আসনি। ফলে বলাই যায়, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান জারি থাকছে। এহেন পরিস্থিতিতেই শনিবার ছত্তিশগড়ের দান্তেওয়াড়া জেলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই বার্তা নিশ্চিতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
এই ঘটনায় ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, আসলে সরকার বুঝতে শুধুমাত্র দমন নীতি অবলম্বন করলে ক্ষণিকের তরে তা ঠেকিয়া রাখা যাবে ঠিকই তবে, মাও সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল হবে না। এর একমাত্র উপায় হল বিদ্রোহীদের বুঝিয়ে মূল সমাজের স্রোতে ফেরানো। যা সম্ভব শুধুমাত্র উন্নয়ন দ্বারা। সে কথাও এদিন উঠে আসে শাহের মুখে। তিনি বলেন, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় উন্নয়নে বদ্ধপরিকর সরকার। অস্ত্র দিয়ে মাওবাদীরা তা ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কোনও মাওবাদী আত্মসমর্পণ করলে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার তাঁকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে, এবং তাঁরা সমাজের উন্নয়নেও শামিল হতে পারবেন বলে জানান শাহ।