shono
Advertisement

তুচ্ছ আর্থিক বাধা, হেঁটে কেদারনাথের পথে ঠাকুরনগরের দুই যুবক

নেশামুক্ত সমাজ গড়ে তোলার বার্তা নিয়ে কেদারনাথ যাত্রা ওই দুই যুবকের।
Posted: 10:49 AM Jul 02, 2022Updated: 10:49 AM Jul 02, 2022

সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কেদারনাথ দূর হ্যায়, যানা জরুর হ্যায়। মে মাসের শুরুর দিকের ঘটনা। ঠাকুরনগরের করোলার এক চায়ের ঠেকে আড্ডা দিচ্ছিলেন জনাপাঁচেক যুবক। হঠাৎ সেই সময় কেউ একজন বলে উঠলেন, “বাবা কেদারনাথের (Kedarnath) দর্শন করতে ইচ্ছে করছে রে খুব।” কিন্তু সকলের সব ইচ্ছে যে পূরণ হয় না। নিম্ন মধ্যবিত্তের ঘরে কত স্বপ্ন যে অভাবের শিলনোড়ায় থেঁতলে যায়, তার খোঁজ কজনই বা রাখে! তবে ইচ্ছাশক্তি, জেদে ভর করে অনেকেই যে আবার খড়কুটোর সাহায্যেও ভাসতে ভাসতে ঠিক পার হয়ে যান বৈতরণী।

Advertisement

সেইভাবেই দিনকয়েক পর সেই বৈঠকী আড্ডায় প্রস্তাব রাখলেন বছর তিরিশের আঁকার শিক্ষক সৌগত বিশ্বাস। “তারকেশ্বরে যেমন হেঁটে হেঁটে যায়, চল না আমরা কেদারনাথেও সেভাবে যাই।” মুহূর্তের ভ্যাবাচ্যাকা কাটিয়ে একজন প্রশ্ন করলেন, “তুই কি খেপেছিস? ইয়ার্কি করছিস, না সিরিয়াস?” উত্তর দিতেই যেন বন্ধুদের কাছে খোরাক হয়ে উঠলেন সৌগত। কেউ বললেন, পাগল, কেউ বা আবার বললেন, রাতে ঘুম হয়নি নাকি রে? ব্যতিক্রম ছিলেন একজন। পেশায় অটোচালক সুমন মণ্ডল বললেন, “চল ভাই। আমিও যাব।”

[আরও পড়ুন: পয়গম্বরকে ‘অসম্মান’! ভেঙে ফেলা হল স্যামসংয়ের বিলবোর্ড, অগ্নিগর্ভ পাকিস্তানের করাচি]

সেই শুরু। তারপর থেকেই মোবাইল হাতে চলতে থাকল হোমওয়ার্ক আর রিসার্চ। মোটামুটি ধারণা পাওয়া গেল যে হাঁটতে হবে প্রায় ১,৯০০ কিলোমিটার। এরপর ছিল কিছু টাকাপয়সার ব্যবস্থা করা। জমানো টাকা ও কিছু শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে জড়ো হল দশ হাজার টাকা। তবে শুধু আর্থিক সমস্যাই তো নয়। রাস্তাঘাটে আরও কিছু ঝুটঝামেলাও হতে পারে। এই ভেবে স্থানীয় বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর ও সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করলেন দু’জন। লিখিয়ে নিলেন সার্টিফিকেট। যাতে পথে কোনও সমস্যায় পড়লে স্থানীয় প্রশাসনকে সেই চিঠি দেখিয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসা যায়।

৬ জুন দু’জন রওনা দিলেন কেদারনাথের উদ্দেশে। বাংলা ছেড়ে একে একে পার করেছেন ঝাড়খণ্ড, বিহার। শুক্রবার বিকেলে ঢুকে গিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ। রোজ গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার হাঁটছেন দু’জন। সৈয়দ রাজায় হাঁটতে হাঁটতে ফোনে কথা বলার সময় বেরিয়ে এল তাঁদের এই ‘উদ্ভট খেয়াল’-এর রহস্য। “আমরা দু’জনই ভোলেবাবার চ্যালা। সবাইকে দেখতাম ফেসবুকে অমরনাথ, কেদারনাথ যাত্রার ছবি দিতে। সেই দেখেই ইচ্ছেটা হয়েছিল। কিন্তু আর্থিক সাচ্ছল্য ছিল না। তাই ভাবলাম হাঁটা লাগাই। তারপর ঠিক করলাম, হেঁটে যখন যাবই, যদি সঙ্গে কোনও সামাজিক কাজও করা যায়। তাই নেশা বর্জন করুন, নেশামুক্ত সমাজ গড়ে তুলুন এই স্লোগানকে সামনে রেখেই হাঁটতে থাকলাম।”

পথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীর্থযাত্রীদের দেখে রাতে থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন অনেকে। তবে বিহারে থাকাকালীন বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে সৌগত-সুমনকে। কোনও থাকার জায়গা না পেয়ে দোভি পুলিশ স্টেশনে। রাতটুকু থাকার আরজি করতেই আইসি বলেছিলেন, “এটা কি ধরমশালা? ভাগো ইঁয়াহাসে।” তারপর কখনও কোনও হোটেল, কোনওদিন বা পেট্রল পাম্প। রাতটুকু কাটিয়ে আবার পরদিন হাঁটা। রোজই হাঁটার মাঝে চেষ্টা করতেন কোনও হাসপাতাল খুঁজতে। সেখানে গিয়ে এনএস স্যালাইন চেয়ে চালান করে দিতেন পেটে। তাতে নাকি সারাদিন হাঁটার জন্য শক্তি পাওয়া যায়। বিহারে এক ডিসপেনসারি থেকে ২৮ টাকা করে দু’টি বোতল কিনতে হলেও বাকি সবাই দিয়েছে বিনামূল্যেই। কেউ হাতে কিছু টাকাও গুঁজে দিচ্ছেন। এভাবেই পাগলাবাবার ভক্তরা এগিয়ে চলেছেন কেদারনাথের দিকে। মনে অদম্য জেদ, দৃঢ় সংকল্প আর বাবার উপর অগাধ বিশ্বাস। মুখে স্লোগান, ‘কেদারনাথ দূর হ্যায়, যানা জরুর হ্যায়।’

[আরও পড়ুন: ‘জোর করে সাঁতারের ক্লাসে নিয়ে না আসলেই হত’, আক্ষেপ হাওড়ায় সুইমিং পুলে ডুবে মৃত শিশুর মায়ের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement