সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য বকেয়া মেটাচ্ছে না কেন্দ্র। অবিলম্বে সেসব বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে একাধিকবার রাজ্য সরকারের তরফে দরবার করেও ফল মেলেনি। সেই সবের সঙ্গেই জিএসটির (GST) ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য কয়েক হাজার কোটি টাকার বকেয়া হয়েছে। সোমবার কেন্দ্র সরকার জুন মাসে রাজ্যগুলির প্রাপ্য জিএসটি ক্ষতিপূরণের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলার প্রাপ্য বাকি ১,৬৩৭ কোটি টাকা।
বাংলার (West Bengal) এই হিসেব ছাড়াও দেখা যাচ্ছে বিরোধী রাজ্যগুলিরই বকেয়া সবচেয়ে বেশি। সোমবার থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানেই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায় (Sougata Roy) লিখিত প্রশ্নের মাধ্যমে জিএসটি বাবদ রাজ্যগুলির বকেয়ার হিসাব জানতে চান। তারই জবাবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্যগুলির জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ বকেয়া টাকার হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে। একঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেই তালিকা –
- বিজেপি শাসিত অসমের বকেয়া ৩৮৬ কোটি টাকা
- দিল্লির বকেয়া ২৪১৫ কোটি টাকা
- অন্ধ্রপ্রদেশের বকেয়া ১৩৭১ কোটি টাকা
- মধ্যপ্রদেশের বকেয়া ১৪৫২ কোটি টাকা
- মহারাষ্ট্রের বকেয়া ৪১৮৩ কোটি টাকা
- ওড়িশার বকেয়া ১০৫২ কোটি
- তামিলনাড়ুর বকেয়া ২৪৯৩ কোটি
- তেলেঙ্গানার বকেয়া ১১৩৪ কোটি
- উত্তরপ্রদেশের বকেয়া ২৪১৭ কোটি
- উত্তরাখণ্ডের বকেয়া ৬৮৭ কোটি টাকা
এই তালিকাতেই স্পষ্ট, বিরোধী রাজ্যগুলির সবচেয়ে বেশি বকেয়া আটকে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যার নিরিখে বকেয়া অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় কম। তবে এই বিপুল অঙ্কের বকেয়া কবে রাজ্যগুলিকে মেটানো হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছুই জানায়নি কেন্দ্র।
[আরও পড়ুন: ‘BJP’র ক’জন বিধায়ক আছে নিজেরাও জানে না’, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়ে কটাক্ষ অভিষেকের]
বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) অভিযোগ, শুরু থেকেই বাংলার সঙ্গে কেন্দ্রের মোদি সরকারের আচরণ বিমাতৃসুলভ। কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বিপুল অঙ্কের বকেয়া টাকার পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের টাকাও আটকে রাখা হয়েছে। এই টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee) সরব হলেও কেন্দ্রকে কোনও সদর্থক ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের রিপোর্ট জানাল শুধুমাত্র জুন মাসে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের জিএসটি বাবদ বকেয়া ১,৬৩৭ কোটি টাকা।
সংসদের বাদল অধিবেশন জিএসটি ইস্যুতে তপ্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বিরোধীরা জিএসটি ইস্যুতে যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাবে, তা প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এদিন একডজনের বেশি পণ্য ও পরিষেবায় জিএসটি বৃদ্ধি ও নতুন করে জিএসটি বসানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে কেন্দ্র। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে আমজনতাকে অসুবিধার মধ্যে ফেলা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তার মধ্যে রাজ্যগুলির বকেয়া জিএসটি ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও সামনে এল।
[আরও পড়ুন: ‘এক ডাকে অভিষেক’-এ ব্যাপক সাড়া, একমাসে জমা পড়ল ৫০ হাজার অভিযোগ]
এদিকে, জুন মাসেই রাজ্যগুলির জিএসটি ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির প্রথম ৫ বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। বিরোধী রাজ্যগুলির মেয়াদ আরও বৃদ্ধির দাবি জানালেও কেন্দ্র এই নিয়ে এখনও নীরব। এদিন লোকসভায় অর্থমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ প্রসঙ্গে বলেন, কয়েকটি রাজ্য জিএসটি ক্ষতিপূরণের মেয়াদ ২০২২-এর জুনের পরও বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছে। এই বিষয়ে বলা হয়েছে যে সংবিধান (একশত এবং প্রথম সংশোধন) আইন, ২০১৬-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী, সংসদ আইনের মাধ্যমে পণ্য ও পরিষেবা কর কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রথম পাঁচ বছরের জন্য জিএসটি প্রয়োগের কারণে রাজস্বের ক্ষতির জন্য রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।