সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের কর্মজীবন শেষ হচ্ছে আগামী ১০ নভেম্বর। তবে আগামী দুদিন শনি ও রবিবার হওয়ায় শুক্রবার ছিল তাঁর শেষ কর্মদিন। ফলে এদিন বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হল বিচারপতিকে। সেখানেই কপালে হাত ঠেকিয়ে সকলকে নমস্কার করলেন প্রধান বিচারপতি। জানালেন, "কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।" একইসঙ্গে জানালেন, "আগামিকাল থেকে আর ন্যায়বিচার দিতে পারব না। কিন্তু আমি সন্তুষ্ট।"
২০২২ সালের ৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হলেও ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন সেই ২০১৬ সাল থেকে। বিচারপতি হিসেবে এই ৮ বছরের কর্মজীবনে বহু জটিল মামলায় কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। দিয়েছেন একাধিক ঐতিহাসিক রায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোপনীয়তার অধিকার, অযোধ্যা মামলা, শবরীমালায় মহিলা প্রবেশের অনুমতি প্রভৃতি। শুক্রবার প্রধান বিচারপতির বিদায় সম্ভাষণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বলের মতো আইনজীবীরা। সেখানে দেশের বিচারবিভাগে চন্দ্রচূড়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন আইনজীবীরা। চলে হালকা রসিকতাও।
এদিন শীর্ষ আদালতে কর্মজীবনের শুরুর দিনের কথা স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, "তরুণ বয়সে এই আদালতে আসতাম। খুঁটিয়ে দেখতাম এই আদালত আর আদালতের এই দুটো পোট্রেট। এর পর আজ রাতে ভাবছিলাম, দুপুর ২ টোয় আদালত খালি হয়ে যাবে, আমি নিজেকে স্ক্রিনে দেখব। আপনাদের সবার উপস্থিতিতে আমি অভিভূত। আমরা কাজ করব আবার চলেও যাব। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থাকবে।" চন্দ্রচূড়ের পর দেশের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেবেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ও প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু রায়।
১. গোপনীয়তা মৌলিক অধিকার: ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট শীর্ষ আদালত গোপনীয়তার অধিকারকে সংবিধানের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করে। আদালত জানায়, এই অধিকার জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার থেকে এসেছে।
২. শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশাধিকার: ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেরলের শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বলা হয়, হিন্দু পূণ্যার্থী লিঙ্গ নির্বিশেষে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন। মহিলাদের সেই অধিকার না দেওয়াটা সংবিধান বিরোধী।
৩. রাম মন্দির মামলা: ২০১৯ সালের এই শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্ত সাড়া ফেলে দেয় গোটা দেশ। শতাব্দী প্রাচীন বিতর্কিত জমি মামলায় শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয়, বিতর্কিত ওই জমিতে রাম মন্দির গড়ার অনুমতি দেওয়া হয় হিন্দু পক্ষকে। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, মসজিদ তৈরির জন্য সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে জমি দেবে সরকার।
৪. ইলেক্টোরাল বন্ড: ২০১৮ সালে মোদি সরকারের চালু করা নির্বাচনী বন্ড নীতিকে ২০২৪ সালে অসাংবিধানিক বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এই নিয়মের ফলে নাম পরিচয় গোপন কোনও রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে পারত বেসরকারি সংস্থাগুলি। অভিযোগ ওঠে এর মাধ্যমে বেআইনিভাবে সুবিধা নিচ্ছিল সংস্থাগুলি।
৫. ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার: ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সম্পত্তি সরকার চাইলেই অধিগ্রহণ করতে পারে না সরকার। জনতাকে অন্ধকারে রেখে রাতারাতি উৎখাত প্রক্রিয়ায় হঠাৎই ভিটে-মাটি ছাড়া হয়ে অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষ। এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রয়োজন তথা জনকল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে সরকারকে।