সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নবনির্মিত সংসদ ভবন নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। অনেকেই বলছেন, ভবন উদ্বোধন বিতর্ক আসলে চব্বিশের শক্তিপরীক্ষা। ভারতীয় গণতন্ত্রের নতুন শক্তিপীঠে জল মাপছে বিজেপি ও কংগ্রেস-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। এহেন প্রেক্ষাপটে এবার ‘ধর্মদণ্ড’ সেঙ্গল নিয়ে তুঙ্গে কং-বিজেপি তরজা।
ইতিহাস বলছে, স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে লর্ড মাউন্টব্যাটনের হাত থেকে এই ‘ধর্মদণ্ড’ পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর হাতে তুলে দেন সাদিয়াপা স্বামী। তিনি ছিলেন তামিলনাড়ুর তিরুভাদুথুরাই মঠের প্রধান পুরোহিতের সহকারী। বলা হয়, ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন পণ্ডিত নেহেরুকে প্রশ্ন করেন, ভারত যে স্বাধীনতা পাচ্ছে তার প্রতীক কী হবে? উত্তর খুঁজতে তখন দেশের শেষ গভর্নর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর দ্বারস্থ হন নেহেরু। নেহরুকে এই রাজদণ্ডের কথা প্রথম বলেন। তামিলনাডুর রাজপরিবারের রীতি অনুযায়ী, নতুন রাজার অভিষেকের সময় হাতে রাজদণ্ড তুলে দেওয়া হয় তাঁর হাতে। যার সূত্রপাত হয়েছিল সেই চোল রাজাদের শাসনকাল থেকে। সেই প্রথা অনুযায়ী রাজাগোপালাচারী নেহেরুকে এই ধরনের দণ্ড ব্রিটিশদের হাত থেকে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পণ্ডিত নেহেরুর সেই পরামর্শ বেশ পছন্দ হয়, এবং সেই রাজদণ্ড বানানোর দায়িত্বও পড়ে তাঁর কাঁধেই। ‘রাজাজি’ তামিলনাড়ুর মঠ ‘তিরুভাদুথুরাই আথিনাম’-এর গুরুকে সেটা তৈরির দেন। অবশেষে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তৈরি হয় সেঙ্গল।
[আরও পড়ুন: আয়কর মামলায় বড় ধাক্কা গান্ধীদের, সোনিয়া-রাহুলদের আরজি খারিজ হাই কোর্টে]
এতদিন মিউজিয়ামে থাকা ঐতিহাসিক সেই ‘সেঙ্গল’ এবার সুপ্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে নতুন সংসদ ভবনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) আগামি রবিবার নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন ওই ‘ধর্মদণ্ড’ প্রতিষ্ঠা করবেন স্পিকারের আসনের ঠিক পাশে। পাঁচ ফুট উঁচু সেঙ্গলের মাথায় রয়েছে ‘নন্দী’ ষাঁড়। যা ন্যায়বিচারের প্রতীক।এছাড়া, ধর্ম ও রাষ্ট্রক্ষমতার মেলবন্ধনের চিহ্নও মনে করা হয় সেঙ্গলকে।
অবশ্য কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, মোদির নজরে ‘তামিল ইলাম’। তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সেঙ্গলকে হাতিয়ার করছেন তিনি। তিনি আরও দাবি করেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই যা থেকে মনে হতে পারে স্বাধীনতা এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে লর্ড মাউন্টব্যাটনের হাত থেকে এই ‘ধর্মদণ্ড’ নেহেরু হাতে নিয়েছিলেন। তবে এমনই একটি দণ্ড যে নেহেরুকে দেওয়া হয়েছিল তা অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন।
এনিয়ে কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে তাঁর তোপ, “ভারতীয় সংস্কৃতিকে কেন এতটা ঘৃণা করে কংগ্রেস? স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পণ্ডিত নেহেরুকে শৈব মঠের ওই পবিত্র দণ্ডটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটিকে নেহেরুর ছড়ি মনে করে জাদুঘরে রেখে দেওয়া হয়।”