সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সভাপতি নির্বাচনের আগে বিরাট ধাক্কা খেল কংগ্রেস। দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ (Ghulam Nabi Azad)। শুধু সব পদ ছাড়াই নয়, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আগে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে রীতিমতো বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন তিনি। আজাদের দাবি, রাহুল সহ-সভাপতি হওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র ভেঙে গিয়েছে। যে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ ইউপিএ (UPA) সরকার সফল হয়েছিল, সেই সিনিয়রদেরই উপেক্ষা করেছেন রাহুল।
বস্তুত নিজের ইস্তফাপত্রে রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন তিনি। আজাদের মতে দেশে কংগ্রেসের বর্তমান দুর্দশার জন্য মূলত রাহুলই দায়ী। সোনিয়াকে (Sonia Gandhi) লেখা চিঠিতে আজাদ দাবি করেছেন, “২০১৩ সালে রাহুল গান্ধী দলের সহ-সভাপতি হওয়ার পরই সব সিনিয়রকে কোণঠাসা করা হয়েছে। বদলে অনভিজ্ঞ ধান্দাবাজরা দল চালাচ্ছেন।” বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পদত্যাগপত্রে দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে ইউপিএ সরকারের হারের অন্যতম কারণ, রাহুল গান্ধীর অপরিণতমনস্কতা এবং ছেলেমানুষি। যেভাবে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের পাশ করানো একটি অর্ডিন্যান্স প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন, তাতেই প্রচারের হাতিয়ার পেয়েছিল বিরোধীরা।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য: হাই কোর্টে ধাক্কা, রোদ্দুর রায়ের আবেদন খারিজ বিচারপতির]
এখানেই থামেননি আজাদ। দীর্ঘ চিঠিতে তিনি আরও দাবি করেছেন, “২০১৪ সালের পর রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) নেতৃত্বে কংগ্রেস দুটি লোকসভা নির্বাচনে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে। ৪৯টি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৩৯টি হেরেছে। এর মধ্যে কংগ্রেস নিজের দমে মাত্র ৪টি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে জিতেছে। আর ৬ বার জোটসঙ্গীদের সঙ্গে ক্ষমতায় এসেছে। দুঃখজনকভাবে আজ কংগ্রেস মাত্র দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়। আর দুটি রাজ্যে শাসক জোটের প্রান্তিক শক্তি।” আজাদ বলছেন, “২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পর দলের অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। এর মধ্যে রাহুল দলকে বিপদে ফেলে ইস্তফা দিলেন। তার আগেই অবশ্য দলের সেইসব সিনিয়র নেতাদের তিনি অপমান করে ফেলেছেন, যাঁরা নিজেদের জীবন দিয়ে দিয়েছেন দলের হয়ে।”
জি-২৩ নেতাদের রাহুলপন্থীরা যেভাবে আক্রমণ করেছেন, সেটা নিয়েও সরব হয়েছেন আজাদ। শেষে তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, “নেতৃত্বের দোষে কংগ্রেস এমনভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, যে এখান থেকে আর ফেরা সম্ভব নয়। ঠিক যে মডেলে ইউপিএ-২ সরকার ভেঙে পড়েছিল, দলের অন্দরেও এখন সেই পদ্ধতি চলছে। রাহুল গান্ধীর নিরাপত্তারক্ষী এবং আপ্তসহায়ক দল চালাচ্ছে।” সম্ভাব্য অ-গান্ধী কাউকে সভাপতি করা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন বর্ষীয়ান এই নেতা। তিনি বলছেন, “এখন আমাদের এমন অবস্থা যে দল চালানোর জন্য প্রক্সি খুঁজতে হচ্ছে। এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হবে। কারণ ৮ বছরে নেতৃত্বের অপদার্থতায় কংগ্রেস এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।”
[আরও পড়ুন: ফের পিছোল কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন, রাহুলকে রাজি করাতে মরিয়া দল!]
আজাদের এই বিস্ফোরক চিঠি আগামী দিনে কংগ্রেস তথা জাতীয় রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হতে চলেছে, তাতে সংশয় নেই। আসলে বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা দীর্ঘদিন ধরেই কোণঠাসা ছিলেন। অনেক দিন ধরেই ইস্তফা দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন তিনি। দলের অন্দরে থেকে যে অভিযোগগুলি প্রকাশ করতে পারছিলেন না, ইস্তফা দেওয়ার পর সেগুলিই বলে দিলেন।