সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনা (Coronavirus) মহামারীর ধাক্কা বেসামাল করে দিয়েছে সমাজকে। তার হাত থেকে নিস্তার পায়নি শিশুরাও। মুহূর্তে বদলে গিয়েছে চারপাশের পরিস্থিতি। বাস্তব যে কতটা নির্মম, তা এখন বুঝতে পারছে কোভিডের জেরে বাবা-মা হারানো অনাথ শিশুরা। নিজেদের অজান্তেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তারা!
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অন্তর্তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বেআইনিভাবে দত্তক নিয়ে কোভিডে অনাথ হওয়া শিশুদের বিক্রি করে দিচ্ছে অসাধু চক্র। প্রকাশ্যে না হলেও অনাথ শিশুদের বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে অসাধু ব্যক্তিরা। নামী মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটের তথ্য বলছে, ভারতে অন্তত সওয়া লক্ষ শিশু কোভিডের জেরে বাবা বা মায়ের কোনও একজনকে হারিয়েছে ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। তার মধ্যে ২৫ হাজার হারিয়েছে মাকে। বাবাকে হারিয়েছে ৯০,৭৫১ জন শিশু।
[আরও পড়ুন: গলছে সম্পর্কের বরফ? সংসদের বাইরে ধরনা মঞ্চে তৃণমূল সাংসদদের পাশে রাহুল গান্ধী]
জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিটির (এনসিপিসিআর) হিসাবে বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে ৩,৬২০ শিশু। আর এই ধরনের শিশুদের নিয়েই ব্যবসা ফেঁদেছে বেশ কিছু লোক। যারা ‘কুখ্যাত’ নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। যেমন, আসার আমিন। কাশ্মীরে গ্লোবাল ওয়েলফেয়ার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে বেসরকারি সংগঠনের মাথা। দিল্লিতে বসে কোভিডে অনাথ শিশু বিক্রির খোলাখুলি প্রস্তাব দিয়েছে তদন্তকারী সাংবাদিকদের। মাত্র ৭৫ হাজার টাকায়! তার কথায়, “আমাদের কাছে অনেক অনাথ শিশু আছে। কেউ অনাথ শিশু চাইলেও সমস্যা নেই। পেয়ে যাবেন। কাশ্মীরি শিশুরা সত্যিই খুব সুন্দর, মাশাল্লাহ!” জোড়া শিশু মিলবে দেড় লক্ষে। তবে নিজের জন্য নয়, আমিন নাকি টাকা চাইছেন তাঁর ট্রাস্টের জন্য!
ভারতে অধিকাংশ দত্তক নেওয়ার ঘটনায় কঠোরভাবে নজরদারি করা হয়। ফলে সরকারিভাবে বছরে গড়ে দত্তক নেওয়া হয় তিন থেকে পাঁচ হাজার শিশু। যেখানে আমেরিকায় সংখ্যাটা বছরে প্রায় ১.৩৫ লক্ষ! কিন্তু সঠিক নথিপত্র ছাড়া বেআইনিভাবে দত্তকের সংখ্যাটা বোধহয় অনেক বেশি। আমিনের মতো লোকই তার প্রমাণ। যদি ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হয়? সে বিষয়টাও সামলে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে আমিন। কীভাবে? সে বলবে, তার সঙ্গে দত্তক নেওয়া ব্যক্তির জীবনে কখনও দেখাই হয়নি! একইভাবে কোভিডে অনাথ শিশুদের বিক্রির জন্য দালালি করছে দিল্লির তৈমুর নগরের প্লেসমেন্ট সংস্থার মাথা মান্নান আনসারি। কয়েকদিন আগে বিহারে স্বামী হারানো এক মহিলা সরিতা তাঁর ছ’মাসের সন্তানকে দত্তক দিতে চেয়েছেন। সে জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করেছে আনসারি। কাশ্মীরের পাম্পোরের একটি চক্র আবার হাসপাতালে কোভিডে মৃত মায়ের শিশু তুলে এনেও বিক্রি করছে! বুক ফুলিয়ে সে কথা জানিয়েছে নোবেল ফাউন্ডেশন নন প্রফিট-এর আজাদ আহমেদ দার। তেমন শিশুর জন্য দারের আবদার মাত্র দশ লক্ষ!