বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, কান্নুর: তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার দায় ঝেড়ে ফেলল বঙ্গ সিপিএম (CPM)। শাসকদলের ধারাবাহিক আক্রমণের ফলে পার্টিতে ভাঙন ধরে বলে পার্টি কংগ্রেসের (Party Congress) মঞ্চে সংগঠন নিয়ে আলোচনার সময় চিল চিৎকার জুড়ে সাফাই দেন রাজ্যের দুই প্রতিনিধি। তবে কেরল তামিলনাড়ু বাদ দিয়ে গোটা দেশেই বিধ্বস্ত অবস্থা সিপিএমের। প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেন পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত। এরমধ্যেই শুরু হয়েছে পার্টির শীর্ষ কমিটিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে টানাপোড়েন। কারা থাকবেন, কোন শীর্ষনেতা বাদ যাবেন। আবার নতুন মুখ কারা জায়গা পাবেন শুরু হয়েছে জল্পনা। রবিবার পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিনে গঠিত হবে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো।
শুক্রবার রাতে পার্টির রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন আলোচনার জন্য পেশ করেন পলিটব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাট (Prakash Karat)। প্রতিবেদনে দু’টি রাজ্য ছাড়া গোটা দেশেই যে পার্টির অবস্থা বেহাল তা স্বীকার করে নেওয়া হয়। তবে প্রতিবেদনের ওপর আলোচনার জন্য বাংলার সময় ধার্য হয় মাত্র ২৩ মিনিট। বক্তব্য রাখেন, কলকাতা ও মুর্শিদাবাদের দুই জেলা সম্পাদক। দু’জনেই মূলত শাসকদলের ঘাড়ে চাপিয়ে সংগঠনের দুর্বলতা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে সূত্রের খবর। এক সময়ের লাল দুর্গ পশ্চিমবঙ্গে আজ বামেদের দুরবস্থার জন্য শাসকদলের আক্রমণকে হাতিয়ার করেন বক্তারা।
[আরও পড়ুন: ছোট থেকেই দুর্নীতিতে হাতেখড়ি, মগরাহাট হত্যা কাণ্ডে অভিযুক্ত জানে আলমের পরিচয় জানেন?]
গোটা দেশের প্রতিনিধিদের সামনে তাঁদের যুক্তি, ১১ বামফ্রন্ট সরকার চলে যাওয়ার পর থেকেই ব্যাপক আক্রমণ নামিয়ে আনে শাসকদল। শারীরিক ভাবে অত্যাচারের পাশাপাশি অর্থের প্রলোভন দিয়ে দলবদল করানো হয়। তাঁদের অভিযোগ, গত একদশকে ১০ হাজারের বেশি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বামপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে। কয়েক হাজার পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে অথবা দখল করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলায় পার্টি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে তার স্বপক্ষে যুক্তি দেন দুই বক্তা। তাঁদের ব্যাখ্যা, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বামেরা শূন্য হয়ে গেলেও পরবর্তীতে মানুষের সমর্থন ফিরছে। পুরসভা ও উপনির্বাচনে পার্টির ভোটপ্রাপ্তি ঊর্ধ্বমুখী বলে দাবি করেন। তাদের যে জনসমর্থন বিজেপির দিকে চলে গিয়েছিল তা একটু একটু করে ফিরছে বলে পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দাবি করেন কল্লোল মজুমদার ও জামির মোল্লা।
অন্যদিকে, রবিবার পার্টি কংগ্রেসের শেষ দিন। আজ নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর ঘোষণা হবে। তার আগে বৈঠকে বসবে এই দুই কমিটি। এবার কমিটিতে থাকার বয়স সীমা বেঁধে দেওয়ার কারণে বাংলার অনেক হেভিওয়েট নেতাকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। তাঁদের পুনর্বাসনের চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন কমরেডকুলের নেতারা। তবে সকলের দৃষ্টি কমিটি থেকে কারা বাদ যাবেন। আর নতুন কাদের জায়গা হবে।
[আরও পড়ুন: ঝালদায় পুরবোর্ড গঠনের দিন শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিহত তপন কান্দুর স্ত্রীর, কাঠগড়ায় পুলিশকর্তা!]
বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার কারনে বাংলার তিন হেভিওয়েট নেতা বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র ও হান্নান মোল্লার অব্যাহতি নিশ্চিত। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে দৌড়ে এগিয়ে পারেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। যিনি রাজ্য সম্পাদক হওয়ার দাবিদার ছিলেন। হান্নান মোল্লার জায়গায় বাংলার কোন নেতা নয়। বরং জায়গা পেতে পারেন লং মার্চখ্যাত মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা অশোক ধাওয়াল। কেরল থেকে অব্যাহতি নেবেন রামচন্দ্রন পিল্লাই। তাঁর জায়গায় স্থান হতে পারে বিজয়রাঘবনের।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার বাংলার বেশ কয়েকটি নতুন মুখের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিমান বসু, মৃদুল দে অব্যাহতি নেবেন। আগেই প্রয়াত হয়েছেন শ্যামল চক্রবর্তী। এছাড়াও রেখা গোস্বামী, অঞ্জু কর ও মিনতি ঘোষের মতো মহিলা নেত্রীরা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরতে পারেন বলে সূত্রের খবর। সেই জায়গায় শিলিগুড়ির অশোক ভট্টাচার্য ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ীর স্থান পাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা। আলোচনা চলছে যুবনেতা মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, সায়নদীপ মিত্র, অভয় মুখোপাধ্যায়, তাপস সিনহাদের নাম নিয়ে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে অশীতিপর বিমান বসু, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমদের সিদ্ধান্তের উপর।