সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কপ্টার দুর্ঘটনায় বিপিন রাওয়াতের (CDS Bipin Rawat) মৃত্যু ঘিরে ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য। উঠছে একাধিক প্রশ্ন। সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর পিছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অনেকে আবার তামিলনাড়ু-কর্ণাটক সীমান্তে চপার দুর্ঘটনার সঙ্গে তাইওয়ানের এক সেনাপ্রধানের মৃত্যুর মিল খুঁজে পাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, এই মিল নেহাতই অমূলক নয়। কিন্তু কেন? সেটা বুঝতে হলে বিপিন রাওয়াতের কর্মজীবনে চোখ বুলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত একাধারে ছিলেন মাউন্টেন ওয়ারফেয়ারের দক্ষ কৌশলী। অন্যদিকে সন্ত্রাস দমন অভিযানে পারদর্শী ছিলেন তিনি। রাওয়াতের নেতৃত্বেই মোদি জমানায় প্রথম সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল মায়ানমারে। স্বাভাবিকভাবে মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার অর্থাৎ পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধে দক্ষ হওয়ায় ভারতের মাটিতে চিনা আগ্রাসন একাধিকবার রুখে দিতে সক্ষম হয়েছেন রাওয়াত। ডোকলাম এলাকায় লালফৌজের জারিজুরি রুখতে বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। তখন তিনি ছিলেন সেনাপ্রধান। এরপর দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক হিসেবে অরুণাচল, উত্তরাখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশ থেকে গালওয়ান সংঘর্ষের কড়া হাতে মোকাবিলা করেছেন। এককথায় বলতে গেলে চিনা ফৌজের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিপিন লক্ষ্মণ সিং রাওয়াত।
[আরও পড়ুন: ‘ছেলে যোদ্ধা, বিজয়ী হয়েই ফিরবে’, বলছেন কুন্নুরের দুর্ঘটনায় একমাত্র জীবিতের বাবা]
দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের জমি বলে দাবি করে এসেছে চিন। বারবার বেজিংয়ের আগ্রাসনের মুখে পড়েছে দেশটি। কিন্তু শি জিনপিংয়ের এই আগ্রাসী মনোভাবের পিছনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সে দেশের চিফ অফ জেনারেল স্টাফ শেন ইয়েমিং। তাইওয়ানের বায়ুসেনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে তাইপেইর কাছে পাহাড়ি এলাকায় চপার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ইয়েমিংয়ের। আমেরিকার ব্ল্যাক হক চপারে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও ৭ সেনাকর্তা। আর এই দুই দুর্ঘটনার মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাওয়াতের মৃত্যুর পর নিরাপত্তা কৌশল বিশারদ ব্রহ্ম চেলানি টুইটারে লেখেন, “রাওয়াতের ভয়াবহ কপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে ভয়ঙ্কর রকম মিল রয়েছে তাইওয়ানের চিফ অফ জেনারেল স্টাফ শেন ইয়েমিংয়ের মৃত্যুর। দু’টি কপ্টার দুর্ঘটনাই লালফৌজের আগ্রাসনের দুই পথের কাঁটাকে সরিয়ে দিল।” তার পরই অবশ্য তিনি লেখেন, “এই কাকতালীয় মিল থাকার অর্থ এটা নয় যে দু’টি দুর্ঘটনার মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কিংবা মৃত্যুর পিছনে বহিরাগত কোনও শক্তির হাত আছে। তবে এই দুর্ঘটনা কিন্তু অভ্যন্তরীণ একাধিক বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। বিশেষ করে দুর্ঘটনার পর কপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।”
[আরও পড়ুন: CDS Bipin Rawat: দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান থেকে পড়ার পর জল চেয়েছিলেন রাওয়াত, দাবি প্রত্যক্ষদর্শীর]
এদিকে এই টুইটকে হাতিয়ার করে রাওয়াতের মৃত্যুর জন্য আমেরিকার দিকে আঙুল তুলেছে চিন। বেজিংয়ের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, “রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল কিনছে ভারত। আমেরিকা এই বিকিকিনির ঘোর বিরোধী ছিল। রাওয়াতের মৃত্যুর পিছনে আমেরিকার হাত থাকা অসম্ভব নয়।”