সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পানীয় জল না বিষ? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় জলে তিন থেকে চার গুণ বেশি ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি মিলল ছত্তিশগড়ের ছ’টি জেলায়। কোথাও কোথাও তো আবার এই মাত্রা আরও বেশি। WHO-র নিদান অনুযায়ী, পানীয় জলে ইউরেনিয়ামের মাত্রা লিটার পিছু ১৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি থাকলে তা বিপজ্জনক, ব্যবহারের অযোগ্য। অথচ ছত্তিশগড়ের দুর্গ, রাজনন্দগাঁও, কাঙ্কের, বেমেতারা, বালোদ এবং কাওয়ারধা জেলা থেকে সংগৃহীত জলের নমুনায় ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব WHO-অনুমোদিত মাত্রার তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। কোথাও কোথাও তো আবার লিটার পিছু ৩০ মাইক্রোগ্রামেরও বেশি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, ২০১৭ সালে WHO-র তরফে জলে ইউরেনিয়ামের নির্ধারিত মাত্রা বলা হয়েছিল। যদিও ভারতের ক্ষেত্রে এই মত সেভাবে মানা হয়নি। চলতি বছরের জুন মাসেই ভাবা পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র জানিয়েছিল, এদেশে এক লিটার জলে ৬০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত ইউরেনিয়াম থাকলেও তা নিরাপদ। প্রসঙ্গত, ইউরেনিয়াম মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে রয়েছে যে জলে, তা পান করলে ক্যানসার থেকে শুরু করে ফুসফুসের নানা ধরনের অসুখ, এমনকী চামড়া এবং কিডনির জটিল ব্যাধিও হতে পারে বলেই মত চিকিৎসকদের। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের যে সমস্ত জেলায় জলে অতিমাত্রায় ইউরেনিয়ামের উপস্থিতি মিলেছে, সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে এই সমস্ত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়েছে।
তবে ছত্তিশগড়ের ছয় জেলায় জলের নমুনায় পাওয়া ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৬০ মাইক্রোগ্রামের সরকার নির্ধারিত সীমাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বলেই খবর। জেলাগুলির জলে ইউরেনিয়ামের গড় মাত্রা লিটার পিছু ৮৬-১০৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। বালোদের একটি গ্রামে এক লিটার জলে ১৩০ মাইক্রোগ্রাম ইউরেনিয়াম পাওয়া গিয়েছে। আবার কাঙ্কেরের একটি গ্রাম থেকে প্রাপ্ত নমুনায় ইউরেনিয়ামের মাত্রা লিটারপিছু ১০৬ মাইক্রোগ্রাম। জানা গিয়েছে, প্রথমে ইউরেনিয়ামের অস্বাভাবিক মাত্রায় উপস্থিতি পাওয়া যায় বালোদ জেলার দেবতরাই গ্রাম থেকে। প্রায় ২৫ বছরের পুরনো একটি নলকূপের জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরে আশপাশের আরও কয়েকটি জেলায় বিভিন্ন জায়গায় জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেগুলি পাঠানো হয় ভিলাই ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে।
পরীক্ষা করে দেখা যায় জলে ইউরেনিয়ামের গড় মাত্রা রয়েছে লিটার পিছু ৮৬ থেকে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম। ঘটনার প্রেক্ষিতে ছত্তিশগড়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সভাপতি অশোককুমার ঘোষ জানিয়েছেন, ভূগর্ভস্থ জলে ইউরেনিয়ামের মাত্রা অবশ্যই উদ্বেগের। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যাধিও দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, ভিলাই ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির বিজ্ঞানী পুনম দেশমুখের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের উচিত জল সঠিকভাবে পরিশোধন করে পান করা। তাঁর মতে, আমলকী গাছের ছালকে ‘ফিল্টার’ হিসাবে ব্যবহার করে, জল ছেঁকে পান করা নিরাপদ। সেক্ষেত্রে জল থেকে অনেকটা ইউরেনিয়াম বের করে দেওয়া সম্ভব।