shono
Advertisement

‘ঘাতক’কমান্ডোর হাতে খতম ১২ চিনা সেনা, গালওয়ানের লড়াইয়ে গুরতেজ যেন ‘লিওনাইডাস’

শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সিংহ বিক্রমে লড়ে যান এই কমান্ডো। The post ‘ঘাতক’ কমান্ডোর হাতে খতম ১২ চিনা সেনা, গালওয়ানের লড়াইয়ে গুরতেজ যেন ‘লিওনাইডাস’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:40 PM Jul 13, 2020Updated: 08:26 PM Jul 13, 2020

মৈনাক মণ্ডল: ‘স্যর জি জরা রুকিয়ে, থোড়া পাবজি খেলকে আতে হ্যায়।’ এটাই ছিল শেষ কথা। তারপর ফিরলেন ঠিকই। তবে ক্ষতবিক্ষত রক্তে ভেজা লাশ হয়ে। পরের দিন বেলা বাড়তেই ততক্ষণে দুনিয়া জেনে গিয়েছে, চিনা সেনাদের হামলায় ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ। কিন্তু দুনিয়াকে তখনও জানানো হয়নি পাঞ্জাব কা পুত্তরের দুঃসাহসিক বীরগাথা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: তুরুপের তাস তাইওয়ান, লাদাখ নিয়ে পালটা কৌশল নয়াদিল্লির]

অনেকেই জানেন না, একা হাতে ১২ জন চিনা সেনাকে (Chinese Army) খতম করেছিলেন ২৩ বছরের গুরতেজ সিং। তাঁর নিজের লড়াই ছিল আধ ঘণ্টারও বেশি। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সিংহ বিক্রমে লড়ে গিয়েছেন ‘ঘাতক’ ফোর্সের এই কমান্ডো।

প্রত্যক্ষদর্শী ১৬ নম্বর বিহার রেজিমেন্টের জওয়ানরা বলছেন, ১৫ জুন রাত দশটার পরে যেন ঝড় উঠেছিল গালওয়ান উপত্যকায়। ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল ১৪ নম্বর পেট্রলিং পয়েন্টের কাছে থাকা চিনা সেনাদের শিবিরের দুটি তাঁবু। ঝড়ের নাম ছিল গুরতেজ সিং। লাদাখের লে’তে হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে জখম কয়েকজন জওয়ান বয়ান দিয়েছেন, একটা ৬ ফুট তিন ইঞ্চির বাচ্চা ছেলের ক্ষমতা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে পিএলএ’র সেনারা। গুরুতর পরিস্থিতির আশঙ্কায় বাছাই করা ঘাতক প্লেটুনের কমান্ডোদের আগে থেকেই গালওয়ানে মোতায়েন করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী (Indian Army)।

সেই রাতে বর্ডার ইনস্পেকশন টিমের প্রধান কর্নেল বি সন্তোষ বাবু, সিপাই পালনিয়াপ্পান সহ তিনজনকে বিনা প্ররোচনায় হামলা চালিয়ে হত্যা করে পিএলএ। বিহার রেজিমেন্টের ৪০ থেকে ৫০ জন জওয়ানের বিরুদ্ধে চিৎকার করতে করতে কাঁটাওয়ালা রড, মুগুর, পাথর নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সংখ্যায় চার গুণ বেশি চিনা সেনা। এই অসম যুদ্ধে নিহত হন বীরভূমের বাসিন্দা রাজেশ ওঁরাও-সহ অনেকেই। তখনই খবর যায় ফরোয়ার্ড পোস্টে। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে প্রায় দেড় কিলোমিটার দৌড়ে এসে পালটা আঘাত হানে ঘাতক কমান্ডো ফোর্স।

কেমন ছিল সেই আঘাত? চিনা সেনাদের জটলায় নিজের শরীরটাকে বুলেটের মতো ছুঁড়ে দিয়েছিলেন গুরতেজ। অন্ধকারে চোখের পলকে ছোরা, রড নিয়ে কুপিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। একেকটা কোপ আর লাথিতে পাহাড়েকর খাঁজ থেকে ছিটকে পড়ছিল দুশমন। পর পর চারজনকে হাত ভেঙে, ঘাড় মটকে মারা পর একটা সময় বাঁহাতের দু-তিনটে আঙুল ভেঙে যায় গুরতেজের। তখন এক চিনা সেনা পাথরের চাঁই তুলে আছড়ে মারতে আসছিল তাঁকে। গুরতেজ তার শরীরে ঢুকিয়ে দেন চার ফুট লোহার রড। আরেক জনের বুকে গেঁথে দেন ছোরা।

দুই শত্রু সেনার নিথর শরীর অনেক উপর থেকে ছিটকে পড়ে যায় পাহাড়ের খাঁজে। ফলে দুটো অস্ত্রই হাতছাড়া হয়ে যায় গুরতেজের। কনুই, আঙুল ভেঙে বাঁ হাত তখন অকেজো। তখন কোমরে গোঁজা ছোট্ট কৃপাণ নিয়েই ডান হাত দিয়ে শত্রুর গলায়, মুখে, চোখে কোপাতে থাকেন এলোপাথাড়ি। কিন্তু কখন শত্রুপক্ষ পিছন থেকে হামলা চালিয়ে লোহার কাঁটাওয়ালা রড পিঠে গেঁথে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে তা বুঝতেও পারেননি। শরীর ভারী হয়ে আসছিল। গল গল করে গরম রক্ত পড়ছিল বুক, পিঠ থেকে।

মাইনাস তাপমাত্রায় সেই রক্ত জমে যাচ্ছিল শরীরে বাইরেই। তখনও ৪-৫ জন চিনা সেনা মিলে পাথরের দেওয়ালে ঠেসে ধরে ঘুষি মেরে যাচ্ছিল গুরতেজের মুখে। দুর্বোধ্য মান্দারিন ভাষায় কি সব গালাগাল করছিল। কিন্তু প্রবল শক্তিতে তাদের সবকটাকে জড়িয়ে উঁচু পাহাড়ের খাঁজ থেকে নিচে লাফ মারেন জখম গুরতেজ। শেষ চেষ্টা। সবাইকে মেরে মরতে চান তিনি। হলও তাই। একশো ফুট উঁচু থেকে পাথরের চাঁই ধসে সবাইকে নিয়ে গালওয়ানের গিরিখাতে আছড়ে পড়লেন তিনি। শেষবারের মতো চোখ বোজার আগে নিশ্চিত হলেন, হ্যাঁ শত্রুরা খতম।

[আরও পড়ুন: মসজিদে বদলে যাচ্ছে ঐতিহাসিক হেগিয়া সোফিয়া, ফের ইসলামিকরণের পথে তুরস্ক]

শোলের ধর্মেন্দ্রর চরিত্রটা বরাবরই খুব ভাল লাগত। ছোটবেলা থেকেই ফেভারিট হিরো অক্ষয় কুমার। সেনা শিবিরে প্রশিক্ষণের সময় দেখেছিলেন হলিউডি ব্লক বাস্টার ছবি ‘থ্রি হান্ড্রেড’। অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ছবি দেখে। থারমোপলির ভয়াবহ যুদ্ধে স্পার্টার রাজা লিওনাইডাস কিভাবে মাত্র ৩০০ সেনা নিয়ে ৪০ হাজার পারসিক সেনা ও রাজা জারেকসাসকে রুখে দিয়েছিলেন সেই নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘থ্রি হান্ড্রেড’। জেরার্ড বাটলার অভিনীত ছবিটা দেখতেন বারবার। বাবা বীরসা সিং হেসে বলতেন, ‘আরে তু ফৌজি হ্যায় তো…আসলি হিরো বন কে দিখানা’। পাঞ্জাব কি পুত্তর কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবেননি তাঁর বীরগাথা নিয়েই একদিন ছবি তৈরি করবে বলিউড। ফিল্ম সমালোচক তরণ আদর্শ ঘোষণা করেছেন, গালওয়ানের সংঘর্ষ নিয়ে অজয় দেবগনের প্রযোজনায় তৈরি হতে চলেছে ছবি ‘গালওয়ান ভ্যালি’। গুরতেজের ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন কোনও তরুণ অভিনেতা। সূত্রের খবর, আগামী বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে গুরতেজ সিংকে সম্মানিত করা হবে মরণোত্তর সেনা মেডেল।

The post ‘ঘাতক’ কমান্ডোর হাতে খতম ১২ চিনা সেনা, গালওয়ানের লড়াইয়ে গুরতেজ যেন ‘লিওনাইডাস’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement