সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরাধিকারের সফেদ টুপি মাথায় চাপালেন রাহুল গান্ধী। জাতীয় কংগ্রেসে শুরু হল নয়া যুগ। নতুন ধারার ভগীরথ হলেন রাজীব তনয় রাহুলই। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন তিনি।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এ দল। কংগ্রেস তাই শুধুই এক রাজনৈতিক ধারা নয়, বরং ইতিহাসের বহু দলিল-দস্তাবেজ আছে এ দলের সিন্দুকে। আছে ঐতিহ্য। সুতরাং কংগ্রেসের ধারা মানে ঐতিহ্যের অনুসারী হয়েই আধুনিকতার খোঁজ। দল সে কাজে রাহুলকেই যোগ্য ব্যক্তি বলে নির্বাচিত করা হয়েছে। সোমবার ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। বেলা তিনটে পর্যন্ত ছিল সময়সীমা। একমাত্র রাহুলই নমিনেশন ফাইল করেছিলেন। তাতে স্বাক্ষর করে সায় দিয়েছিলেন ৮৯ জন। প্রত্যাশিতভাবে কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাননি। রাহুলকে কংগ্রেসের ডার্লিং বয়ের খেতাব দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেই ডার্লিং বয়ই বসলেন ১৩২ বছরের পুরনো দলটির শীর্ষে।
[ ‘গোপন’ বৈঠক নিয়ে মোদিকে পালটা জবাব কংগ্রেস ও পাকিস্তানের ]
এই কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নাম। মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু, বল্লভভাই প্যাটেল থেকে শুরু করে জহওরলাল নেহেরু-র ভাবনায়, দর্শনে বিভিন্ন সময়ে হয়েছে দিকবদল। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে নতুন করে দিশা দেখিয়েছে এ দল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি থাকলেও ভারত ও কংগ্রেস আজও অনেকের কাছে সমার্থক। একরকমের আবেগ জড়িয়ে আছে এ সমীকরণে, যা বহু পরিস্থিতিতে, বহু বিপর্যয়েও মোছে না। এবার এই সারিতে উঠে এল রাহুলের নামও। নয়া পরিস্থিতিতে দল তথা দেশকে নেতৃত্বকে দেওয়ার গুরুভার বর্তাবে তাঁর কাঁধেই।
[ এক কেন্দ্রে প্রার্থী একজনই, নির্বাচনী সংস্কারের ডাক সুপ্রিম কোর্টের ]
শতবর্ষ পুরনো দলটির শীর্ষে যে ১৫ জন বসেছেন, তাঁদের মধ্যে গান্ধী পরিবারের সদস্য বলতে চারজনই। স্বাধীনতার পর থেকে গান্ধী উত্তরাধিকারেই চালিত হয়েছে কংগ্রেস। পণ্ডিত জহওরলাল নেহরু নেতৃত্ব দিয়েছেন তিন বছর। ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী দুজনেই আট বছর করে দলকে পরিচালনা করেছেন। এরপর দলের ভার এসে পড়ে সোনিয়া গান্ধীর হাতে। যে সময় তিনি এ দায়িত্বভার পান সে সময় রাজনীতিত একরম অপিরণতই বলা যায় তাঁকে। তার উপর বিপর্যস্ত গান্ধী পরিবার।নরসিমা রাও, সীতারাম কেশরীদের তখন দাপট। কিন্তু ‘অন্তরাত্মার’ ডাকে সোনিয়া রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেননি। বরং দিনে দিনে পরিণত হয়েছে তাঁর রাজনৈতিক বোধ-বুদ্ধি। দেশ তার সাক্ষী থেকেছে। কংগ্রেসের মতো দলে দীর্ঘকালীন নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটিও তাই তাঁরই দখলে। টানা ১৯ বছর কংগ্রেসের সভাপতির পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রে দুবার ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। যে যুগের অবসান হল আজ। কংগ্রেসের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে রাহুলের নাম নয়া সভাপতি হিসেবে ঘোষিত হল। গান্ধী পরিবারের পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে এই পদে আসীন হলেন তিনি।
[ ট্রেনে বসেই বিমানযাত্রার ‘অনুভূতি’ পাবেন শতাব্দীর নতুন কামরায় ]
এই খবরে যখন আনন্দে ভাসছেন কংগ্রেসের সাধারণ কর্মীরা, তখনও গুজরাটে প্রচারে ব্যস্ত রাহুল। এককালে রাজনীতিতে তাঁকেও অপিরপক্ক বলা হত। এই সেদিনও তাঁকে পাপ্পু বলে ঠাট্টা করেছে বিরোধীরা। তবে মায়ের মতো রাহুলও রাজনীতি বিমুখ হননি। বরং পরাজয়ের পরিস্থিতি থেকেই রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন। ব্যর্থতার আগুনে গা সেঁকে শিখেছেন রাজনীতির প্যাঁচপয়েজার। তবে হারাননি সৌজন্য ও শালীনতা। যে উত্তরাধিকারের রক্ত তাঁর শরীরে বইছে, তা ভোলেননি রাহুল। ফলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তিনিই ভারতীয় এলিগ্যান্ট রাজনীতির তরুণ মুখ। যে রাজনীতি ইন্দিরা, রাজীব বা প্রণব মুখোপাধ্যায় করেছেন, তার ছাপ আজ পাওয়া যায় রাহুলের মধ্যে। সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলে বেশ খানিকটা ক্ষুরধারও করেছেন তাঁর রাজনৈতিক আক্রমণ। সব মিলিয়ে এই রাহুল একেবারে নতুন মনে করছেন অনেকে। কংগ্রেসের মতো দলকে আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে তিনিই যে যোগ্য লোক, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে।, ফলে মায়ের ব্যাটন তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হল।
[ ‘গুরু’কে টপকাতে ব্যর্থ ‘গুগল’, সগর্বে মন্তব্য উপরাষ্ট্রপতির ]
আগামী ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাহুলের হাতে কংগ্রেসের সভাপতি পদের চুক্তিপত্র তুলে দেওয়া হবে।তবে একেবারে মগডালে ওঠেননি সোনিয়া পুত্র। সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি এবং সভাপতি। বাবার মতো ধাপে ধাপে উত্থান হয়েছে রাজীব তনয়ের। তবে তিনি এমন একটি সময় ব্যাটন পেলেন যখন কংগ্রেস বিরোধী দলের মর্যাদাটুকু পায়নি। লোকসভা নির্বাচনের পর উপর্যুপরি নির্বাচনগুলিতে হাত চিহ্ন ক্রমশ বিভিন্ন রাজ্য থেকে ফিকে হচ্ছে। গুজরাট নির্বাচনের মধ্যগগনে রাহুলের এই মুকুট। তার ভার বহন করা সহজ নয়। তবে দলের ব্যর্থতার দায়ও যেমন তাঁর কাঁধে বর্তাবে সেভাবে সাফল্যের ভাল দিকগুলি ভারতীয় রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা দেবে।
The post মায়ের ব্যাটন হাতে নিয়ে কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী appeared first on Sangbad Pratidin.