বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজধানী দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্ক যেন এক টুকরো কলকাতা। সেখানেই মাছপ্রেমীদের ওপর আঘাত গেরুয়া শিবিরের। চিত্তরঞ্জন পার্কের কালী মন্দিরের পাশে মাছের বাজার তুলে দেওয়ার হুমকি দিল বিজেপি। তার প্রতিবাদে সরব এলাকার বাঙালিরা। বিজেপির বাঙালিবিদ্বেষ আরও একবার স্পষ্ট হল এই ঘটনায়, এমনটাই মনে করছে এলাকাবাসী।

যে কোনও বাজারে দেবদেবীর মন্দির থাকাটা বাংলার রেওয়াজ। অনেক সময় দেবদেবীকে মাছ অর্পণও করা হয়। সেখানে গেরুয়া শিবিরের এহেন হামলা ও হুমকি দিল্লির বাঙালিদের আঘাত করেছে বলে মত রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী বাসিন্দাদের। দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেই একাধিক জায়গায় মাছ বাজার বন্ধের হুমকি দিয়েছে বিজেপি। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে মাছ ও মাংসের দোকান বন্ধ করে দেবে বলে আশঙ্কা অনেকের। চিত্তরঞ্জন পার্কের এক নম্বর মার্কেটের মাছ ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়ার ভিডিও প্রথম প্রকাশ করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। এরপরেই পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছে দিল্লি বিজেপি।
বাঙালি প্রধান এলাকা হওয়ায় আমিষ খাওয়ারের প্রচলন রয়েছে চিত্তরঞ্জন পার্কে। ফলে প্রতিটি বাজারেই মাছ ও মাংসের দোকান রয়েছে। সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এই এলাকায় গোবলয়ের সংস্কৃতি ব্রাত্য। তাই বাঙালির পাত থেকে মাছ বন্ধের পরিকল্পনা করেছে পদ্মপক্ষ। আরও পোয়াবারো হয়েছে বিজেপি দিল্লির দখল নেওয়ায়। আগে প্রচ্ছন্ন হুমকিতেই সীমাবদ্ধ থাকতো। এবার সরাসরি আক্রমণ। ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারাও। সিআর পার্কের বাসিন্দা প্রদীপ মজুমদার জানান, "আমরা বাঙালিরা মৎস্যপ্রেমী। আর মন্দিরের পাশে মাছের বাজার থাকলে কখনই তার পবিত্রতা নষ্ট হয় বলে মনে করি না। এই বাজার বন্ধের হুমকির প্রতিবাদ করছি।" আরেক বাঙালি মলয় ঘড়ুই জানান, "মাছ বাজার বন্ধের চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। এখানকার বাঙালিরা কোনওভাবে এসব হুমকি বা হামলা মেনে নেবে না। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ হবে।"
দেশভাগের পর থেকেই এই এলাকায় বসতি গড়ে তোলে ছিন্নমূলের মানুষ। তখন নাম ছিল পিডিপি কলোনি। পরে নাম হয় চিত্তরঞ্জন পার্ক। যেহেতু বাঙালির বাস তাই গড়ে ওঠে কালী মন্দির। তার পাশেই মাছের বাজার। সকলেই জানেন মা দুর্গা ও কালীর অন্নভোগে মাছ থাকে। সেই মাছ বাজারে ঢুকে বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেওয়া নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তও শুরু করে। কিন্তু, বুধবার বিজেপির তরফে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয় যে, কৃষ্ণনগরের সাংসদের ভিডিও পুরোপুরি মিথ্যা ও বানানো। মহুয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে দিল্লি বিজেপির সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব বলেন, "এই মাছ বাজারের জমি আইনত বরাদ্দ করা হয়েছিল। মাছ বিক্রেতারা এই বাজারকে অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধর্মীয়-সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।" তাঁর কথায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য এই ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছেন তৃণমূল সাংসদ।