কোয়েল মুখোপাধ্যায়: হাঁচি-কাশি থেকে শুরু করে গলা জ্বালা। ত্বকে র্যাশ, চুলকানি থেকে শুরু করে ব্রঙ্কোস্প্যাজম। দিল্লির ভয়ংকর বায়ুদূষণের ফলে এই সমস্ত গুরুতর শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত হতে চলেছেন শহরবাসী। সমূহ বিপদ আশপাশের নয়ডা-গাজিয়াবাদেরও। বিশেষ করে শীতের সময়ে বাতাসে দূষণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ায়, একজন সুস্থ ব্যক্তির শ্বাসযন্ত্রও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। রাজধানীতে ভয়ংকর দূষণের প্রেক্ষিতে এমনই আশঙ্কার কথা শোনালেন চিকিৎসকরা। তাঁদের অভিমত, দিল্লির বায়ুতে বর্তমানে যে দূষিত কণাগুলি ভাসছে, তা রক্ত ও ফুসফুসে মিশে গেলে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শুধু তাই নয়। দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ারের প্রধানের আরও আশঙ্কা, “একজন সুস্থ ব্যক্তিও যদি এই বিষাক্ত পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকেন, তবে তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে স্বাস্থ্যে। দেখা গিয়েছে সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি, যিনি সিগারেটও খান না, তাঁদেরও ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর প্রধান কারণই হল বায়ুদূষণ।” চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের এই পর্যবেক্ষণই বলে দিচ্ছে, রাজধানীর সাম্প্রতিক বায়ুদূষণ শহরবাসীর জন্য ঠিক কতটা ভয়ংকর, কতটা বিপজ্জনক। আক্ষরিক অর্থেই যেন এই দূষণ নিঃশব্দে মানুষ মারছে।
হ্যাঁ, আপনার নিবাস যদি মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের জেরে বর্তমানে রীতিমতো ‘গ্যাস চেম্বারে’ পরিণত হওয়া দেশের রাজধানী শহর দিল্লিতে হয়, তাহলে সাধু সাবধান! আপনার অজান্তেই আপনার শরীরে ঢুকছে ৪৯টি সিগারেটের (ভিন্ন মতে ৭৫টি) ধোঁয়ার সমান বিষ! সুস্থ-সবল একটা শরীরের ইমিউনিটির বাঁধন তছনছ করে দিয়ে, তিলে তিলে তাকে মারাত্মক অসুস্থতার পর্যায়ে ঠেলে দেওয়ার জন্য যা যথেষ্ট। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, কলকাতার হাল তাহলে ঠিক কেমন? রাজধানীর প্রকট বায়ুদূষণের কারণ হিসাবে যেমন ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ ‘ফ্যাক্টর’ প্রকাশ্যে এনেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে দীপাবলিতে নির্বিচারে আতশবাজি পোড়ানো, যানবাহন-নির্গত ধোঁয়ার বন্যা, কলকারখানার বেপরোয়া দূষণ, দিল্লির পড়শি রাজ্যগুলিতে যথেচ্ছ হারে খড় পোড়ানো প্রভৃতি। কিন্তু কলকাতার বাতাস কতটা স্বচ্ছ? কিংবা বা দূষিত? এখানকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স কত? বিপদসীমার ঊর্ধ্বে না নিচে?
উত্তর হল–না, কলকাতাবাসীও নিরাপদ নয় দূষণের থাবা থেকে। একটি সর্বভারতীয় পত্রিকার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে–দূষণ পরিমাপক একটি সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শীতের শুরুতেই কলকাতার বাতাসের ‘বুরা হাল’। তাহলে এই পরিস্থিতিতে তিলোত্তমাবাসীর করণীয় কী? দূষণের নাগপাশ এড়াতে জরুরি কী কী পদক্ষেপ করতে পারেন তাঁরা?
শহরের বিশিষ্ট পালমোনোলজিস্ট ডা. সুমিত সেনগুপ্তের পরামর্শ, ‘‘এমনিতেই শীতে ভাইরাল ইনফেকশনের ঘটনা বাড়ে। তার উপর দূষণ এর সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেবে। গাড়িতে ভ্রমণ করলে জানলা খুলে যদি থাকেন, চোখ জ্বালা করতে পারে, দূষণের জেরে শরীর খারাপ লাগতে পারে। আমি বলব, যদি বাড়িতে থাকেন, তাহলে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। আর যাঁরা অ্যাজমা/সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস-এর মতো ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, য়াঁদের সিভিয়ার লাং ডিজিজ (ফুসফুসের রোগ) রয়েছে, এ কথা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত যে, তাঁরা হেপাফিল্টার-যুক্ত এয়ার ফিল্টার চালিয়ে রাতে শুতে পারেন।
সেক্ষেত্রে দূষণের প্রভাবে এই ধরনের রোগের উপসর্গ কম অনুভূত হয়। এমনিতেই দূষণে এই ধরনের রোগের প্রকোপ বাড়ে। আর এছাড়া সাধারণভাবে যা করা যেতে পারে, সেটা হল–যেখানে ‘স্মগ’ বেশি, সেই সব জায়গা পারলে এড়িয়ে যাবেন। পারলে মুখে চাপা দিন। মুখে মাস্ক বা স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। গাড়িতে ভ্রমণ করলে এসি চালাবেন। কারণ গাড়িতে এসি চালানো থাকলে ভিতরের বাতাস ফিল্টার হয়ে যায়, যদিও ঠান্ডার মাত্রাটা দেখে নিতে হবে। তবে শেষে বলব, বায়ুদূষণের মতো বড় সমস্যা রোধে প্রশাসনের সক্রিয় হওয়া সর্বাগ্রে প্রয়োজন।’’