বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: ভারতের ভয়াবহ করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) ও তাঁর সরকারকেই দায়ী করল আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিষয়ক পত্রিকা ‘ল্যানসেট’ (Lanchet)। শনিবার ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, মোদি সরকার যেভাবে কোভিড পরিস্থিতিকে খাটো করে দেখেছে তাতেই ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে পেরেছে। ল্যানসেটের সম্পাদকীয়তে সরাসরি মোদি সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ ভারত নিজেই ডেকে এনেছে।
ল্যানসেটের সম্পাদকীয়র বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে করোনা মোকাবিলায় ভারত যে সাফল্য পেয়েছিল তাতে তাদের আত্মতুষ্টি এসে যায়। এপ্রিলের গোড়া পর্যন্ত ভারত সরকার করোনা মোকাবিলায় কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই করেনি। করোনা মোকাবিলার যে টাস্কফোর্স তার বৈঠক পর্যন্ত ডাকা হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন যে বলেছিলেন মহামারীর শেষের শুরু হয়েছে, সেকথাও উল্লেখ করেছে ল্যানসেটের সম্পাদকীয়। ল্যানসেটের বক্তব্য, করোনার নতুন প্রকার যে ‘সুপার স্প্রেডার’ সেটা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও মোদি সরকার সব রকম ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সমাবেশে অনুমতি দিয়ে গিয়েছে। এব্যাপারে যখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় মোদি সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে তখনই তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে বলে ল্যানসেট উল্লেখ করেছে। মোদি সরকার কোনও সমালোচনা শুনতে চায় না বলেও তাদের অভিযোগ।
[আরও পড়ুন: কেটেছে জটিলতা, শীঘ্রই পিএম-কিষাণ যোজনার ২ হাজার টাকা পাবেন বাংলার কৃষকরা!]
ল্যানসেট জানিয়েছে, ‘দ্য ইন্সটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’ জানিয়েছে, ভারতে আগামী ১ আগস্টের মধ্যে করোনায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হবে। ল্যানসেটের অভিযোগ, এই মৃত্যুমিছিলের জন্য মোদি সরকারই দায়ী থাকবে। কারণ, তারাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে এইভাবে দেশে ছড়িয়ে পড়তে দিয়েছে। বস্তুত, শনিবারই ভারতে দৈনিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে রেকর্ড হয়েছে। একদিনে মৃত্যু ৪ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। মোট মৃত্যু আড়াই লক্ষ ছুঁতে চলেছে। কবে এর থেকে মুক্তি মিলবে তার কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের প্রতি পাঁচটি জেলার মধ্যে দু’টি জেলাতে পজেটিভিটির হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বহু অঞ্চলে পজিটিভিটি ৩০ শতাংশ পেরিয়েছে।
এদিকে দেশের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ফোন করে আলোচনা সারছেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত তিন দিনে দেশের ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফট্যানেন্ট গভর্নরের সঙ্গেও আলোচনা সেরেছেন তিনি। শনিবারও দেশের চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে সেখানকার করোনা পরিস্থিতি এবং তা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্যগুলি কীভাবে এগোচ্ছে সে বিষয়ে বিশদে খোঁজ খবর নিয়েছেন মোদি। এদিন যে চার রাজ্যের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, সেই তালিকায় সদ্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়া তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এ কে স্ট্যালিনের নামও রয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেননি প্রধানমন্ত্রী। এমনকী রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মমতা ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে দুটি চিঠি লিখলেও প্রধানমন্ত্রীর তরফে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়নি। তবে, শুক্রবার রাতে মোদিকে পাঠানো মমতার চিঠির উত্তর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। সেই চিঠিতে অবশ্য বাংলার মেডিক্যাল অক্সিজেন কোটা বৃদ্ধি বা সকলকে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার যে দাবি মমতা দুটি চিঠিতে জানিয়েছেন তা মানা হয়নি।