shono
Advertisement
PM Modi

তেল-তরবারি-তিতিক্ষা! পুতিনের সমীকরণের সফর কেন মোদির 'অগ্নিপরীক্ষা'?

বৃহস্পতিবার ভারত সফরে এসেছেন ‘বন্ধু’ পুতিন।
Published By: Biswadip DeyPosted: 11:15 PM Dec 04, 2025Updated: 11:15 PM Dec 04, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বিমানবন্দরেই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পুতিনের এই সফরকে মোদির জন্য 'অগ্নিপরীক্ষা' বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা এই সফরের সমীকরণ মাথায় রেখেই আগামিদিনে বিশ্ব-কূটনীতির অঙ্ক সাজাতে হবে মোদিকে। ওয়াকিবহাল মহলের নজর থাকবে বিশেষ কয়েকটি দিকে।

Advertisement

তেল কূটনীতি

তেল-কূটনীতি পুতিনের এই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে। আসলে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা ও পশ্চিমি বিশ্বের চাপানো নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কো থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল কিনেছে নয়াদিল্লি। তাও বিশেষ ছাড়ে। কিন্তু এর ‘বদলা’ নিতেই ট্রাম্প ভারতের উপরে লাগাতার ‘শুল্কবোমা’ নিক্ষেপ করছেন। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি তেল কেনা কমিয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে ক্রেমলিনের। সুতরাং, রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখার বিষয়েও ভারতের প্রতিশ্রুতি আদায়ের দিকেও লক্ষ্য থাকবে পুতিনের। অন্যদিকে, ছাড়ের কারণে সস্তায় রুশ তেল কিনতে পেরে লাভবান হচ্ছে নয়াদিল্লিও। ফলে আগামিদিনেও নয়াদিল্লি তেল কেনা বজায় রাখতে চায়।

তরবারি

রাশিয়ার থেকে জোড়া-ইঞ্জিন স্টিলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সুখোই এসইউ-৫৭ কেনার ব্যাপারেও কথা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা ‘সুদর্শন চক্র’ এস-৪০০ নিয়ে নয়া চুক্তির বিষয়ে কথা হবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আরও দুই থেকে তিনটি এস-৪০০ সরবরাহের বিষয়ে প্রস্তাব করতে পারে মস্কো। এই বিষয়ে দিল্লি রাজি হলে রুশ সমরাস্ত্রে নির্ভরতা বাড়বে ভারতের। এছাড়াও মনে করা হচ্ছে, সিঙ্গল ইঞ্জিন যুদ্ধবিমান এসইউ-চেকমেট সরবরাহের প্রস্তাবও দিতে পারে রাশিয়া। কিন্তু অ্যদিকে দেখলে ভারত শিগগিরি আমেরিকা থেকে জ্যাভলিন ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল কিনছে। মোদিকে এফ-৩৫ বেচতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিনও তৈরি করতে চাইছে ওয়াশিংটন। তাছাড়া চিনের সঙ্গে রাশিয়ার 'বন্ধুত্বে'র বিষয়টিও অজানা নয় নয়াদিল্লির। ফলে এটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে যে চিনের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সহযোগী হিসেবে কিন্তু পাশে পাওয়া যাবে আমেরিকা। বেজিংকে প্রতিহত করতেই অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান এবং আমেরিকা একজোট হয়ে গড়েছে কোয়াড। অস্ত্রসম্ভারে তাই দুই দিকেই সমতা রাখতে হবে ভারতকে। অন্যদিকে এভাবে রাশিয়া-আমেরিকার উপরে অস্ত্র-নির্ভরতায় ধাক্কা খাচ্ছে মোদির 'আত্মনির্ভরতা'র বার্তাও। সেদিকটাও বজায় রেখে চলতে হবে। ফলে এই চাপ মোদিকে নিতেই হচ্ছে। যা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

তিতিক্ষা

মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয়ও উঠে আসবে পুতিন-মোদির বৈঠকে। ভারত বরাবরই যুদ্ধের বিরোধিতা করে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে। এবারও নয়াদিল্লি সেদিকেই জোর দেবে বলেই ধারণা। তবুও সেই অর্থে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা কিন্তু এযাবৎ করেনি ভারত। ফলে ইউক্রেনের মতো দেশ নয়াদিল্লির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। প্রশ্ন উঠছে, গ্লোবাল সাউথের মুখ কি আদৌ ভারত? অতিরিক্ত রুশ নির্ভরতা আমেরিকা ও পশ্চিমি দেশগুলিকে সন্দিহান করে তুলেছে। এদিকে রুশ-ইরান (শিয়া) অক্ষের আরও কাছাকাছি এসে সৌদি আরব-সহ মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নি দেশগুলির সন্দেহ বাড়িয়েছেন মোদি।

সমতা বজায় রাখা

'কৌশলগত স্বাধীনতা' বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ নয়াদিল্লির। অদূর ভবিষ্যতে তেমন কোনও চিনের সঙ্গে ভারতের তেমন কোনও সংঘাতের ছবি তৈরি হলে আমেরিকাকেও প্রয়োজন পড়বে। এটা ভালোই জানেন মোদি। তাই সবদিকে সমতা রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে তাঁকে। আর এই পুরো সমীকরণই পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় মাথায় রাখতে হবে মোদিকে। নিঃসন্দেহে যা 'অগ্নিপরীক্ষা' বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • পুতিনের ভারত সফরকে মোদির জন্য 'অগ্নিপরীক্ষা' বলে মনে করা হচ্ছে।
  • কেননা এই সফরের সমীকরণ মাথায় রেখেই আগামিদিনে বিশ্ব-কূটনীতির অঙ্ক সাজাতে হবে মোদিকে।
  • ওয়াকিবহাল মহলের নজর থাকবে বিশেষ কয়েকটি দিকে।
Advertisement