সোমনাথ রায়, নাগপুর: গীতাপাঠ ও ফুটবল খেলা প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) বাণীতে আপত্তি? বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে নিজেদের একেবারেই জড়িয়ে ফেলতে নারাজ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)। নাগপুরের সদর দপ্তরের দায়িত্বে থাকা অন্যতম শীর্ষ ‘সেবক’ অজয় জালতাডে এই প্রসঙ্গে বললেন, “বিজেপি রাজ্য সভাপতি কী বলেছেন, তার দায় আমরা কেন নিতে যাব? উনি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত কথা বলেছেন।”
নাগপুরের (Nagpur) মহল এলাকায় সংঘ বিল্ডিং রোডের ড. হেডগেওয়াড় ভবনে কথা হচ্ছিল অজয়ের সঙ্গে। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “স্বামীজি শুধু একজন সন্ন্যাসীই নন, ছিলেন একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, দার্শনিক। তাঁর বিভিন্ন বাণীর, বক্তব্যের ব্যাপ্তি অনেক। বুঝতে হবে, উনি ঠিক কোন প্রসঙ্গে, কোন আঙ্গিকে, কী কথা বলেছেন।” হাজার হলেও বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তাই এর থেকে বেশি ভর্ৎসনা না করলেও কড়া ভাষায় সুকান্তর বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করলেন অজয়।
[আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে এসএসকেএমে মুখ্যমন্ত্রী]
মুখে যতই নিজেদের ভলান্টিয়ার বা সেবক হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হোক, আদতে তো তারাই কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির নীতি নির্ধারক। এহেন এক সংগঠনের সর্বভারতীয় সদর দপ্তরে তাই স্বাভাবিক নিয়মেই নিয়মের কড়াকড়ি। কী প্রয়োজনে হেডগেওয়াড় ভবনে আগমন? কার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যাওয়া? অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছে? এই ধরনের হাজারও উত্তর দেওয়ার সময় পাশ থেকে ভবনের ভিতর ঢুকছিলেন এক ‘অচেনা হোতা’। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা শুনেই বোঝা গেল তা। সেই ব্যক্তিকে মূল ফটকের রক্ষীরা জানালেন, প্রতিবেদক কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি চুপিচুপি কিছু বলতেই ভিজিটিং কার্ড হাতে নিয়ে ভিতরে গেলেন এক রক্ষী। কিছুক্ষণ বাদে ওয়াকিটকিতে এল বার্তা। ‘আসতে দেওয়া হোক আগন্তুককে।’
রক্ষীদের নির্দেশে সিকিওরিটি রুমে গিয়ে ব্যাগ ও শরীর স্ক্যান করিয়ে, রেজিস্টারে নাম লেখার পর এক রক্ষী বললেন, “কোনও ছবি তুলতে পারবেন না কিন্তু।” সম্মতি জানিয়ে ভিতরে ঢুকতেই যে ছবি সামনে এল, তা দেখার পর আফসোসের কোনও সীমা ছিল না। ডান হাতের মাঠে পড়ন্ত বেলায় ফুটবল নিয়ে দাপাদাপি করছিল জনা ১২-১৪ কিশোর। মাথায় চলে এল দিনকয়েক আগে ফুটবল, গীতাপাঠ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতিকে বিকৃত করে তাঁকে অপমান করা বঙ্গ বিজেপি সভাপতির উক্তি। অজয় জালতাডের সঙ্গে কথা বলার সময় উঠল সেই প্রসঙ্গ। তিনি বললেন, “আপনারা কি ভুলে গিয়েছেন স্বামীজিকে আমরা কীভাবে সম্মান জানিয়েছি? দশ বছর আগে তাঁর জন্ম সার্ধশতবর্ষ আমরা পালন করেছি দেশজুড়ে। উনি এক মহান ব্যক্তি ছিলেন। কী ভুল বলেছেন? শুধু গীতাপাঠ করলে, বই নিয়ে বসে থাকলেই কি আধ্যাত্ম প্রাপ্তি হয়? কেউ মানুষের মতো মানুষ হতে পারে? যে বা যাঁরা স্বামীজিকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন, এর দায় সম্পূর্ণভাবেই তাঁর বা তাঁদের। এর সঙ্গে আরএসএস-এর কোনও সম্পর্ক নেই।”
শুধু ‘পেরেন্ট বডি’-র কাছে কার্যত ভর্ৎসিত হওয়াই নয়, শোনা যাচ্ছে লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ কর্মসূচি বিজেপি সভাপতির কাছে নিয়ে এসেছে অন্য এক দুঃসংবাদও। এই অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবেই ধর্মীয়। তাই নাকি আরএসএস চায়নি কোনও বিজেপি নেতা প্রত্যক্ষভাবে অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে যান। নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)কলকাতা যেতেন বিজেপি নেতা নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে। সুকান্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আয়োজকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করিয়ে দিতে।
[আরও পড়ুন: মেরামতের টাকা ‘ভুল’ অ্যাকাউন্টে! ডিপোয় আটকে ২৫০ সরকারি বাস, দুর্ভোগে যাত্রীরা]
অথচ যেদিন আয়োজকরা প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতে যান, সেদিন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি স্বয়ং উপস্থিত হয়ে যান। সাংবাদিকদের সামনে এসেও অনুষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করেন। প্রত্যক্ষভাবে গীতাপাঠ অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। এই বিষয়টিও নাকি ভালোভাবে নেয়নি হেডগেওয়াড় ভবন। আসন্ন ভোটে বিজেপির ইমেজে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাইছে আরএসএস। আসন কমে যেতে পারে এই কথা ভালই টের পাচ্ছে সংঘ পরিবার। তাই হিন্দু ভোটের বদলে তাদের প্রয়োজন সংখ্যালঘুদের সমর্থন। এই আবহে সুকান্তর সরাসরি গীতাপাঠ কর্মসূচিতে জড়িয়ে যাওয়া। তার উপর স্বামীজিকে নিয়ে মন্তব্য। সব মিলিয়ে সুকান্ত নাকি একেবারেই গুডবুকে নেই আরএসএসের।