বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভাইফোঁটার মধ্যে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের দিল্লিতে তলব করা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচি ভোটার তালিকা সংশোধন। সূত্রের খবর বাংলার প্রসঙ্গ আসতেই অবধারিতভাবে অনুপ্রবেশ ও বিএলওদের ভিতিপ্রদর্শনের বিষয় সামনে চলে আসে। বিএলওদের ভয় দেখানোর কয়েকটি অভি়যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে রাজ্যের তরফে স্বীকার করা হয়। বিষয়টি সামনে আসতেই গর্জে উঠেছে তৃণমূল।
দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, "নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা। ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে ভোটার তালিকা ম্যানুপুলেট করতে চাইছে বিজেপি। ওরা যাই করুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। এরা বাংলাদেশে ঢুকল কী করে। এর দায়িত্বে তো রয়েছে কেন্দ্র সরকার, অমিত শাহ। কী করছিল বিএসএফ? যতবার ওরা এগুলো বলবে, ততবার এদের আত্মঘাতী গোল হবে। তত ভোট কমবে। এটা তো ওদের কাজ। ভোটার তালিকা ফাইনাল করবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। আর সেটা নিয়ে রাজনীতি করতে তৃণমূলকে দোষ দেওয়া হবে কেন? প্রশ্ন তোলেন কুণাল।
সূত্রের খবর, বৈঠকে বাংলায় ২০০২-এর সঙ্গে বর্তমান ভোটার তালিকার ম্যাচিং এবং ম্যাপিংয়ের প্রসঙ্গও উঠে আসে। রাজ্যে বর্তমান ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লক্ষ। এর মধ্যে তালিকা সংশোধনের জন্য ম্যাচিংয়ের কাজ করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৩ কোটি ৯৬ লক্ষ ভোটারের নাম ২০০২ ও বর্তমান ভোটার তালিকা দু’টি জায়গাতেই রয়েছে। অর্থাৎ ম্যাচিংয়ের হার ৫২ শতাংশ। বিভিন্ন জেলার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এই হার ৫০ শতাংশ, উত্তর ২৪ পরগনায় ৪৪, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭২ শতাংশ। আবার উত্তর কলকাতায় হার ৫৫.৩৫ শতাংশ। ‘স্যর’-এর কাজ সহজ করার জন্য বিহারের অভিজ্ঞতা থেকে কমিশনের নির্দেশে রাজ্যগুলি এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিহারে এই ম্যাচিংয়ের গড় হার ৬৫ শতাংশ ছিল। কোনও কোনও জেলায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ম্যাচিং হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সেই হার যথেষ্ট কম। সীমান্তবর্তী রাজ্য হওয়ার জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন কমিশনের আধিকারিকরা। বাংলায় ‘SIR’ করার ক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) নিরাপত্তার প্রসঙ্গ উঠে আসে বলে জানা গিয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই একাধিক বিএলও স্থানীয় ভাবে রাজ্যের শাসক ও বিরোধী দলের হুমকির মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কমিশনের কাছে। কলকাতার পার্ক সার্কাস, খিদিরপুর, কসবার মতো এলাকা থেকেও এমন অভিযোগ এসেছে। কমিশন সূত্রের খবর, এই সব এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএলওদের কাছে চাপ আসছে, আধার কার্ড নিয়ে ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় তুলে দিতে হবে। সম্প্রতি ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী রাজ্য সফরে এসে পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম,বাঁকুড়ার বিএলওদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেও বিএলওরা নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছিলেন।
কমিশন চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিমবঙ্গে নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধনের শুরু করতে। পাশাপাশি আর কোন কোন রাজ্যে সমীক্ষা চালু হতে পারে, তা নিয়েও আলোচনা হবে বৈঠকে। তাই নির্বাচন কমিশনের এই দুই দিনের বৈঠকের ফলাফলের দিকেই এখন তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বৈঠক শেষে বাংলায় ‘SIR’ শুরুর ঘোষণা হয় কি না, সেটাও এখন বড় প্রশ্ন।
