বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: কংগ্রেসের অন্দরে ‘কর্ণাটক কাহিনী’ অব্যাহত। দিনভর রুদ্ধশ্বাস নাটক। একের পর বৈঠক। কিন্তু সমাধানসূত্র বের করতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা রাহল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গের। দফায় দফায় বৈঠক করেও কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কুরসি নিয়ে বিবাদমান দুই নেতাকে নিরস্ত করতে নাজেহাল হতে হল তাঁদের। রাত পর্যন্ত জটিলতা না কাটায় বুধবার ফের দু’জনের সঙ্গে কথা বলবে হাইকম্যান্ড। সূত্রের খবর, শেষে হস্তক্ষেপ করেন সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমারকে (DK Shivkumar) বোঝানোর দায়িত্ব ম্যাডামের ওপর ছেড়ে দেন খাড়গে। সোনিয়া ও রাহুল পরস্পরের মধ্যে কথা বলে আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে এআইসিসি সূত্রে খবর। তাঁর আগে অবশ্য দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে বৈঠক করতে পারেন কংগ্রেস সভাপতি।
কর্ণাটক কাহিনীতে নতুন মোড় নেয় সোমবার গভীর রাতে। আমকাই অসুস্থতাক কারণ দেখিয়ে দিল্লি আসা স্থগিত করেন ডিকে শিবকুমার। মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে পৌঁছবেন বলে হাইকম্যান্ডকে জানান। সেদিনই অবশ্য দিল্লি পৌঁছে খাড়গের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দাবিদার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। তবে ডিকে শিবকুমারের অপেক্ষায় না থেকেই মঙ্গলবার খাড়গের দিল্লির বাসভবনে বৈঠকে বসেন রাহুল গান্ধী, কেসি বেনুগোপাল, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, সুশীল কুমার শিন্ডেরা। সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী ও বেনুগোপাল সিদ্দারামাইয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্ত খাড়গে ও সোনিয়া গান্ধী লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha) কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে সায় দেন। তাঁদের যুক্তি, লোকসভা ভোটের আগে রাজস্থানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হোক তা তাঁরা চাইছেন না। কোনও স্থায়ী সমাধানসূত্র বের করার পক্ষে সোনিয়া ও খাড়গে।
[আরও পড়ুন: দিল্লির আফগান দূতাবাসে জোর করে ঢোকার চেষ্টা তালিবান ‘কূটনীতিকে’র, রুখে দিল কর্মীরাই!]
অন্যদিকে, রাহুলের যুক্তি যেহেতু বিধায়কদলের বৈঠকে সিদ্দারামাইয়া শিবকুমারের থেকে অনেক বেশি ভোট পেয়েছেন তাই তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসানো হোক। ডিকেকে উপমুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হোক। আর একান্তই সম্ভব না হলে দু’জনকে আড়াই বছর করে মেয়াদ ভাগ করে দেওয়া হোক। কিন্তু রাহুলের কোনও যুক্তির পক্ষ সায় দেননি ম্যাডাম (সোনিয়া গান্ধী)। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দাবিদার দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে সমাধানসূত্র বের করতে হবে। তবে এদিন খাড়গের সঙ্গে রাহুলের বৈঠক শেষ হতেই প্রথমে শিবকুমার ও পরে সিদ্দারামাইয়ার (Siddaramiah) সঙ্গে আলাদা আলাদ করে কথা বলেন কংগ্রেস (Congress) সভাপতি। শিবকুমার বৈঠক শেষে জানান, “তিনি কোনও চাপ তৈরি করতে চাননা। কারণ কংগ্রেস দল তাঁর মায়ের সমান। দল যে দায়িত্ব দেবে তাই তিনি পালন করবেন।” দলের জন্য তাঁর অবদানের কথা হাইকম্যান্ড স্মরণে রেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন।
[আরও পড়ুন: ৬ নয়, এবার থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি হোক ৯ মাসের, প্রস্তাব নীতি আয়োগের]
অন্যদিকে, সিদ্দারামাইয়া ও শিবকুমারকে নিয়ে যখন নাস্তানাবুদ অবস্থা হাইকমান্ডের তখন নয়া সংকট কংগ্রেসে। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারের দাবি জানিয়েছে রাজ্যের লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন বীরশিব মহাসভা। এবার কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে উজাড় করে কংগ্রেসকে সমর্থন করে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়। তাঁদের সমর্থন বিজেপির পরাজয় কার্যত ভোটের আগেই নিশ্চিত করে দেয়। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ১৭ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের। এবার কংগ্রেসের ঝুলিতে আসা ১৩৫ আসনের মধ্যে ৩৪ জন লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের। তাই তাঁদের সম্প্রদায় থেকেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক বলে দাবি করেছে বীরশিব মহাসভা। কিন্তু সিদ্দারামাইয়া বা শিবকুমার দু’জনেই লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন না। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার দাবি করে এদিন বিক্ষোভ দেখান দলিত সম্প্রদায়ের নেতা সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক জে পরমেশ্বর। এছাড়াও উপমুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার দাবি করেছে মুসলিম বিধায়করা। ফলে সময় যতেই গড়াচ্ছে কর্ণাটককে কেন্দ্র করে জটিলতা চরম আকার ধারণ করছে।