সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভার পুনরাবৃত্তি রাজ্যসভাতেও। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার বিতর্কের পর ভোটাভুটিতে পাশ হয়ে গেল ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বিলটির পক্ষে ভোট দিলেন ১২৮ জন সদস্য। বিপক্ষে ভোট দিলেন ৯৫ জন। প্রায় ভোররাত পর্যন্ত অধিবেশনে নজিরবিহীন ভাবে ভোট দিলেন রাজ্যসভার সব সদস্য।
রাজ্যসভায় বিল পেশের সময় কিরেন রিজিজু দাবি করেন, নতুন সংশোধনী পাশ হয়ে গেলে ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে রোজগার বাড়বে বোর্ডের। তিনি দাবি করেন, ২০০৬ সালে সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে ৪.৯ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল। এ থেকে আয় হওয়া উচিত ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সেবার মাত্র ১৬৩ কোটি টাকা আয় হয় সরকারের। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার ওয়াকফ আইন সংশোধন করেও আয় বাড়েনি। সেসময় ৮.৭২ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে আয় ছিল মাত্র ১৬৬ কোটি টাকা। রিজিজুর দাবি, নতুন আইনে সেই রাজস্বই বাড়বে। কোটি কোটি সাধারণ মুসলমানের উপকার হবে। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মুসলিম মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে রেখেছে কংগ্রেস।
বিরোধীদের তরফে বিলটির বিরোধিতা করেন খোদ বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর কথায়, "বিজেপি আসলে বিলটি এনে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা এবং সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে। বিলটির মূল উদ্দেশ্যই হল, মুসলিমদের থেকে তাঁদের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবসায়ী বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়া।" বিলটিকে অসাংবিধানিক বলেও দাবি করেন তিনি। তৃণমূলের তরফে বিলটির বিরোধিতা করেন রাজ্যসভার সাংসদ নাদিমূল হক। তিনি বলেছেন, "এই বিল একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে। আজ ওয়াকফ জমির দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে, আগামিকাল একই আইন গির্জা, মন্দির, গুরুদ্বারগুলিতেও কার্যকর করা হতে পারে।" ওয়াকফ বিলকে প্রথম থেকে সংবিধান বিরোধী বলে দাবি করে আসছে তৃণমূল। একই সুরেই নাদিমূল বলেছেন, "এটি কোনও ধর্মীয় বিষয় নয়। এটি একটি সাংবিধানিক সমস্যা। ওয়াকফ সংশোধনী বিলে অনেক ত্রুটি রয়েছে। এতে ধর্ম-বহির্ভূত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অর্থাৎ সংবিধানের মৌলিক ধারণার বিরুদ্ধে। এই বিল আইনি প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করবে। এর অধীনে বৈষম্য থাকবে। এই বিলটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ। ওয়াকফের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যকে সরকারের অধীনে আনার জন্য এই বিল আনা হয়েছে। এই দেশকে ভাগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।" আরেক তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবও বিলের খামতি তুলে ধরেন।
সব মিলিয়ে ১২ ঘণ্টার বেশি বিতর্কের পর বিরোধীরা ডিভিশন চাইলে ভোটাভুটি হয়। এমনিতে ভোটাভুটিতে এনডিএ জয়ী হবে সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। কারণ নীতীশ কুমারের জেডিইউ আগেই ঘোষণা সরকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল, একই পথে হাঁটে টিডিপিও। এমনকী ওড়িশার বিরোধী দল বিজেডিও দলীয় সাংসদদের কোনও হুইপ জারি করেনি। বিজেডির সাংসদরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভোট দিয়েছেন। শেষমেশ বিলটির পক্ষে ১২৮ এবং বিপক্ষে ৯৫টি ভোট পড়ে।