সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin's India Visit)। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে পালম বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে, বিশেষত অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সময়ে পুতিনের প্রথমবারের ভারত সফর একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর দু'দিনের সফর ঘিরে প্রত্যাশা বাড়ছে। জেনে নেওয়া যাক পুতিনের এই সফর ঘিরে কী কী প্রত্যাশা রয়েছে।
বাণিজ্য ঘাটতি কমানো
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এর প্রধান কারণ ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করলেও রাশিয়ার ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ অনেক কম। রাশিয়ায় তার রপ্তানি বছরে মাত্র ৪৮৮ কোটি ডলার। তাই নয়াদিল্লির লক্ষ্য মস্কোয় সামুদ্রিক পণ্য, আলু, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ওষুধের মতো দ্রব্যের রপ্তানি বাড়ানো।
জনশক্তি গতিশীলতা চুক্তি চূড়ান্ত করা
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে একটি জনশক্তি গতিশীলতা চুক্তি চূড়ান্ত করা। যার লক্ষ্যই হল রাশিয়ার শ্রম ঘাটতি মেটাতে ভারত থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী নিয়োগের এক আইনগত পরিকাঠামো নির্মাণ। এই চুক্তির ফলে নির্মাণ, উৎপাদন এবং অন্যান্য শিল্প খাতে হাজার হাজার ভারতীয় কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
বিশ্ববাণিজ্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। সেটাকেই চ্যালেঞ্জ জানাতে চান পুতিন। সেই লক্ষ্যেই ২০১৫ সালে তৈরি হয় 'ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়ন'। যেখানে রাশিয়া ছাড়া রয়েছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান ও কিরঘিজস্তান। এই ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছে। পুতিনের ভারত সফরে এই নিয়েও চূড়ান্ত কথা হয়ে যেতে পারে।
ভারত-রাশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণ
নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশই সম্প্রসারিত হচ্ছে। গত সপ্তাহে কাজানে ভারতের নতুন দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবং ইয়েকাটেরিনবার্গে আরেকটি দূতাবাসে শীঘ্রই চালু হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রতিরক্ষা চুক্তি
সাধারণ ভাবে এই ধরনের বৈঠকে প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণা করা হয় না। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, এবার মোদি-পুতিন সংলাপ তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। সেখানে এই বিষয়েও কথা চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে ২০০২ সাল থেকেই সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে জোর দিয়েছে দুই দেশ। এই নিয়ে মোদি ও পুতিনের মধ্যে আলোচনা হতে পারে বলেই সূত্রের দাবি।
তেল-কূটনীতি নিয়ে আলোচনা
তেল-কূটনীতিও পুতিনের এই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে চলেছে। আসলে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আমেরিকা ও পশ্চিমি বিশ্বের চাপানো নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মস্কো থেকে প্রচুর পরিমাণে তেল কিনেছে নয়াদিল্লি। তাও বিশেষ ছাড়ে। কিন্তু এর 'বদলা' নিতেই ট্রাম্প ভারতের উপরে লাগাতার 'শুল্কবোমা' নিক্ষেপ করছেন। এই পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লি তেল কেনা কমিয়ে দিতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে ক্রেমলিনের। সুতরাং, রুশ তেল কেনা অব্যাহত রাখার বিষয়েও ভারতের প্রতিশ্রুতি আদায়ের দিকেও লক্ষ্য থাকবে পুতিনের।
এস-৪০০ ও সুখোই এসইউ-৫৭
রাশিয়ার থেকে জোড়া-ইঞ্জিন স্টিলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সুখোই এসইউ-৫৭ কেনার ব্যাপারেও পুতিনের এই সফরে কথা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাকিস্তানকে সায়েস্তা করা ‘সুদর্শন চক্র’ এস-৪০০ নিয়ে নয়া চুক্তির বিষয়ে কথা হবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীকে আরও দুই থেকে তিনটি এস-৪০০ সরবরাহের বিষয়ে প্রস্তাব করতে পারে মস্কো। এই বিষয়ে দিল্লি রাজি হলে রুশ সমরাস্ত্রে নির্ভরতা বাড়বে ভারতের। এছাড়াও মনে করা হচ্ছে, সিঙ্গল ইঞ্জিন যুদ্ধবিমান এসইউ-চেকমেট সরবরাহের প্রস্তাবও দিতে পারে রাশিয়া।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা
মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয়ও উঠে আসবে। ভারত বরাবরই যুদ্ধের বিরোধিতা করে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছে। এবারও নয়াদিল্লি সেদিকেই জোর দেবে বলেই ধারণা।
