সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক রাশ আতঙ্ক বুকে নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরতে সফল হয়েছেন বহু ভারতীয়। কর্ণাটকের হাভেরি জেলার নবীনেরও বিশ্বাস ছিল, তাঁকে উদ্ধার করে বাড়ি ফেরানো হবে শীঘ্রই। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে রুশ গোলায় নিমেষে সব প্রতীক্ষার সমাধি ঘটল। খারকভে প্রাণ হারালেন মেডিক্যালের ভারতীয় ছাত্র। ছেলের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকস্তব্ধ পরিবার। সহানুভূতি জানাতে ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
খারকভের একটি প্রশাসনিক ভবনের কাছেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতেন নবীন শেখারাপ্পা জ্ঞানাগোদার (Naveen Shekharappa Gyanagoudar)। তবে এমন যুদ্ধের আবহে নিরাপদে থাকার জন্য কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ফ্ল্যাটের নিচে একটি বাঙ্গারে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। সকাল সাড়ে ছ’টায় নাইট কারফিউ শেষ হচ্ছে খারকভে। কারফিউ উঠে গেলে খুলছে দোকানপাট। সুযোগ বুঝে খাবার ও জল সংগ্রহ করে রাখতে হচ্ছে সকলকে। কিন্তু মেডিক্যালের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নবীনের কাছে তেমন টাকাকড়িও ছিল না। সকাল ৮টা নাগাদ এক বন্ধুকে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করে দিতে বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর বাঙ্গারে আর খাবার বা জল অবশিষ্ট নেই। তাই খাবার কিনতে ওই এলাকারই এক দোকানের বাইরে লম্বা লাইনে গিয়ে দাঁড়ান ২২ বছরের নবীন। আর সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ঘটে যায় সেই ঘটনা। রুশ গোলায় গুঁড়িয়ে যায় প্রশাসনিক ভবন। সেই আগুনেই ঝলসে যান নবীনও।
[আরও পড়ুন: রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে গুঁড়িয়ে গেল ইউক্রেনের প্রশাসনিক ভবন, ভিডিও দেখে শিউরে উঠছে দুনিয়া]
খারকভের ছাত্রদের কো-অর্ডিনেটর জানান, একজন ইউক্রেনীয় মহিলা ফোন করে খবরটা দেন। নবীনের মোবাইল থেকেই ফোন করেছিলেন তিনি। জানান, ফোনটি যাঁর, তাঁকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে এই প্রথম কোনও ভারতীয়র মৃত্যুর খবর সামনে আসে।
এই বিস্ফোরণের ঘণ্টা তিনেক আগেই পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন খারকভ জাতীয় মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র নবীন। আশা করেছিলেন, খুব তাড়াতাড়ি ভারত সরকার তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হল না। রাজায়-রাজায় যুদ্ধের (Russia Ukraine War) মাঝে ছেলেকে হারিয়ে কর্ণাটকে শোকে কাতর তাঁর পরিবার। নবীনের বাড়িতে ফোন করে সহানুভূতি জানান কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই। বলেন, “আমি শোকস্তব্ধ।” ফোন করে পরিবারের কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও (PM Modi)। তবে কীভাবে নবীনের দেহ দেশে ফেরানো হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু সে দেশে আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরাতে বায়ুসেনাকে নামার নির্দেশ দিয়েছেন মোদি। নবীনের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।