সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হঠাৎই সুর নরম করেছে বেজিং। প্যাংগংয়ে সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে এই মুহূর্তে আর তাল ঠুকছে না তারা। নরম হয়েছে পাকিস্তানও (Pakistan)। আর এর পিছনে জো বাইডেনের ছায়াই দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। অনুমান করা হচ্ছে, বাইডেন (Joe Biden) সীমান্ত নিয়ে কী মতামত দেন সেই বুঝে জল মেপেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে জিনপিং আর ইমরানের দেশ।
সদ্যই ভারত-চিন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে চিন (China)। সরে গিয়েছে লালফৌজ, তাদের সমস্ত তল্পিতল্পা সমেত। কিন্তু শি জিনপিংয়ের দেশ এত সহজে হার মানার পাত্র নয়। বিশেষত ভারতের সঙ্গে পরমাণু অস্ত্র নিয়েই যেখানে তাদের শীতল যুদ্ধ বজায় রয়েছে। গত বছর থেকেই এই লড়াইটা আরেকটু জোরদার হয়েছে। ১৯৭০-এর পর যেমনটা আর দেখা যায়নি যা গত বছর দেখা যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার তিন প্রতিবেশী দেশ বোঝার চেষ্টায় রয়েছে, ওয়াশিংটন কী ভাবছে।
[আরও পড়ুন: সীমান্তে স্থায়ী সমাধানই লক্ষ্য? ফোনে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ জয়শংকরের]
সদ্য ট্রাম্প শাসনে ইতি টেনে মার্কিন মসনদে বসেছেন জো বাইডেন। মনে করা হচ্ছিল, এবার হয়তো চিনের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারে আমেরিকা। কিন্তু সেই জল্পনায় জল ঢেলে বেজিংয়ের উপরে আরও চাপ বাড়িয়ে তুলেছে ওয়াশিংটন। তাতে ফলও মিলেছে। সরাসরি সংঘাতের পথে না হেঁটে এবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চাইছে শি জিনপিং প্রশাসন। ভারতের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখাও হয়তো তারই অন্যতম পদক্ষেপ, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ হোয়াইট হাউস থেকে বেজিংয়ে ফোনটা যাওয়ার কয়েকদিন আগেই তা এসেছিল দিল্লি লোককল্যাণ মার্গের সাত নম্বর ভবনটিতে।
ইসলামাবাদও সম্ভবত একই ভাবনাতেই রয়েছে। কারণ বৃহস্পতিবার ভূস্বর্গের সীমান্তে যুদ্ধ-বিরতিতে সায় দিয়েছে তারাও। ২০০৩ সালে ভারত-পাক সীমান্তের ৭৪২ কিলোমিটার জুড়ে যে শান্তি স্থাপনের চুক্তি নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ করেছিল, ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ সুবিধা কেন্দ্র তুলে নেওয়ার পরই ফের তা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার তারাও একটু নরম হয়েছে। ফলে এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, ওয়াশিংটনেরই জল মাপছে ভারতের দুই প্রতিবেশী। পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ সহকারী ও উপদেষ্টা মঈদ ডব্লিউ ইউসুফ অবশ্য সাদা মুখে জানিয়েছেন, ‘‘এতে অনেক নিরপরাধ মানুষের প্রাণরক্ষা হবে।’’ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বাইডেন প্রশাসনও।
[আরও পড়ুন: ভোরের আজান কে দেবে? এই বিবাদের জেরে মসজিদে ঢুকে মৌলবীর গলা কেটে খুন!]
সম্প্রতি আমেরিকা-চিন সম্পর্ক নিয়ে একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানেই পরিচিত সংঘাতের সুরের বদলে তাঁর গলায় শোনা যায় আপসের আর্জি। চিনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক দল ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আবেদন জানান চিনা বিদেশমন্ত্রী। তিনি বলেন, “চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ও রাজনৈতিক কাঠামোর বিরুদ্ধে কুৎসা বন্ধ করুক আমেরিকা। হংকং, শিনজিয়াং ও তিব্বতের মতো ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুক দেশটি। চিনা সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তাইওয়ানের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকুক ওয়াশিংটন।” তবে গতানুগতিক কূটনৈতিক তর্কের শেষে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী চিন বলেই বার্তা দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী ওয়াং।
চিনা সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবাল টাইমস’ সূত্রে খবর, বাইডেন ও জিনপিংয়ের বার্তা দু’দেশের সম্পর্ক উন্নত করতে বড় পদক্ষেপ বলেই মত চিনা বিদেশমন্ত্রীর। বিশ্লেষকদের মতে, আমেরিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে শুল্কযুদ্ধ চললে ফল যে খুব একটা ভাল হবে না, তা মেনে নিয়েছে চিন। পাশাপাশি, ভারত-সহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন মিত্রদেশের জোটও চিনাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। ফলে আপাতত আমেরিকার সুরেই মিষ্টতা বজায় রাখতে চাইছে ভারতের দুই প্রতিবেশী।