সুকুমার সরকার, ঢাকা: কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম। তাঁকে হত্যা করার পর টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয় দেহ। যা এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আর আনোয়ারুলের দেহাংশ না পাওয়ায় সাংবিধানিক জটিলতা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সংসদে। ঝিনাইদহ-৪ আসনটিকে ‘শূন্য’ বলে ঘোষণা করা যাচ্ছে না। কারণ, শূন্য ঘোষণার আগে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এদিকে, জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইটে আনোয়ারুলের নাম সোমবার ফের যুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সেখান থেকে তাঁর তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত সফরে কলকাতায় গিয়েছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। ১৭ মে থেকে পরিবারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন তাঁর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে উত্তর কলকাতার বরানগর থানায় একটি ডায়েরি করেন সাংসদের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এর পর আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস (ডরিন) ঢাকায় গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারস্থ হন বাবার নিখোঁজ নিয়ে। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ জানতে পারে, ১৩ মে রাতেই খুন করা হয় আনোয়ারুলকে। তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডি-কে। এর পর ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত মৃতদেহ বা দেহাংশ উদ্ধার হয়নি। ফলে তৈরি হয়েছে বিস্তর জটিলতা।
[আরও পড়ুন: ‘রেমালে’র তাণ্ডবে মৃত ১১, বাংলাদেশে বিদ্যুৎহীন অন্তত ৩০ লক্ষ]
সাধারণত, কোনও সাংসদের মৃত্যু হলে তাঁর আসন শূন্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানায় তারা। এর পর কমিশন ওই আসনে উপনির্বাচনের আয়োজন করে। কোনও আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। সংসদে শোকপ্রস্তাবও পাঠ করতে হয়। কিন্তু এসবের আগে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি। সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আবদুস সালাম জানিয়েছেন, এই সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অতীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এ জন্য তাঁরা আরও অপেক্ষা করবেন।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যৌথভাবে কাজ করছেন ভারত-বাংলাদেশের তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বাংলাদেশ থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে, বনগাঁ সীমান্ত থেকে সিআইডির জালে ধরা পড়ে এক কসাই-সহ দুজন। তাদের মধ্যে জিহাদ নামে ব্যক্তিকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ডেকে সাংসদ আনোয়ারুলকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে, পরে কুপিয়ে খুন করা হয়। শুধু তাই নয়, খুনের পর দেহ ৮০ টুকরো করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন জলাশয়ে। ফলে দেহাংশ উদ্ধারের বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তবু কলকাতা-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার জলাশয়ে তল্লাশি জারি রেখেছেন গোয়েন্দারা।