শুভঙ্কর বসু: গালের পাশে তেছড়া করে কাটা খুরের দাগ! ষন্ডা মার্কা চেহারার কুখ্যাত দর্শনধারী এক ঝাঁক অপরাধী। খাবারের লাইনে আকছার ঝামেলা, মারামারি! হিন্দি ছবির সুবাদে জেলখানা সম্পর্কে মানুষের মনে মোটামুটি এমন সব চিত্রই সেট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলের অন্দরটা আসলে কীরকম? জেলখানা মানে কী শুধুই অপরাধ জগতের কুখ্যাত কারবারিদের আখড়া? না। একেবারেই তা নয়। সোমনাথের মত বন্দীরাও রয়েছে যাদের দৌলতে কারাগারের (Correctional Home) অন্দরের ছবিটা সামান্য হলেও বদল হতে বাধ্য।
হাওড়ার যুবক সোমনাথ চক্রবর্তী। বছর সাতেক আগে একটি হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে যখন তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়েছিল তখন সে সদ্য কুড়ি পেরোনো যুবক। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু সেসব সত্ত্বেও ভেঙে পড়েনি যুবক। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে। অবশেষে মিলেছে সাফল্য। জেলে বসেই উচ্চ মাধ্যমিক (HS) পাস করেছে সে। এবার তার ইচ্ছা স্নাতক (Graduation) হওয়ার। কিন্তু যে জেলখানায় (Jail) সে বন্দি সেখানে তা সম্ভব নয়। ফলে ছেলের ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপায়িত করতে আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের (Kolkata High Court) দ্বারস্থ হয়েছেন মা কল্যাণী চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন : ‘দক্ষ হলেও মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কাজ করতে পারছেন না পুলিশকর্তারা’, ফের টুইট খোঁচা ধনকড়ের]
কিন্তু ঠিক কোন ঘটনায় জেলখানার অন্দরই ভবিতব্য হয়েছে সোমনাথের? কল্যাণীদেবীর আইনজীবী রবিশংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০১১-র ঘটনা। রাজ্য তখন সদ্য সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কল্যাণীদেবী ছিলেন সিপিএম পরিচালিত মহিলা সমিতির নেত্রী। অভিযোগ, ওই সময় হঠাৎই একদিন তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় একদল দুষ্কৃতী। কল্যাণী দেবীর উপর আক্রমণ হয়। মাকে বাঁচাতে তেড়ে যায় সোমনাথ। সে সময়ের পালটা প্রত্যাঘাতে এক দুষ্কৃতীর প্রাণ যায়। এরপর হাওড়া আদালত সোমনাথকে যাবজ্জীবন কারাবাসে নির্দেশ দেয়। যদিও সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সোমনাথের পরিবার। মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া এখনও বাকি।”
হাওড়া আদালতের নির্দেশে সোমনাথকে মেদিনীপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। এরপর মেদিনীপুর জেলেই সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে। এরপর জেল কর্তৃপক্ষকে স্নাতক হওয়ার জন্য দরখাস্ত করে। জানায়, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি বা ইগনু-র আন্ডারে গ্রাজুয়েশন করতে চায় সে। কিন্তু মেদিনীপুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়ির লোকজনকেই পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু কল্যাণীদেবীর পক্ষে প্রতিনিয়ত মেদিনীপুর যাতায়াত করে ছেলের বইপত্র ও পড়াশোনার অন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই মেদিনীপুর জেল থেকে ছেলেকে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরের আবেদন জানান কল্যাণী দেবী। গত বছর ১১ নভেম্বর কারা দপ্তর ও মেদিনীপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেন তিনি। অভিযোগ, আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও উত্তর আসেনি। ফলে সোমনাথের স্নাতক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে যায়।
[আরও পড়ুন : করোনা আক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী, ভরতি বেসরকারি হাসপাতালে]
ছেলের ইচ্ছে পূরণ করতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মা। সম্প্রতি বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে মামলাটির শুনানি হলে সমস্ত অভিযোগ শোনার পর বিচারপতি চৌধুরী পর্যবেক্ষণে বলেন, “সংশোধনাগারে বসে এক বন্দি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চাইছে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উচিত সমস্তরকম সাহায্য করা।” এরপরই এক মাসের মধ্যে সোমনাথকে মেদিনীপুর জেলা থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে স্থানান্তরের জন্য কর্তৃপক্ষকে সমস্ত রকম ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন বিচারপতি চৌধুরী।
The post স্নাতক হতে চায় জেলবন্দি ছেলে, পথ খুঁজতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ মা appeared first on Sangbad Pratidin.