শুক্রবার মুক্তি পেল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও দিতিপ্রিয়া রায়ের ছবি আয় খুকু খায়। এই ছবিতে একেবারেই নতুন অবতারে টলিউডের বুম্বাদা। ছবি নিয়ে আড্ডায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায় (Prosenjit Chatterjee)। শুনলেন শম্পালী মৌলিক
আবারও তো লুক-এ চমকে দিলেন ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতে।
প্রসেনজিৎ: (হাসি) এটা খুব কঠিন ছিল নিঃসন্দেহে। যখন আমাকে স্ক্রিপ্ট শোনানো হয় পছন্দ হয়েছিল। বাবা-মেয়ের ছবি, সেই সঙ্গে অনেক লেয়ার আছে। সৌভিকের আগের ছবিটাও আমার ভাল লেগেছিল। গ্রামে যারা লড়াই করে বাঁচছে, জীবিকানির্বাহ করছে এই মানুষগুলোকে নিয়ে তো মেনস্ট্রিমে সেভাবে ছবি হয় না। এটা আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল, ‘আয় খুকু আয়’-এর চিত্রনাট্যের মধ্যে। আধুনিক গল্প, সেই সঙ্গে একটা ইস্যু আছে। এই চরিত্রটা পেয়ে আমি দেখলাম, লোকটাকে ‘টেকো প্রসেন’ বলা হয়।
কতটা ঝুঁকির এটা আপনার সুপারস্টার ইমেজের পক্ষে?
প্রসেনজিৎ: যে চরিত্রটা আমি করেছি ‘নির্মল মণ্ডল’, এই চরিত্র করাটাই ঝুঁকির। নিশ্চয়ই আমি এর আগে অনেক রকমের চরিত্র করেছি, কিন্তু এতটা স্বাভাবিক, গ্রামের মানুষ, দিন আনি দিন খাই অবস্থা তার, এরকম লেভেলের চরিত্র করতে, নিজেকে অনেকখানি ভাঙতে হয়েছে। হিরো হিসাবে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। শুধুমাত্র তো মেকআপ নয়, হাঁটাচলা, কথা বলা, তাকানো, বসা এবং সামগ্রিক আচরণে পরিবর্তন আনতে হয়েছে আমাকে। কারণ এই মানুষগুলো হেরে যাওয়া মানুষ। কোনও মানুষের সঙ্গে দেখা হলে, তার আত্মবিশ্বাসের অভাব ফুটে ওঠে। একটা হোমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ‘মনের মানুষ’-এ আমি যেটা করতে পেরেছিলাম। নিশ্চয়ই এই ধরনের চরিত্র করার ক্ষেত্রে একটা উৎকণ্ঠা কাজ করে যে, হয়ে উঠতে পারব কিনা। এবারে মনে হয়, সত্তর-আশি শতাংশ আমি পেরেছি। ছবিটা যদি লোকের ভাল লাগে আমার অন্য ইমেজ তৈরি হবে।
বাবা-মেয়ের সম্পর্ক তো ছবির মূল বিষয়, আর কোন কোন দিক উঠে আসবে?
প্রসেনজিৎ: এই সম্পর্কের ভিতরেও টানাপোড়েন আছে। আর অবশ্যই মেসেজ আছে কিন্তু ছবিটি ‘প্রিচি’ নয়। কন্যাসন্তান জন্মালে বাবা-মায়ের কী দায়িত্ব এসে পড়ে এদেশে, আবার বাবা যদি একলা হয়, তার আর্থিক অবস্থা যদি খারাপ হয়, তাহলে দ্বিগুণ দায়িত্ব। এই সবকিছু মিলিয়েই ছবিটা। সবাইকে টানবে। কারণ এন্টারটেনিং ছবি।
এই ছবিতে আপনি এমন একজনের চরিত্রে যে লোকটা নিজে প্রসেনজিতের ফ্যান। সেইখানে পরিচালক সৌভিকের চিত্রনাট্যে কি বুম্বাদার অবদান আছে?
প্রসেনজিৎ: বেশকিছু পরিচালক আছেন, যাঁদের আমি চিনি, তাঁরা আমার সম্বন্ধে অনেক বেশি জানেন। হয়তো তাঁদের কম বয়স কিন্তু তাঁরা আমাকে রীতিমতো স্টাডি করেছেন অভিনেতা হিসাবে। দেখেছি, আমি অনেককিছু ভুলে গেলেও তাঁরা মনে রেখেছেন। সৌভিক সেরকমই। এই ছবির লোকটাকে শুধু প্রসেনজিতের ফ্যান বললে, একটু ভুল হবে। আমরা যেটা বলতে চেয়েছি, নির্মল মণ্ডলই প্রসেনজিৎ, না কি প্রসেনজিৎ-ই নির্মল? এটা নিয়ে গিমিক আছে। বাকিটা ছবি দেখে বুঝবে। প্রসেনজিতের জার্নির হালকা ইতিহাসও থাকবে ছবিতে। এখনও ইউটিউব খুললে দেখবে প্রচুর চ্যানেল আছে, যারা আমার নাচ, গান, সংলাপ চালায়। তাদের কারও নাম ছোট প্রসেনজিৎ বা জুনিয়র প্রসেনজিৎ। চ্যানেলগুলো চলছেই আমার গান, ডায়লগ কপি করে করে। একজনের কাছে শুনলাম তাঁর বাড়িতে নাকি ৭০-৮০টা চশমা আছে। আমি কোন কোন ছবিতে কী কী সানগ্লাস পরেছি সব তাঁর জানা। তিনি তাঁর বউ-বাচ্চা নিয়ে এসেছিলেন দেখা করতে। আমি নিজেও অবাক হয়েছি (হাসি)।
[আরও পড়ুন: বেসুরো গান গাওয়ায় বিপাকে হিরো আলম, শিল্পীকে গ্রেপ্তারির দাবি বাংলাদেশে ]
ট্রেলারের ফিডব্যাক দেখে কী মনে হচ্ছে?
প্রসেনজিৎ: একটা অ্যাওয়ারনেস তৈরি হয়েছে। ছবির রেজাল্ট কী হবে আমরা জানি না। কিন্তু আশা করি, বাঙালি একটা ইমোশনাল কানেক্ট পাবে।
দিতিপ্রিয়াকে কেমন লাগল?
প্রসেনজিৎ: আমি খুব হ্যাপি বললেও কম বলা হয়। দিতিপ্রিয়া মিষ্টি মেয়ে, ভাল অভিনেত্রী।
‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’ ——এই কথাটা কি আপনি এখনও বলতে চান? নাকি সেই সময়টা অনেকটা অতিক্রম করা গিয়েছে?
প্রসেনজিৎ: ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান’– এই কথাটা আমি খুব একটা বলতে চাই না কখনও। এটা রং কমিউনিকেশন হয়েছে। আমি যেটা বলার চেষ্টা করেছি, যে মানুষ সিনেমা হল-এ ফিরুন। অন্যান্য অনেক ব্যবসা-ইন্ডাস্ট্রি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অতিমারীতে, সিনেমা-থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রিও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ওটিটি এলেও আমি বলেছি, সিনেমার ম্যাজিক সবসময় কাজ করবে। এটা সাময়িক খারাপ ফেজ, যদিও সেই পিরিয়ডটা ভয়াবহ। আমি যেটা বলার চেষ্টা করেছিলাম, অনেকেই বুঝতে পারেনি। সাংবাদিক বন্ধুদের বলেছিলাম, যাঁরা সিনেমা নিয়ে লেখালিখি করেন, তাঁরা তো ইন্ডাস্ট্রির অংশ হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য আবেদন ছিল যে, খারাপ সময়ে ছবির ভাল দিকে নজর করুন তাঁরা। এই খারাপ ফেজ কাটিয়ে ওঠার জন্য। নিশ্চয়ই, ছবি ভাল হলে তাকে আটকে রাখা যায় না। আমার জীবনের অভিজ্ঞতা তাই বলে। বাংলা সিনেমা ভেঙে পড়েনি।
কী মনে হয়, বাংলা ছবির হাল ফিরছে?
প্রসেনজিৎ: বাংলা সিনেমার দর্শক চিরকাল ভাল ছিল। এখনও দর্শক যদি একটু ভাল ছবির গন্ধ পায়, ভাল কনটেন্ট পায়, তারা কিন্তু হল-এ যায়। ‘টনিক’, ‘রাবণ’, ‘কিশমিশ’, ‘অপরাজিত’ দেখেছি। আর ‘হাবজি গাবজি’ কিছুটা আমি দেখেছি। ‘দ্য একেন’ লোকের ভাল লেগেছে। ‘বেলাশুরু’ও প্রচুর মানুষ দেখেছেন। বাংলা সিনেমার দর্শক কিন্তু লয়্যাল। প্যানডেমিকের পরে নিশ্চয়ই ভয় ছিল, অ্যাপিলটা সেই কারণেই।
‘আয় খুকু আয়’-এর ট্রেলার লঞ্চের দিনে দেখা গেল, হাতিবাগানের মার্কেট থেকে প্রসেনজিৎ সানগ্লাস কিনছেন মেয়ে ‘বুড়ি’র (দিতিপ্রিয়া) জন্য। আবার ভিক্টোরিয়ার সামনে গিয়ে আপনাকে ফুচকাও খেতে দেখা গেল। সেটা দেখে কেউ কেউ বলছেন, প্রচারের জন্য প্রসেনজিৎ মরিয়া। আপনি কী বলবেন?
প্রসেনজিৎ: অফকোর্স! পৃথিবীর প্রত্যেক অভিনেতা নিজের ছবির প্রচারের জন্য নতুন কিছু করছেন। আমিও তার মধ্যেই পড়ি। অবশ্যই প্রচারের জন্য করেছি। না হলে আর কেন রাস্তায় ‘নির্মল’ হয়ে নামব! এবারে আমি দর্শকের কাছে ‘নির্মল’ হয়ে উঠতে পারি কি না দেখার। যেন মানুষ, ব্র্যান্ড প্রসেনজিৎকে ছাপিয়ে ‘নির্মল’-কে ভালবাসে, সেই কারণেই এটা করেছি। আর আমার বাড়িতে কিন্তু ফুচকাওয়ালা আসে। আমার ছেলে আর স্ত্রীর জন্য। তখন কিন্তু আমি নিজেও ফুচকা খাই। হয়তো আলুটা বাদ দিয়ে, কিন্তু খাই (হাসি)।