দীপঙ্কর মণ্ডল: হরিয়ানা থেকে উঠে এসে রিও প্যারালিম্পিক্সে (Rio Paralympics) প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে পদক জয়। হুইলচেয়ারে বসেও কী ভাবে জীবনযুদ্ধে জেতা যায়, তা দেখিয়েছেন তিনিই। তিনি দীপা মালিক (Deepa Malik)। সংবাদ প্রতিদিন-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই জীবনযুদ্ধের কাহিনিই শুনলেন দীপঙ্কর মণ্ডল।
প্রশ্ন: আপনি হাঁটতে পারেন না। সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না। কিন্তু হুইল চেয়ারে বসে বিশ্বমঞ্চে একের পর এক পদক। এখন দেশের প্যারা অলিম্পিক কমিটির সভাপতি। কঠিনতম সফরে এই সাফল্য কীভাবে আসছে?
দীপা : আমার শরীরের একটা অংশ কাজ করে না। ঘুমের মধ্যেও টিউমারের আতঙ্ক তাড়া করে। তবে সব সমস্যার সমাধান আছে। টেকনোলজি ব্যবহার করি। হাঁটতে পারি না তো কী হয়েছে? হুইল চেয়ার তো আছে। ক্রীড়াবিদ হিসাবে বায়ো মেকানিক ঠিক করেছি। মোটর সাইকেল চালানোর ট্রেনিং নিয়েছি। খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু ছাড়িনি। আমি আজও শিখে চলেছি। আর তাই জিতে চলেছি। এখন এই পঞ্চাশ বছর বয়সে প্রশাসন চালানো শিখছি।
ছোট বেলায় আপনার টিউমারের সমস্যা হয়। চিকিৎসায় তা ঠিক হল। ৩৬ বছর বয়সে আপনি যখন দুই সন্তানের মা শরীরে আবার টিউমার মাথাচাড়া দিল। পরপর তিনটি অস্ত্রোপচার। তারপর প্রাণে তো বাঁচলেন। কিন্তু শরীরের অর্ধেক অংশ অসাড় হয়ে গেল। এখন কী অবস্থা?
দীপা : চিকিৎসকরা বলেছেন এই অবস্থা চিরস্থায়ী। মেরুদ্ণ্ড কাটার দরকার ছিল। আজ পর্যন্ত চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন ঘুম ভাঙার পর আমি ভাবি বাহ্ আরও একটা দিন ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন। আমি এই দিনটাকে সবচেয়ে সুন্দর করে কাজে লাগাব। আমি জীবনের অর্থ জানি। আর তাই প্রতিদিন জীবনের জয়গান গাই। দিব্যাঙ্গদের ক্রীড়াব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নীতি প্রণয়নে আমার কিছুটা অবদান আছে। দিব্যাঙ্গরা যাতে সহজে গাড়ির লাইসেন্স পান তার জন্য কাজ করছি। দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে মোটিভশনাল বক্তব্য রাখি।
[আরও পড়ুন: ISL 2021: দুরন্ত ছন্দে থাকা এটিকে মোহনবাগানের সামনে মুম্বই সিটি, গতবারের ইতিহাস নিয়ে ভাবছেন না হাবাস]
আপনি ইংরিজি মাধ্যমে পড়েছেন। স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। আপনার পক্ষে লড়াইটা কি তুলনায় কিছুটা সোজা?
দীপা : খেলাধুলো তো দূর আমি হুইল চেয়ার কেনার জন্য পরিবার থেকে এক টাকাও নেইনি। হ্যাঁ আমি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েছি। কিন্তু জানেন, স্বনির্ভর হওয়ার জন্য একসময় রেস্তরাঁয় কাজ করেছি। নিজে ধাবা খুলেছি। দেশের প্রত্যেক মা-ভাই-বোনেদের বলতে চাই ইচ্ছাশক্তিটাই আসল। লক্ষ্যে পৌঁছনোর জেদ আর পরিশ্রম থাকলে সাফল্য আসবেই। এখন আমার সংস্থা দশ হাজার দিব্যাঙ্গের জন্য কাজ করে। যাঁরা হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন তাঁদের অনুরোধ করব আপনারা প্রত্যেকে অন্তত একজন প্রতিবন্ধীর পাশে থাকুন। তাঁর পড়াশোনার বা স্বাবলম্বী হওয়ার দায়িত্ব নিন। সমাজের চিন্তা বদলাতে হবে। তাহলেই দেশ আরও এগোবে।
সাধারণত তিরিশ বছরে লোকজন খেলাধুলো ছেড়ে দেয়। আর আপনি চল্লিশ বছর বয়সে কেরিয়ার শুরু করলেন। বিরলতম এই নজির নিয়ে কিছু বলুন।
দীপা :আমি চল্লিশ বছর বয়সে কেরিয়ার শুরু করেছি। সবাইকে একটাই কথা বলি, সবকিছু ভালবেসে শিখেছি। তাই আমি জিতেছি। সব সময় ভেবেছি, দেশের জন্য কিছু করতে হবে।