রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: টুকটাক–খুচখাচ একটা দু’টো নয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে প্রপাতের মতো সব ছিটকে আসছে। এক একটা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেন। প্রিয় টিমকে জ্বালিয়ে–পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে চায়! টিম, এটা টিম? KKR জার্সিতে কারা এরা? রিঙ্কু সিং, কে নিয়েছে ওকে? হেরেছে, বেশ হয়েছে। হারাই উচিত ছিল। অন্যের দয়া-দাক্ষিণ্যে এগোচ্ছিল এত দিন। নিজেদের ক্ষমতায় তিনটে ম্যাচের বেশি তো জেতে না। তারা আবার প্লে অফ কী যাবে?
কেকেআর নিলামে কারা বসে? ওদের চোখে পড়ে না ক্রিস গেইল? দেখতে পায় না একটা ঋদ্ধিমান সাহাকে? একটা গেইল থাকলে রাসেলের অভাব বোঝা যেত আজ? ঋদ্ধি থাকলে দীনেশ কার্তিককে (Dinesh Kartik) নামাতে হত? ব্রেন্ডন ম্যাকালাম-অভিষেক নায়াররা ডাগআউটে বসে যত সুন্দর করে নিত্য নোট নেন, তার অর্ধেক সময় যদি সমর্থকদের ভাবাবেগ ধরতে খরচ করতেন, রোষটা বহু দিন আগে বুঝে যাওয়ার কথা। ক্ষোভটা পুঞ্জীভূত হচ্ছিল দিন দিন, বৃহস্পতিবার মহেন্দ্র সিং ধোনির (MS Dhoni) ‘ড্যাডস আর্মির’ কাছে লজ্জাজনক হারের পর একেবারে লাভাস্রোতের মতো ধেয়ে আসতে শুরু করেছে। উপরে যা লেখা হল, সবই সোনালি বেগুনি সমর্থকদের হাহাকার। জ্বলুনি। রোষ। যন্ত্রণা। যা হিংস্র শ্বাপদের মতো ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে চাইছে প্রিয় টিমকে।
[আরও পড়ুন: প্রকাশিত হল আইএসএলের সূচি, কবে মাঠে নামছে ইস্টবেঙ্গল-এটিকে মোহনবাগান?]
আর ফেলবে না–ই বা কেন? দোষ কোথায়? যে বিদঘুটে সব প্লে–অফ অঙ্ক কেকেআরের (Kolkata Knight Riders) সামনে ওঁত পেতে অপেক্ষা করছে, দেখলে মাথা ঠিক রাখা সম্ভব নয়। নেট রান রেটের জটিল ক্যালকুলাস সরিয়ে কেকেআরকে প্লে অফ যেতে হলে রবিবাসরীয় রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ জিততে তো হবেই। সঙ্গে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে শুক্রবারের মতো নিজেদের শেষ ম্যাচটাও হারতে হবে। আবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং রাজস্থানকেও নিজেদের শেষ দু’টো ম্যাচের একটা করে হারতে হবে। আর নেট রান রেটে প্লে–অফ নিষ্পত্তি হলে আর দেখতে হবে না। রাজস্থান বাদে বাকি প্লে–অফ প্রতিদ্বন্দ্বীরা সব কয়েক মাইল এগিয়ে।
মুশকিল হল, প্রিয় টিমের এ হেন দুর্দশার কারণ জানার অধিকারই আবার আম নাইট সমর্থকের নেই। জিজ্ঞাসা করবেন কাকে? প্রশ্ন করবেন কোথায়? মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ তারা করে নমো নমো করে, নিজেদের খেয়ালমতো। আপনি জানবেন কী করে আন্দ্রে রাসেলের (Andre Russell) অবস্থাটা কী? জানবেন কী করে, কোন যুক্তিতে ইয়ন মর্গ্যানের আগে কখনও যাচ্ছেন দীনেশ কার্তিক, কখনও যাচ্ছেন রিঙ্কু সিং?
[আরও পড়ুন: আইসিসি চেয়ারম্যান নির্বাচনে কাকে সমর্থন করবে ভারত? ইঙ্গিত মিলল বোর্ড সূত্রে]
আইপিএলের জন্মলগ্ন থেকে কেকেআরের সঙ্গে জড়িত একজন এ দিন দুঃখ করে বলছিলেন, পুরো টিমের সংস্কৃতি শেষ করে দিলেন একজন– টিম CEO বেঙ্কি মাইসোর। রুষ্ট ভাবে বলা হল, কোন ফ্র্যাঞ্চাইজির সিইও টিমের স্ট্র্যাটেজিতে নাক গলাতে যান? কোন সিইও টিম নিয়ে মিটিং করেন? আইপিএলের ক’টা টিমের সিইও-র নাম নিত্য মিডিয়ায় বেরোয়? কোথাও হয় না। শুধু কেকেআরে হয়!
এঁরা উত্তেজিত ভাবে বলছেন, দোষটা সমর্থকদের। টিমের কাছে তাঁরা আশা করেন। মুশকিল হল, যে টিমে সর্বনিয়ত ‘স্বজনপোষণ’-এর জয়গান চলে, যে টিমে ভিডিও অ্যানালিস্ট হয়ে যান মুখ্য ‘স্কাউট’– সেই টিমে তো রিঙ্কু সিং–নীতিন নায়েকরাই খেলবেন, থাকবেন। আর দেবদূত পাড়িক্কলরা যাবেন আরসিবিতে। মহম্মদ শামি খেলবেন পাঞ্জাবে। কমলেশ নাগরকোটিদের দু’বছর ধরে রাখবে টিম। শামিকে ভাববে না। সূর্যকুমার যাদবের মতো ‘রত্ন’কে পেয়েও ছেড়ে দেবে অনায়াসে। আর ম্যাকালামকে কোচ করে এনে যে এত ঢাকঢোল বাজানো হল, তিনি তো আদতে ছিলেন সহকারি কোচ। ট্রেভর বেলিসের সঙ্গে আর্থিক রফা না হওয়ায় ম্যাকালামকে বাধ্য হয়ে কোচ করতে হয়েছে। ঝড়তি–পড়তি ক্রিকেটার আর সেকেন্ড চয়েস কোচ নিয়ে কোন টিম আজ পর্যন্ত জিতেছে?
দাঁড়ান, উত্তপ্ত অভিযোগ আরও আছে। বলা হচ্ছে, কোচ ম্যাকালাম থেকে সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার– এঁরা সবাই নাকি কেকেআর সিইও-র ‘অঙ্গুলিহেলনে’ চলেন। কেকেআরে কোনও শ্যুট থাকলে বিশেষ এক সাপোর্ট স্টাফের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত নাকি আড়াই লক্ষ টাকা জমা পরে! কারণ সেই সাপোর্ট স্টাফের স্ত্রী স্টাইলিস্ট! এটাও বলা হল, হাতের কাছে বিশ্বজয়ী অধিনায়ক থাকলেও বোধহয় কেকেআরই পারে তাকে ক্যাপ্টেন না করে চূড়ান্ত ব্যর্থ কার্তিককে অধিনায়ক রেখে দিতে!
[আরও পড়ুন: বিস্তর নাটকের পর অবশেষে ‘করোনামুক্ত’ রোনাল্ডো, বিবৃতি দিয়ে জানাল জুভেন্তাস]
ঠিকই। কেকেআর তো মর্গ্যানকে অধিনায়ক করেছে আইপিএলের মাঝপথ পেরনোর পর। এটাও ঠিক যে, ছত্রিশ রকমের ওপেনিং আর বাহাত্তর রকমের বোলিং কম্বিনেশন– হালফিল কেকেআরেই দেখা যাচ্ছে। গম্ভীরের কেকেআরে কখনও ঘটেনি। আর আন্দ্রে রাসেল নিয়ে যা চলছে, কহতব্য নয়। সানরাইজার্স ম্যাচের পর আর নামেননি রাসেল। চোট পেয়েছিলেন। তা, সেই চোটের আপডেট দিয়ে গতকাল টিম মেন্টর ডেভিড হাসি বললেন, রাসেল প্রায় ফিট। ও দিকে রাসেল চোটের কারণে লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ খেলবেন না বলে দিয়েছেন! তা হলে কোনটা ঠিক? আর ‘প্রায় ফিট’ হলে নামানো হল না কেন? পঁচাত্তর শতাংশ ফিট রাসেল নিশ্চয়ই নখদন্তহীন নারিনের চেয়ে অনেক ভাল? কিন্তু প্রিয় কেকেআর সমর্থক, উত্তর আপনি পাবেন কোথায়? উত্তর আপনাকে দিচ্ছে কে!
পুনশ্চ: সিএসকে ম্যাচ হারার পর নাইট মেন্টর ডেভিড হাসি বলেছেন, “আমাদের সব আশা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। এখনও নিঃশ্বাস পড়ছে।” আচ্ছা, ভেন্টিলেটরেও মূমূর্ষ রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস পড়ে না?